সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালে পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতার শটগানের গুলিতে আহত সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল মারা গেছেন। শুক্রবার সকালে বগুড়া থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে দুপুর দেড়টার দিকে তিনি মারা যান। নিহত শিমুল সমকাল পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নিহতের বাড়ি শাহজাদপুর পৌর শহরের মাতলা গ্রামে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে গেছেন। এদিকে, ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদকে মারপিটের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে উপজেলা ছাত্রলীগ আজ (শনিবার) শাহজাদপুরে অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে। এ ঘটনায় মেয়র ও তার ২ ভাইসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়রের ২ ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. সুশান্ত কুমার জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গুলিবিদ্ধ সাংবাদিকের মাথার ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়ে ব্রেনে আঘাত লেগেছিল। অচেতন অবস্থায় আইসিইউতে রাখার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার সকালে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। এদিকে, বিকালে সাংবাদিকের মৃতদেহ শাহজাদপুরে পৌঁছলে নিহতদের স্বজন ও স্থানীয় সাংবাদিকরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাৎক্ষণিক তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করেন। পরে পুলিশ নিহতের লাশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাংবাদিক নিহতের ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। এর আগে একই দিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা বিজয়কে মারপিট ও মেয়রের শটগানের গুলিতে সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে উপজেলা ছাত্রলীগ। কর্মসূচিতে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রফেসর আজাদ রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম শাহু ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ কাজলসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ কর্মসূচি থেকে ছাত্রলীগ শনিবার উপজেলায় অর্ধদিবস হরতাল পালনের ঘোষণা দেয়। শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল হক জানান, শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারপিটের ঘটনায় তার চাচা এরশাদ আলী বাদী হয়ে শুক্রবার সকালে থানায় মামলা করেছেন। মামলায় শাহজাদপুর পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মিরু, তার ছোট ভাই হাসিবুল ইসলাম পিন্টু ও মিন্টুসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ ও ৫-৭ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মেয়রের ছোট ভাই হাসিবুল ইসলাম পিন্টু ও মিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং মেয়রের শটগানটি জব্দ করা হয়েছে। মারপিটের কারণে বিজয়ের দুই পা ও ডান হাত ভেঙে গেছে। তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ হামলা ও মারপিটের ঘটনার পর থেকে পুরো শাহজাদপুর উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও মোতায়েন রয়েছে। প্রসঙ্গত, শাহজাদপুরের দিলরুবা বাস টার্মিনাল থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত রাস্তার টেন্ডার পাওয়ার পর অনেকদিন কেটে গেলেও ঠিকাদার কাজ শুরু করেনি। বিষয়টি নিয়ে বেশ সক্রিয় হওয়ায় ঠিকাদার পক্ষের লোকজন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি বিজয় মাহমুদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার দুপুরে কালিবাড়ি এলাকায় পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর ছোট ভাই হাসিবুল ইসলাম পিন্টু পৌর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ভিপি রহিমের শ্যালক ছাত্রনেতা বিজয়কে বেধড়ক মারপিট করে তার হাত-পা ভেঙে দেয়। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দলের কর্মী-সমর্থক ও তার মহল্লা কান্দাপাড়ার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। এ অবস্থায় অবরোধকারীদের একটি অংশ ক্ষিপ্ত হয়ে মনিরামপুর এলাকায় পৌর মেয়রের বাড়ি ঘিরে ফেলে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পৌর মেয়র তার শটগান দিয়ে গুলি করে। এতে স্থানীয় সাংবাদিক শিমুলের মাথা ও মুখে গুলি লাগে। দু’পাশ থেকেই গুলি করা হয়েছে বলে মেয়র দাবি করলেও প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় শুধু মেয়রের শটগান থেকেই গুলি ছোড়া হয়েছিল। সংবাদ পেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ ইরতিজা আহসান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর আলম খান বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নাতির শোকে নানীর মৃত্যু নাতির সাংবাদিক শিমুলের মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন নানী রোকেয়া (৯০)। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.