ফিলিস্তিনের মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত ইসরাইলী সেনাবাহিনীর পক্ষাবলম্বন করে সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে বিসোনেত্তের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় মাগরিব নামাজ আদায়কালে কুইবেক শহরের ‘ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার’ নামের মসজিদটিতে হামলার ঘটনা ঘটে।
এরপর মসজিদটির সামনে থেকে মরোক্কোর বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ খাদিরকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু অভিযুক্ত বিসোনেত্তে ঘটনাস্থল থেকে তার মিতসুবিশি গাড়িতে করে পালিয়ে যান।
পরে কুইবেক সিটি থেকে ইলে ডি’অর্লিয়েন্স দিকে যাওয়ার পথে ৯১১ নম্বরে ফোন করে পুলিশ ডাকেন তিনি। পুলিশ আসার পর মসজিদে গুলিবর্ষণের ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতার কথা বলেন তিনি।
ওই সময় পুলিশ বিসোনেত্তের গাড়িতে তল্লাসি চালিয়ে দুটি রাইফেল এবং একটি একে-৪৭ রাইফেল জব্দ করেন।
পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিসোনেত্তেকে সোমবার কুইবেক সিটি আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় হাতেপায়ে শিকল বাঁধা এই তরুণ সাদা রঙয়ের কারা পোশাক পরা ছিলেন।
সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিসোনেত্তের বিরুদ্ধে ছয়জনকে হত্যার অভিযোগ আনার কথা নিশ্চিত করে কানাডার রয়েল পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন বিসেনোত্তের বাড়িতে এবং মসজিদে তল্লাশি অভিযান চলছে। সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হবে।
এদিকে মোহাম্মদ খাদিরকে প্রথমে মসজিদে হামলায় জড়িত সন্দেহে আটক করলেও পরে পুলিশ তাকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে শনাক্ত করেছে।
এখন পুলিশ বলছে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার জন্য বিসোনেত্তে ছাড়া আর কাউকে অভিযুক্ত করবে না।
অভিযুক্ত বিসোনেত্তে কুইবেকের অভিজাত শহরতলী ক্যাপ-রুজের বাসিন্দা ছিলেন।
তিনি লাভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স ও নৃবিজ্ঞানের ছাত্র। আক্রান্ত কুইবেক ইসলামিক কালচারাল সেন্টার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্ররা বিসোনেত্তেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক নিঃসঙ্গ তরুণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে তাকে এমন ভীতু দেখাতো যে তার পক্ষে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা সম্ভব বলে মনে হয়নি বলে জানান তারা।
একজন ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকালে তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তাতে সত্যি এটি মনে হয়েছে তিনি একজন ট্রাম্পপন্থী।
কুইবেক শহর এলাকায় শরণার্থীদের স্বাগত জানাতে কাজ করে এমন ফেসবুক গ্রুপ ‘ বিয়েনভেন্যু অক্স রিফিউজি-ভিলে ডি কুইবেক’ দাবি করেছে, বিসোনেত্তে লে পেনপন্থী এবং নারীবাদ বিরোধী অবস্থানের জন্য লাভাল ইউনিভার্সিটি এবং সামাজিক মাধ্যমে পরিচিত ছিলেন।
এদিকে ঘটনার পর থেকে আনপাবলিশ করে রাখা বিসোনেত্তের একটি ফেসবুকে পেইজে ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট নেতা ম্যারি লা পেনসহ ডানপন্থী মতাদর্শকে সমর্থন করা হতো বলে জানা গেছে।
এছাড়াও ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী, ডোনাল্ড ট্রাম্প, কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী সমালোচক রিচার্ড ডাউকিনস এবং ক্রিস্টোফার হিচেন্সের পেইজেও তার পেইজ থেকে ‘লাইক’ করা হয়েছে।
নিহতদের পরিচয় মিলেছে
কানাডার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত রোববার রাত ৮টায় ওই ভয়াবহ হামলার সময় কুইবেক ইসলামিক কালচারাল সেন্টারে ৫০ জনের বেশি মানুষ অবস্থান করছিল।
অভিযুক্ত গুলি চালালে এদের মধ্যে পাঁচজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। আরেকজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।
কুইবেক প্রাদেশিক পুলিশ নিহত ছয়জনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেছে।
তারা হলেন, পেশায় মুদি দোকানি ও কসাই তিন সন্তানের পিতা আজেদ্দিন সুফিয়ান (৫৭); লাভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খালেদ বেলকাসেমি (৬০); সরকারের তথ্য প্রযুক্তি কর্মী তিন সন্তানের পিতা আব্দেল করিম হাসান (৪১); আবু বকর থাবতি (৪৪) এবং গিনির দুই নাগরিক মামাদু তানৌ ব্যারি (৪২) এবং ইব্রাহিম ব্যারি (৩৯) ।
এদিকে এ ঘটনায় আহত হন আরো ১৯ জন। তাদের মধ্যে পাঁচজন আহত অবস্থায় এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আর ওই আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সূত্র ডেইলি মেইল ও বিবিসি
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.