পূর্বপুরুষদের পথে না হেঁটে উত্তর কোরিয়ার বর্তমান শাসক কিম জং-উন পড়াশোনা করেছেন ইউরোপের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তাতে অবশ্য অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। করুণ অর্থনৈতিক অবস্থা আর চলমান খাদ্যসংকটের পরও দেশটি বহির্বিশ্ব থেকে নিজেদের একরকম আড়াল করেই রেখেছে। তবে উত্তর কোরিয়ার এই শীর্ষ নেতা তাঁর দেশে আধুনিক জীবনের একটা উপাদান নিশ্চিত করেছেন, আর তা হলো ইন্টারনেট। কিন্তু সেই ইন্টারনেটও আবার অদ্ভুত। সর্বশেষ তথ্য পাওয়া না গেলেও যতটুকু জানা গেছে তাতে দেশটির নাগরিকদের সব ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহারই অদ্ভুত।
ইন্টারনেট আছে, তবে… আর দশটা দেশে যে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়, উত্তর কোরিয়াতেও তা আছে। তবে সেটির ব্যবহার শুধু উচ্চবিত্ত এবং বিদেশিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দেশটির বেশির ভাগ নাগরিক ‘কোয়াংমিয়ং’ নামের একধরনের ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, বহির্বিশ্ব থেকে যেটি একদম বিচ্ছিন্ন। কোয়াংমিয়ংয়ের ওয়েবসাইটগুলো বেশির ভাগ উত্তর কোরীয় প্রতিষ্ঠানের। তবে ইদানীং ই-কমার্সের জন্যও কিছু সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেশটির প্রথম ই-কমার্স ওয়েবসাইট চালু হয়েছে ২০১৫ সালে।
চলে নকল ফেসবুক উত্তর কোরিয়ায় ফেসবুক ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে ফেসবুকের ধারণা সরকারের নিশ্চয় খুব মনে ধরেছে। সেখানে ফেসবুকের হুবহু নকল এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালু আছে, শুধু উত্তর কোরীয়রা সেখানে নিবন্ধন করে ব্যবহার করতে পারেন।
বিদেশে ফোন করার সুযোগ নেই অন্য সব উন্নয়নশীল দেশের মতো উত্তর কোরিয়াও টেলিফোন, কম্পিউটার, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ছাড়িয়ে স্মার্টফোনে ঝুঁকছে। তবে সরকারনিয়ন্ত্রিত দুটি মাত্র মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সেখানে চালু আছে। এই দুটির মধ্যে কোরিয়লিংক বেশি জনপ্রিয়, প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে উত্তর কোরিয়ায় বড়জোর ৩০ লাখ মুঠোফোন ব্যবহারকারী আছেন। তা-ও আন্তর্জাতিক কল করার সুযোগ নেই। চীনা সীমান্তে বসবাসকারী ব্যক্তিরা ঝুঁকি নিয়ে চোরাই ফোন ও সিমকার্ড ব্যবহার করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদেশে ফোন করে থাকেন।
কম্পিউটার সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ডেস্কটপ কম্পিউটার ও সস্তা ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়, তবুও সেই উচ্চবিত্তদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সাইবার ক্যাফেতে যদিও কম্পিউটার ব্যবহার করা যায়, তবে সেই ব্যবহারও নিয়ন্ত্রিত। আর ট্যাবলেটগুলো চলে অ্যান্ড্রয়েডের পরিবর্তিত সংস্করণে, বেশির ভাগ সুবিধা সেখানে থাকে না। সেই ট্যাবলেটে কোনো ওয়াইফাই কিংবা ব্লুটুথ ব্যবহারের সুযোগ নেই।
কম্পিউটারে চলে নিজস্ব ওএস উত্তর কোরিয়ায় কম্পিউটার চলে লিনাক্সভিত্তিক একধরনের অপারেটিং সিস্টেমে। সেই অপারেটিং সিস্টেমও দেখতে হুবহু অ্যাপলের ওএসএক্স অপারেটিং সিস্টেমের মতো। তাতে লেখালেখির জন্য ওয়ার্ড প্রসেসিং, গান শোনার জন্য মিউজিক প্লেয়ার ও ক্যালেন্ডার সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়। ইউএসবি স্টোরেজে যদি কোনো ফাইল আদান-প্রদান করা হয় তবে সেগুলোতে জলছাপ দেওয়া থাকে। সে ফাইলগুলো কোথায় ব্যবহার করা হচ্ছে তা ট্র্যাক করতে পারে সরকার। সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.