বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব নিল গোরশাচকে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিদের মধ্যে রক্ষণশীল রিপাবলিকানপন্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরিয়ে আনার মোক্ষম সুযোগকে দ্রুত কাজে লাগালেন তিনি। রিপাবলিকান নেতারা কিছুদিন ধরেই এটা করার কথা বলে আসছিলেন। কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি নিল গোরশাচের মনোনয়নের বিরোধিতা করে বলেছেন, বিচারপতি হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হলে তা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ফল বয়ে আনবে না। তিনি এই বিচারপতিকে নারী অধিকারের প্রতি বৈরী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট সদস্য এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যক্তিকে এ পদে বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল ট্রাম্পের। তা না করে তিনি এমন একজনকেই বাছলেন, যিনি কিনা শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির বিরোধী, অন্যায়ভাবে কর্মী ছাঁটাইকারী বা গোপন তথ্য ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া নিয়োগকর্তাদের সমর্থক। স্বভাবতই গোরশাচকে মনোনয়ন দিয়ে ট্রাম্পের নেওয়া সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে রিপাবলিকান শিবির। যেমন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, তিনি (গোরশাচ) আকর্ষণীয় অতীতের অধিকারী মানুষ। সংবিধান ও আইন বিশ্বস্ততার সঙ্গে প্রয়োগের দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে তাঁর। গত মঙ্গলবার রাতে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প কলোরাডোর ডেনভার শহরের ৪৯ বছর বয়সী গোরশাচকে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে বেছে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এ মনোনয়নকে সিনেট অনুমোদন দিলে তিনি বিচারপতি আন্তোনিন স্কালিয়ার স্থলাভিষিক্ত হবেন। বছরখানেক আগে স্কালিয়া মারা গেলে তাঁর পদটি শূন্য হয়। গোরশাচের মনোনয়ন নিশ্চিত হলে সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীল রিপাবলিকান ভাবধারার বিচারপতির সংখ্যা হবে পাঁচ। বিপরীতে ডেমোক্র্যাট ভাবধারার বিচারপতির সংখ্যা নেমে আসবে চারে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, গোরশাচের নিয়োগ ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক নিয়ন্ত্রণ ও নারী-পুরুষের অধিকার থেকে শুরু করে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলোতে বড় রকমের প্রভাব ফেলতে পারে। গোরশাচের মনোনয়নকে রক্ষণশীল খ্রিষ্টান ও রিপাবলিকান সমর্থকদের প্রতি ট্রাম্পের এক প্রতিদান হিসেবে ধরা হচ্ছে। ট্রাম্পেরও তা-ই খোলামেলা স্বীকারোক্তি, ‘লাখ লাখ ভোটার বলেছেন, এটা তাঁদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একক ইস্যু, যে জন্য তাঁরা আমাকে ভোট দিয়েছেন।’ ট্রাম্প বলেন, ‘আমি কথা রাখার মানুষ। আমি যা বলি তা-ই করি। দীর্ঘ, দীর্ঘ সময় ধরে ওয়াশিংটন থেকে আমেরিকার জনগণ এটাই আমার কাছে চাচ্ছিলেন।’ কেন এ নিয়োগ এত গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন জনগণের জীবনযাপন ও যুক্তরাষ্ট্রের আইনসংক্রান্ত অতি স্পর্শকাতর বিষয়ের অনেকগুলোতেই চূড়ান্ত নিষ্পত্তিকারীর ভূমিকা পালন করে থাকেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। এর বিচারপতিরা আজীবন মেয়াদে নিয়োগ পান। তাই তাঁদের প্রভাবও হয় দীর্ঘমেয়াদি। বিচারপতিরা যেমন স্বাধীনতা উপভোগ করেন, তেমনি তাঁদের কেউ কেউ রাজনৈতিক ভাবধারায় প্রভাবিত অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের নজিরও রেখে গেছেন। নিয়োগ পেতে দরকার ডেমোক্র্যাটদের সমর্থনও কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই বর্তমানে সংখ্যালঘু ডেমোক্রেটিক পার্টি। উচ্চকক্ষ সিনেটে রিপাবলিকানদের আসন ৫২টি। সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারপতির নিয়োগ নিশ্চিত করতে দরকার ৬০ জনের সমর্থন। অর্থাৎ গোরশাচকে বিচারপতি হতে কয়েকজন হলেও ডেমোক্র্যাট সিনেটরের সমর্থন পেতে হবে। ট্রাম্প সম্প্রতি সাত মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে সাময়িকভাবে প্রবেশ নিষিদ্ধসহ অভিবাসন ও শরণার্থীবিরোধী যেসব বিতর্কিত নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে এ সমর্থন আদায় করাটা বেশ কঠিন হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সিনেটর টেড ক্রুজ গোরশাচকে যথোপযুক্ত ব্যক্তি আখ্যায়িত করে তাঁর মনোনয়ন বাধাগ্রস্ত করতে ডেমোক্র্যাটদের পদক্ষেপ ব্যর্থ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.