সরকারের দেয়া ত্রাণ নিয়ে চলছে তুঘলকিকাণ্ড। বিশেষ করে টিআর, কাবিখা ও জিআরের বিশেষ বরাদ্দ, ব্রিজ, কালভার্ট, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের বরাদ্দ নিয়ে চলছে হরিলুট। আর এ হরিলুটের সুযোগ করে দিচ্ছে খোদ মন্ত্রণালয়ের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, দালালদের মাধ্যমে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে দেয়া হচ্ছে বরাদ্দ।
বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা। তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবকে দায়ীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ ও ত্রাণ বরাদ্দে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন।
বৈঠকে জানানো হয়, দালালরা বিভিন্ন এলাকা থেকে মন্ত্রী, এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্যাড সংগ্রহ করে ডিও লেটারসংবলিত বিভিন্ন ভুইফোঁড় প্রতিষ্ঠানের আবেদনপত্র তৈরি করে বরাদ্দ ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে একদিকে বানভাসি ও বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় লোকজন বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে দালাল ও মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তারা বনে যাচ্ছেন টাকার কুমির।
কমিটি সূত্র জানায়, ত্রাণের টাকা লুটপাটের বিষয় নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দে স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদও দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির এক সদস্য বলেন, এমপি-মন্ত্রীদের নাম ভাঙিয়ে দালালচত্র ভুয়া প্রতিষ্ঠানের প্যাড ব্যবহার করে বরাদ্দ হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে জনপ্রতিনিধিদেরই বদনাম হচ্ছে। মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি সিরিয়াসলি নেয়া উচিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টিআর-কাবিখার বিশেষ বরাদ্দকে কেন্দ্র করে একটি দালাল চক্রই গড়ে উঠেছে। আর এ দালাল চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার ইয়াহিয়া। চক্রটির ১০-১২ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন মনির হোসেন, ইমরান, রুহুল অমিন, সাহেব আলী, পরিমল, আবু জাফর প্রমুখ। তাদের প্রত্যেককে এলাকা ভাগ করে দেয়া হয়েছে। বৈঠকে জানানো হয়, দালালরা বিভিন্ন এলাকা থেকে মন্ত্রী, এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্যাড সংগ্রহ করে তাতে প্রকল্পের নামে বরাদ্দ চেয়ে ডিও লেটারসংবলিত বিভিন্ন ভুইফোঁড় প্রতিষ্ঠানের আবেদনপত্র তৈরি করে। তারপর আবেদনপত্র পৌঁছে দেয়া হয় মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের কাছে। মন্ত্রীর মাধ্যমে অনুমোদন নিয়ে বরাদ্দের আদেশ বের করে নিয়ে আসতে এ সিন্ডিকেট বিশেষ ভূমিকা রাখে। তারপর আদেশ পৌঁছে দেন দালাল চক্রের কাছে। তারা বরাদ্দের বিপরীতে অর্থ সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রভাবশালী দফতরের স্টাফ সুশান্ত কুমার ভৌমিক আকাশের কাছে জমা দেন। সেখান থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ওই অর্থ ভাগ হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার রায়েরকান্দি গ্রামের মুদি দোকানদার ছিলেন এই আকাশ। তার উত্থান রূপকথাকেও হার মানায়। দালালি করে মাত্র দুই বছরেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান তিনি। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাধারণ বরাদ্দের পাশাপাশি তিনি কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি ও টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পে চাল-গমের বিশেষ বরাদ্দ পাইয়ে দেয়ার কাজ করেন। প্রতি টন বরাদ্দের জন্য তাকে দিতে হয় ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা কমিশন। আর একটি ব্রিজ বরাদ্দের বিপরীতে দুই থেকে চার লাখ টাকা, কালভার্টে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এবং জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা (ডিআরও) পদে বদলি বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে এসব দালালদের বিরুদ্ধে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.