লাল এবং সাদা রংয়ের সুদৃশ্য ওয়াটার ট্যাক্সি। সামনে বাংলাদেশের পতাকা টানিয়ে ছুটে চলছে হাতিরঝিলের স্বচ্ছ পানির বুক চিরে। মানুষও চড়ছেন বেশ আনন্দ নিয়ে। সন্তানের আবদার রক্ষায় এসেছেন বাবা-মা। বন্ধুদের নিয়ে শিক্ষার্থী। সবার উদ্দেশ্য হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সি ভ্রমণ। প্রতিদিনই নগর জীবনের শত ব্যস্ততার মধ্যেও একটু দম ফেলার জন্য ছুটে আসছেন এসব দর্শনার্থী। চড়ছেন ওয়াটার ট্যাক্সিতে। কেউবা আবার যানজটের হাত থেকে মুক্তি পেতেও ওয়াটার ট্যাক্সি করে যাচ্ছেন গন্তব্যে। গতকাল হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সির এফডিসি এলাকার কাউন্টারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। কাউন্টারের সামনে লেখা রয়েছে প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর ট্যাক্সি ছাড়া হয়। তবে বাস্তব অবস্থা একটু ভিন্ন। সকালের দিকে অফিসমুখী মানুষের কিছুটা ভিড় থাকলেও দুপুরের আগে থাকে অনেকটাই ফ্রি। প্রতি ট্যাক্সিতে ৩০ জন যাত্রী হলেই কেবল ছাড়া হয় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। এই যাত্রী পূরণ হতে লেগে যায় প্রায় ২০/৩০ মিনিট সময়। যথা সময়ে ট্যাক্সি ছাড়তে কালক্ষেপণ করলেও যাত্রীদের নেই তেমন অভিযোগ। তবে অনেকেই বলছেন সময়মতো ট্যাক্সি ছাড়লে যাত্রী এমনিতেই আসবে। তবে দুপুর পেরিয়ে বিকাল আসতেই যাত্রীর চাপে দিশাহারা হয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। বিকালে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ট্যাক্সিতে চড়েন দর্শনার্থীরা। এই চিত্র থাকে এক টানা রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। খোঁজ নিয়ে জানা যায় সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সি নামিয়েছে করিম গ্রুপ। প্রাথমিকভাবে মাত্র ৪টি ট্যাক্সি দিয়ে শুরু হয়েছে সেবা। এই ৪টি ট্যাক্সিই প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর গন্তব্য ছেড়ে যাচ্ছে তিনটি টার্মিনাল থেকে। এফডিসি/কাওরানবাজার মোড় থেকে গুলশান-বাড্ডা লিকং রোড হয়ে গোদারা ঘাট যেতে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। এবং এফডিসি/কাওরানবাজার মোড় থেকে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন শিফটে ভাগ করে বিরতিহীনভাবে সেবা দিচ্ছেন ওয়াটার ট্যাক্সির কর্মচারীরা। করিম গ্রুপের প্রজেক্ট সুপারভাইজার (অব.) সার্জেন্ট মো. আশরাফ আলী মোল্লা জানান, ৪টা বোট দিয়ে যাত্রীর চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে না। যাত্রীরা সবাই বোট বাড়ানোর কথা বলছেন। আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ আরও ৬টি বোট নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা পাস হয়েছে। এখন শুধু বডি ও ইঞ্জিন আসতে দেরি। তিনি বলেন, সকালে অফিসে যাওয়ার যাত্রীর চাপ থাকে। দুপুরের দিকে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম থাকে। তবে বিকাল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যাত্রীরা বোটে চড়ে। টার্মিনাল থেকে গুনে গুনে মাত্র ৩০ জনকে বোটে উঠানো হয়। সিট ছাড়া কোন যাত্রী উঠানো হয় না। অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার ক্ষতি এড়াতে বোটে পর্যাপ্ত পরিমাণ লাইফ জ্যাকেট রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হাতির ঝিলের পানি নিয়মিত স্টাবিলাইজেশন ও ক্লোরিফিকেশন করা হয়। যেন পানি ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত না হয়। পানি স্বচ্ছ না থাকলে মানুষ ট্যাক্সিতে চড়তে চাইবে না। এমনকি ঝিলের পরিবেশও নষ্ট হবে তাই নিয়মিত ঝিলের পানি পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কাজ করা হয়। হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সি কর্তৃপক্ষ ও টার্মিনালের অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন রাজধানীর উৎসুক মানুষ ছুটে আসছেন একটু বিনোদনের জন্য। হাসনাইন নামের এক যুবক বলেন, হাতিরঝিলে বেড়াতে এসেছিলাম বন্ধুকে নিয়ে। পরে তার আবদার রক্ষার জন্য ট্যাক্সিতে উঠে গুদারাঘাট পর্যন্ত গিয়েছিলাম। পুরো যাত্রাটাই উপভোগ করার মতো। ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীদের ১০/১২ জনের একটি দল মেরুল বাড্ডা থেকে এফডিসি টার্মিনালে এসে নামেন। তাদের একজন মো. মাসুদুর রহমান বলেন, অনেকদিন ধরে আমাদের পরিকল্পনা ছিল হাতিরঝিলে আসার। সবাই একসঙ্গে আসা হয়ে ওঠে না। এরই মধ্যে ১৬ই ডিসেম্বর ওয়াটার ট্যাক্সি নামানোর খবর দেখেছি। পরে সবাই মিলে আজ (গতকাল) আসলাম ঘুরতে। এক সঙ্গে সবাই ট্যাক্সিতে চড়তে পেরে ভালোই লেগেছে। এই দলেই একজন ইডেন কলেজের মাস্টার্সের ছাত্রী মারিয়া আক্তার বলেন, ঢাকার ভেতরে গ্রামের পরিবেশ তাই এখানে এসেছি ঘুরতে। ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়তে খুব ভালো লেগেছে। আমরা গ্রামের নদীতে এমন নৌকায় চড়েছি। কিন্তু ঢাকায় নৌকা পাওয়া খুবই দুষ্কর। হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সিটাও অন্যরকম এক আনন্দের উপকরণ। মেরুল বাড্ডা থেকে বোনের শাশুড়ি ও ভাইয়ের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন সুজিৎ ঘোষ। তিনি বলেন, দুপুরের দিকে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করে ট্যাক্সি কর্তৃপক্ষ। প্রায় ২৫ মিনিট হলো টিকিট কেটে অপেক্ষা করছি। এখনও ট্যাক্সি আসেনি। মাহদী নামের এক যাত্রী বলেন, যমুনা ফিউচার পার্কে চাকরি করি। মগবাজার থেকে বাসে যেতে যানজটে অনেক দেরি হবে বলে ওয়াটার ট্যাক্সিতে করে যাওয়ার জন্য এসেছি। এফডিসি থেকে গুদারাঘাট নেমে ওখান থেকে লিংক রোড গিয়ে গাড়িতে করে যমুনা ফিউচার পার্কে যাব। তবে টিকিট কেটে ১৫ মিনিট এখানে বসে আছি। এখনও ট্যাক্সি ছাড়ছে না। ৩০ জন যাত্রী হয়ে গেলে ছাড়বে। তিনি বলেন, সময়মতো ট্যাক্সি ছাড়া নিশ্চিত করতে পারলে সময়মতো যাত্রীও আসবে। অনেকেই কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে টিকিট কাটতে কালবিলম্ব করছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.