বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে হায়দরাবাদ নামটা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছিল এখানেই। ১৯৯৮ সালে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে কেনিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিলেন আকরাম-মিনহাজুলরা। সেই হায়দরাবাদে বাংলাদেশ আরেকটা ইতিহাস রচনা করতে পারবে? ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর থেকে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারতে খেলেছে ৯ ওয়ানডে ও ৭ টি-টোয়েন্টি। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর বাংলাদেশে এসে ৮টি টেস্ট খেলে গেলেও বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো আতিথেয়তা দিচ্ছে ভারত। সফরের একমাত্র টেস্টটি হায়দরাবাদে হবে ঠিকই, তবে সেটি লাল বাহাদুরে নয়, রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে। ভারতে প্রথম বলে এই টেস্টের আগে ‘ঐতিহাসিক’ শব্দটি বসতেই পারে। মুশফিকুর রহিমের আপত্তি এখানেই। তাঁর কাছে সব টেস্টের গুরুত্ব সমান। জিম্বাবুয়েকে যেভাবে দেখেন ভারতকেও একইভাবে দেখেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক, ‘আমি একটু অবাকই হই (ঐতিহাসিক বলতে শুনে)! আমার কাছে এটাকে ঐতিহাসিক বা এ ধরনের কিছু মনে হয় না। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্ট খেললে বরং বেশি চাপ থাকে। ওখানে (ভারতে) আমাদের অনেক কিছু করার আছে। পাঁচ বছর আগের চেয়ে এখন গিয়ে আমাদের ভালো করার সম্ভাবনা আছে। ভারতের মাটিতে আমাদের বর্তমান দলটার কিছু করার ইচ্ছে আছে। ১৭ বছরের মধ্যে প্রথম সেখানে যে টেস্ট খেলতে যাচ্ছি মাথায় কাজ করছে না। এটা সাধারণ একটা টেস্ট ম্যাচ। এমন খেলতে চাই, যাতে ভারত আমাদের বারবার আমন্ত্রণ জানায়।’ দেশের মাঠেই টেস্টে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ কখনো জিততে পারেনি। ৮ টেস্টের ৬টিতে হার, বাকি দুটি বৃষ্টির সৌজন্যে ড্র। ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ কি পারবে দারুণ কিছু করতে? প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। তবে এখনই অত দূরে না তাকিয়ে পাঁচ দিন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করাই মুশফিকের মূল লক্ষ্য, ‘গত দুই বছরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দারুণ খেলেছি। কিন্তু টেস্টে অতটা ভালো হচ্ছিল না। তবে গত দুটি টেস্ট সিরিজে আমরা ভালো খেলেছি। এখানে ব্যক্তিগত নয়, দরকার দলীয় পারফরম্যান্স। তাদের বিপক্ষে তিন দিন নয়, পুরো পাঁচ দিন ভালো খেলতে চাই।’ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে আঙুলে চোট পেয়ে দল থেকে ছিটকে পড়েছিলেন মুশফিক। কাল বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক বললেন, চোট থেকে সেরে ওঠার পথে তিনি, ‘চোট অনেকটা সেরে উঠেছে। এখনো টেস্টের নয় দিন (কাল পর্যন্ত) বাকি আছে। ওখানে একটা অনুশীলন ম্যাচ আছে। আশা করছি, প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে টেস্টের আগে ফিটনেস ফিরে পাব। একজন কিপারের আঙুলে ব্যথা থাকেই। এটা ম্যানেজ করে খেলতে হয়।’ নিউজিল্যান্ডে কন্ডিশন নিয়ে যতটা মাথাব্যথা ছিল, ভারতে সেটি থাকার কথা নয়। দুই দেশের আবহাওয়া-পরিবেশ অনেকটাই এক। হায়দরাবাদের উইকেট নিয়ে তাই অনুমান করতে পারছেন মুশফিক, ‘যেমনই কন্ডিশন হোক, আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা যদিও উপমহাদেশের দল। তারপরও এখানকার তুলনায় ওদের উইকেট ব্যাটিং-সহায়ক হবে। কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানদের কাজ কঠিন হবে। ভারতের বোলিং এখন অনেক ভালো। আমাদের বোলিং আক্রমণ অনভিজ্ঞ হলেও নিউজিল্যান্ডে দু-একজন ভালো করেছে। আমরা যদি ক্যাচ ঠিকঠাক নিতে পারি, ভালো বোলিং জুটি গড়তে পারি যেকোনো টেস্ট দলের বিপক্ষেই আমরা ভালো করব।’ সেই ভালোটা এই সফরে করতে পারলে ইতিহাসের ছাত্র মুশফিক তখন সাফল্যকে নিশ্চয়ই ‘ঐতিহাসিক’ বলতে আপত্তি করবেন না!
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.