কেউ বানাচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কেউ জেট বিমানের ইঞ্জিন, কেউবা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ। ড্রোন বানিয়ে ওড়ানোর অপেক্ষায় কেউ, প্রয়োজন কেবল ব্যাটারি। এক এসির রিমোট দিয়ে ঘরের লাইট, ফ্যান, টিভি চালু বা বন্ধ করার উপায়ও উদ্ভাববন করেছে কেউ কেউ। দুর্গম জায়গায় উদ্ধার কাজ চালাতে বানানো হয়েছে রোবট। এসব চমকপ্রদ উদ্ভাবন দেখা গেল ‘স্পেস অ্যাপস নেক্সট জেন’ প্রতিযোগিতা দেখতে গিয়ে। প্রতিযোগিতায় লড়ছে সারাদেশ থেকে আসা ৩৫টি দল। তাদের স্বপ্ন এই ৩৫ প্রকল্প দেশকে বদলে দেবে। ৩৬ ঘণ্টার এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে শুক্রবার। শনিবার পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তা। ক্ষুদে বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিপ্রেমীদের এসব উদ্ভাববন দেখতে এসেছিলেন সরকারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি এসব ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনে মুগ্ধ হয়ে বিজয়ী লাখ টাকা মূল্যের অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেন এবং এসব উদ্ভাবন বাস্তবায়নের জন্য তার মন্ত্রণালয় সব সময় উদ্ভাবকদের পাশে থাকবে বলেন ঘোষণা দেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পলক বলেন, সরকার দেশের উদ্ভাবকদের নিয়ে নতুন মাত্রায় চিন্তা করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি। শুধু বিজয়ীরাই নয়, সব উদ্ভাবকের পাশে সমানভাবে আইসিটি থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি বলেন, স্পেস অ্যাপস নেক্সট জেন প্রতিযোগিতা এখন থেকে প্রতি বছর আরও বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ঘোষণা দেন, স্পেস অ্যাপস নেক্সট জেন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী প্রথম থেকে চতুর্থস্থান অধিকারী প্রতিটি দলকে ৫ লাখ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়া অংশ গ্রহণকারী প্রতিটি দলের উদ্ভাবন তিনি আইসিটি বিভাগের ইনোভেশন প্রকল্পে জমা দেওয়ার আহ্বান জানান।
২০৩৩ সালে মঙ্গল গ্রহে যে মহাকাশচারীরা যাবে তাদের মধ্যে অন্তত একজন বাংলাদেশ থেকে থাকবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জারা নামের এক শিক্ষার্থী প্রতিমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর দিলে তিনি জারার মাধ্যমে এই স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করেন।
পরে প্রতিমন্ত্রী হ্যাকাথন প্রাঙ্গণ ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করেন।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের যৌথ উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে স্পেস অ্যাপস নেক্সট জেন। রাজধানীর ধানমণ্ডির ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে এই হ্যাকাথন শুরু হয় শুক্রবার। ৩৬ ঘণ্টার হ্যাকাথন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শেষ হবে শনিবার। বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মত আয়োজন করা হলেও এর আগে বিশ্বের ৫টি দেশ আন্তর্জাতিক এই হ্যাকাথনের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সবুর খান, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হারুনুর রশিদ, বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল হাসান অপু, স্পেস অ্যাপস নেক্সট জেনের প্রধান মেন্টর ড. তৌহিদ ভূঁইয়া, পিবাজার ডট কমের প্রধান নির্বাহী মোঃ শাহীন, মেন্টর শামসুল হক।
মো. সবুর খান বলেন, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমরা এখন উদ্ভাসিত। বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের এমন উদ্যোগ আমাদের শিক্ষার্থীদের আরও অনুপ্রাণিত করবে। প্রযুক্তির বিকাশে যেকোনও সহায়তায় পাশে থাকবেন বলে সবাইকে তিনি আশ্বস্ত করেন। হারুনুর রশিদ বলেন, এমন উদ্যোগে সরকার সবসময় পাশে ছিলো, থাকবে।
আরিফুল হাসান অপু বলেন, আধুনিকতার এই যুগে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বিকাশ এখন সমগ্র পৃথিবী জুড়ে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম বিশ্ব জুড়ে তাদের কর্মদক্ষতার প্রমাণ অনেকবার রেখেছে। বাংলাদেশের তরুণদের বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে আরও আগ্রহী করে তোলার জন্য বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম কাজ করে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সারাদেশ থেকে ৮৫টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০০টির অধিক প্রজেক্ট থেকে ১০০টি প্রজেক্ট নিয়ে বুট ক্যাম্প সম্পন্ন হয়। ফাইনাল ব্যুট ক্যাম্পে আগত শিক্ষার্থীরা তাদের আইডিয়া এবং প্রজেক্ট নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অভিজ্ঞ মেন্টরদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। অভিজ্ঞ মেন্টরদের সঙ্গে তাদের প্রজেক্ট এবং আইডিয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা এবং এর সমাধানের বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করেন। চূড়ান্ত পর্বে ৩৫ দল অংশ নেয়। এরমধ্যে উত্তরা হাই স্কুল ও কলেজ থেকে অংশ নেয় ১০টি দল।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.