জলপরীরা কোথায় থাকে? জলে যে থাকে; এ ব্যাপারে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। হয়তো আস্তানা বানায় সুনীল সাগরের কোন নির্জন দ্বীপে। এমন দ্বীপে কে কে যেতে চান?
হিমছড়ি আর ইনানী সমুদ্র সৈকতের মাঝামাঝিতে রেযুখাল নদীর তীরে প্রকৃতির এক অপূর্ব লীলাভূমি জেলে পল্লী প্যাচার দ্বীপ। এখানে অবস্থিত মারমেইড ইকো রিসোর্টে রয়েছে থ্রি স্টার হোটেলের সুবিধা।
কক্সবাজারের কলাতলী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চেপে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে মারমেইড ইকো রিসোর্ট। রাস্তার ওপর থেকে তাকালে গাছপালার আড়ালে চোখে পড়ে ছোট-বড় অনেক কুটির। বড় রাস্তার ঢাল বেয়ে নিচে নামতেই কানে আসে কলরব। দুই পাশের জলাধারে ঝিকমিক করে ভরদুপুরের রোদ্দুর। গোটা তিরিশেক ভিলা আর বাংলোর নামেরও একই হাল। কিন্তু ঘরগুলো সত্যিই মন ভালো করে দেওয়ার মতো। বাইরে স্রেফ কুটিরের মতো দেখালেও ভেতরে মোটামুটি আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা মজুদ। স্নানঘরটায় ঢুকলে মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে যায়। প্লাস্টিকের বোতলে ভর্তি বাজারি শ্যাম্পুর বদলে কাচের পাত্রে ভেষজ উপায়ে বানানো শ্যাম্পু। সেটা আবার সবুজ গাছের পাতা দিয়ে কায়দা করে ঢাকা। দুই পাশে দুটো কাঠগোলাপ ফুল গুঁজে দেওয়া। সাবান, শ্যাম্পু রাখা হয়েছে নারকেলের লম্বা একটা খোলের মধ্যে।
মারমেইড ইকো রিসোর্টে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন সব জিনিসপত্র যথাসম্ভব কম ব্যবহার করা হয়েছে। পেঁচার দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ বহাল রেখেই সব বাংলো তৈরি করা হয়েছে। ইয়োগা সেন্টার, স্পা, নৌকা ভ্রমণ, সম্মেলন কক্ষ, প্রেক্ষাগৃহ সব কিছুরই এখন ব্যবস্থা আছে এই পরিবেশবান্ধব অবকাশ যাপন কেন্দ্রে। মারমেইড রিসোর্টের মূল নকশা করেছেন স্থপতি জিয়াউদ্দিন খান।
নাগরিক কোলাহল নেই। হাঁকডাক নেই। দুপুরের রোদ মরে এলে কুটিরের সামনের বাঁশের বেঞ্চে গা এলিয়ে দিয়ে বসতে ভারি আরাম। এ সময়টা নৌকা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার জন্যও অতি উত্তম। বাংলোর সারি আর নারকেল গাছ পেরিয়ে হেঁটে গেলে রেজু খালের পাড়। দেখবেন, নীলচে রং ধরতে শুরু করেছে সবে সাগরের শাখা রেজু খালের পানিতে। পাশ দিয়ে ভেসে যাবে বাহারি সাম্পান। দূরে আদিগন্ত বিছিয়ে থাকা সমুদ্র। নৌকা থামবে ওপারের কোনো এক অজানা চরে। বালুকাবেলায় পা রাখতেই হুটোপুটি করে ছুটে পালাবে লাল কাঁকড়ার দল। দখিনা বাতাসের দোলায় মাথা নেড়ে যেন অভিবাদন জানাবে ঝাউবন। তারপর ইচ্ছেমতো নির্জন সাগরতীরে ছুটোছুটি। কোন ফাঁকে বেলা পেরিয়ে যাবে! ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও ক্ষতি নেই।
যত তাড়াই থাকুক, বোট ক্লাবের পাটাতনে পেতে রাখা ঢাউস কেদারায় একবার বসে যেতে ভুলবেন না যেন। আকাশে পূর্ণচন্দ্র। সামনে সাগরের জল। আশ্চর্য মৌনতায় ডুবে আছে সমস্ত চরাচর। মন চাইলে গা এলিয়ে বসে থাকুন গভীর রাত অবধি। একদম কাকপক্ষীটিও জ্বালাতন করতে আসবে না আপনাকে।
যাওয়া ও থাকা খরচ
কক্সবাজারের কলাতলী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চেপে যেতে পারেন পেঁচার দ্বীপে। ভাড়া ২০০ টাকার মতো।
এ রিসোর্টে কটেজ আছে ৩০টি। এখানকার কটেজে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম রয়েছে। প্রথম ক্যাটাগরির কটেজের রুম ভাড়া ২ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা আর দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। থ্রি স্টার হোটেলের যাবতীয় সুবিধা আছে এ রিসোর্টটিতে। এখানে দুপুর ও রাতের খাবার সি ফুড, ইউরোপীয়, ক্যারিবীয় ও দেশি ডিশ পাবেন।