জঙ্গি সন্দেহে দুই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো: মো. আমিনুল ইসলাম (৩৪), নাহিদ সুলতানা (৩০), মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে তাপস (১৮) ও মারজিয়া আক্তার ওরফে সুমি (১৯)। র্যাব জানায়, তারা নব্য জেএমবি’র সদস্য। নাহিদ সুলতানা এবং সুমি দুইজন মিলে তাদের স্বামীকে জঙ্গিবাদে উৎসাহিত করেছে। তারা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাকিস্তান যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। তাদের কাছ থেকে জিহাদি বই, লিফলেট, সিডি ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। গতকাল সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে র্যাব-২ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, মঙ্গলবার গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তেজগাঁও থানাধীন ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের বিপরীতে একটি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায় র্যাব। এসময় শরিফুল এবং সুমিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের তথ্য মতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা থেকে আমিনুল এবং নাহিদ সুলতানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১৫ই আগস্ট জেএমবি’র নতুন ধারার নারী দলের নেত্রী আকলিমা রহমান মনিসহ মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবি মহিলা শাখার সংগঠনের বেশ কিছু তথ্য র্যাবের হাতে আসে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ নজরদারির প্রেক্ষিতে ওই দুই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরো বলেন, সুমি বেশ কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে জেএমবি’র সঙ্গে সংযুক্ত হয়। পরবর্তীতে জেএমবি’র থ্রিমা গ্রুপের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এই গ্রুপটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। মূল কার্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী অফিসিয়াল গ্রুপের হিযরত শাখাটি “তালিফ” (নিক নেইম) নামে পরিচালনা করা হয়। এই অফিসিয়াল গ্রুপটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোক দ্বারা পরিচালিত হয়। এই গ্রুপটির কাজ হলো, বাছাইকৃত সদস্যদের বাংলাদেশের ভেতরে এক একটি করে অভিযানের দায়িত্ব দেয়া এবং অভিযান সফল হলে তাদেরকে বিদেশে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এদেরই আরেকটি গ্রুপ হচ্ছে মোটিভেশন গ্রুপ। এই গ্রুপ থেকেই আফিফ, কাইফ, জাইশান ও মফিজ নামে আরো অনেকে সুমির সঙ্গে জিহাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন কথা বলতো এবং তাকে যুদ্ধের বিভিন্ন দৃশ্য যেমন-আহত ছোট বাচ্চাদের ছবি, মেয়েদের ছবি, অসহায় মানুষের ছবি, যুদ্ধের বিভিন্ন ভিডিও এবং খিলাফত সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য পাঠাতো এবং জিহাদে যাওয়ার জন্য তাকে উদ্বুদ্ধ করতো। তিনি আরো বলেন, শরিফুল জেএমবি’র একজন সক্রিয় সদস্য। সে হিযরতের সদস্যদের সংগ্রহ করতো। তারপর এই জঙ্গি সদস্যদের হিযরতের জন্য আগ্রহী সদস্যদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ডে সহায়তাসহ হিযরতে গমনের জন্য সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতো। বর্তমানে দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়াতে দেশ ত্যাগের নির্দেশনা সে পায় বলে জানায়। এছাড়াও আমিনুল এবং নাহিদা সুলতানা জেএমবি’র সক্রিয় সদস্য। আমিনুল সরাসরি সংগঠনের উপরের সারির নেতাদের নির্দেশ অনুসারে বিভিন্ন অপারেশনাল কর্মকাণ্ডের জন্য লোক সংগ্রহ এবং মোটিভেট করে থাকে। ব্যক্তি জীবনে সে বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। কিন্তু, শুধু জঙ্গি গ্রুপে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে সে তাদেরই জঙ্গি দলের অনুসারী একটি মেয়েকে (নাহিদা) সংগঠনের সিদ্ধান্তে বিবাহ করে হিযরতের উদ্দেশে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা করে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, নাহিদ সুলতানা ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং পরবর্তীতে সে প্রশিক্ষণের জন্য দাওলাতুল ইসলামের অ্যাপস ব্যবহার করতো। সে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তুলারাম কলেজ থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। সে নিজে মাস্টার্স পাস করা সত্ত্বেও শুধু আদর্শিক কারণে ও জঙ্গি মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং উক্ত দলে যুক্ত হওয়ায় সংগঠনের সিদ্ধান্তে একজন বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনককে বিবাহ করে। তাদের বিবাহের সাক্ষী হিসেবে মাদারীপুরে হিন্দু শিক্ষক হত্যাচেষ্টার প্রধান আসামি ফাইজুল্লাহ ফাহিম দুই নম্বর সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিল বলে জানা যায়। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানায় যে, সংগঠন পরিচালনার জন্য সিংহভাগ অর্থ আসতো বিদেশ থেকে এবং বাকি যৎসামান্য অর্থ ইয়ানতের মাধ্যমে সংগ্রহ করতো। তারা কোন্ দেশে যেতো সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা পাকিস্তানে যেতো বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে গিয়ে তারা জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতো। গ্রেপ্তারকৃত শরিফুল ইসলাম ওরফে তাপসের বাবার নাম শহিদুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার বাঘবাড়ি এলাকায়। সুমির বাবার নাম মনসুর আলী শেখ। গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার সুজানগর থানা এলাকায়। মো. আমিনুল ইসলামের বাবার নাম আব্দুল হক। গ্রামের বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানার নিশ্চিন্তপুর এলাকায়। নাহিদ সুলতানার বাবার নাম পিয়ার আলী। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার স্টেশন এলাকায়। ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.