একটা প্রোগ্রামিং সমস্যার সমাধান হলো। সঙ্গে সঙ্গে দলটির কাছে একটি করে বেলুন পৌঁছে দিচ্ছেন প্রতিযোগিতার স্বেচ্ছাসেবকেরা। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মর্যাদাপূর্ণ আয়োজন এসিএম আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার (আইসিপিসি) ঢাকা পর্বের দৃশ্য ছিল এমনই। সমস্যার সমাধান দিতে হয়েছে অনলাইনে। সমাধান সঠিক হলে সংকেত পাওয়া যায়। আর সংকেত পেলেই মূলত বেলুন দিতে ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবকেরা। দলগুলোর সঙ্গে বেলুন দেখে বলে দেওয়া যায় কোন দল কয়টা সমস্যার সমাধান দিতে পারল। প্রতি দলে তিনজন করে প্রতিযোগী এবং একজন করে কোচ ছিলেন। সমাধান শেষে বেলুন পেয়েও হইহুল্লোড় ছিল না কারও। বরং তাড়া ছিল সমস্যা সমাধানের। শুধু সমাধান করলেই তো হবে না, সেটা হতে হবে অন্য দলের আগে। অন্যান্য দলের প্রতিযোগীরা প্রতিপক্ষ দলের এমন দৃশ্য দেখলে আরও মনোযোগ বাড়িয়ে দেন কি-বোর্ডে। এবারের প্রতিযোগিতায় সমস্যা ছিল ১১টি। সময় ছিল টানা পাঁচ ঘণ্টা। ১৯ নভেম্বর রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় ১০টি সমস্যা সমাধান করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দল ‘বুয়েট রায়ো’। বুয়েটের আরেক দল ‘বুয়েট ওমনিট্রিক্স’ প্রথম রানারআপ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘ডিইউ সেন্সরড’ দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে। দল দুটি যথাক্রমে নয়টি ও আটটি সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছে। আঞ্চলিক পর্বের আয়োজকেরা ধারণা করছেন, আগামী বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় আইসিপিসির চূড়ান্তপর্বে (ওয়ার্ল্ড ফাইনালস) বাংলাদেশ থেকে অন্তত তিনটি দল অংশ নিতে পারবে। ঢাকা পর্বের শীর্ষ তিনটি দলের কথা থাকছে এই প্রতিবেদনে। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই এসিএম-আইসিপিসির জন্য বুয়েটের ভালো দল গঠন করা চাই। তাই শিক্ষকদের পরামর্শে গঠিত হলো ‘বুয়েট রায়ো’ দল। সদস্য কারা হবেন, তা-ও ঠিক করলেন শিক্ষকেরা মিলে। এ দলে রয়েছেন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এম এম হারুন-উর-রশিদ এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল (সিএসই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তন্ময় মল্লিক ও নাজমুর রশীদ। হারুন-উর-রশিদ বলেন, ‘চূড়ান্তপর্বে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। এ জন্য আমাদের দলের এখন মূল ভাবনা ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া।’ ছোটদের সহায়তা করব বুয়েটের সিএসই বিভাগের রিয়াজুল ইসলাম, রিপন কুমার রায় ও কাজী হাসান জুবায়েরকে নিয়ে তৈরি হয়েছে বুয়েট ওমনিট্রিকস দল। নিজেদের ঝালাই করে নিতে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে প্রোগ্রামিংয়ের আরও চারটি আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় তারা। সফলতাও পায়। তবে ভাগ্য যেন সঙ্গে নেই তাদের। ঢাকা পর্বে দ্বিতীয় হয়েও চূড়ান্তপর্বে অংশ নিতে পারবে না এই দল। এর কারণ এসিএম-আইসিপিসির নীতিমালা। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি দল চূড়ান্তপর্বে অংশ নিতে পারে না। প্রতিযোগিতাকে ঘিরে তাদের এত আগ্রহ কেন? কাজী হাসান জুবায়ের জানালেন, প্রোগ্রামিং করতে ভালো লাগে। বন্ধুরা চূড়ান্তপর্বে অংশ নিতে পারবে বলে মন খারাপের মাত্রা কিছুটা কম। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটদের প্রোগ্রামিংয়ে সহায়তা করতে চান। যাতে এ ধরনের প্রতিযোগিতায় নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতা অব্যাহত থাকে। সমস্যার সমাধান করতে ভালো লাগে শিক্ষকদের পরামর্শে গঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিইউ সেন্সরড’ দল। সদস্যরা হলেন সাবিত জাহিন, শাহেদ শাহরিয়ার ও রেজওয়ান মাহমুদ। তাঁরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের ছাত্র। প্রোগ্রামিং সমস্যার সমাধান করতে তাঁদের ভালো লাগে। রেজওয়ান মাহমুদ বলেন, চূড়ান্তপর্বে অংশ নিতে পারলে নিজেদের সেরাটা দিতে চাই। যদি অংশ না নিতে পারেন? রেজওয়ান বলেন, ‘আগামী বছর আবার চেষ্টা করব।’ বিজয়ী অন্য দলগুলো ৪. বুয়েট ফিক্স ইট ফিলিক্স সদস্য: রায়হান চৌধুরী, মাহাথীর আহমেদ ও নাদিমুল আবরার (৮টি সমাধান) ৫. বুয়েট ব্লাডহাউন্ড সদস্য: তানভীর মুত্তাকিন, অর্ঘ্য পাল ও আশিকুল ইসলাম (৭টি সমাধান) ৬. জেইউ সিরিভেক্স সদস্য: বিশাল গৌতম, মো. শাহেদুল ইসলাম ও রাইহাত জামান (৭টি সমাধান) ৭. চুয়েট ইন স্ট্যাক সদস্য: ইমরুজ হোসাইন, মো. নূরে আলম ও সুদীপ্ত শর্মা (৭টি সমাধান) ৮. এনএসইউ অ্যারিস্টোক্রেটস সদস্য: লাবিব মো. রশিদ, তরঙ্গ খান ও মো. সামিউল ইসলাম (৭টি সমাধান) ৯. ডিইউ র্যান্ডম ভ্যারিয়েবলস সদস্য: হৃদ্য রিদওয়ানুল হক, মেসবাহ তানভীর ও মো. শাহাদত হোসাইন (৬টি সমাধান) ১০. চুয়েট পাইরো সদস্য: জান্নাতুল ফেরদৌস, মো. তাহসিন রহমান ও মো. বিল্লাল হোসাইন (৬টি সমাধান)
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.