ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আমাদের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছিলেন ঢাকায়। সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ কমিশন গঠন-সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। দুই নেতা আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথাও বলেছেন পরস্পরের সঙ্গে। বাঙালি জাতির ইতিহাস আন্দোলন-সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যে যুদ্ধ করেছিলাম আমরা, তাতে এই ভূখণ্ডে রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। ফিলিস্তিনিরাও একই ধরনের লক্ষ্যে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সেই সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন অকুণ্ঠ। পুনর্ব্যক্ত করেছেন মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনের অন্যতম উপায়- ‘দুই জাতি, দুই রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার আন্তর্জাতিক উদ্যোগের কথাও। একই সঙ্গে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনের অধিকৃত ভূখণ্ডে ইসরাইলিদের বসতি স্থাপনের নিন্দা জানিয়েছেন। আমরা লক্ষ্য করছি, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আক্রমণ সম্প্রতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। ট্রাম্পের বিজয়ের পর মনে হচ্ছে তারা নতুন উদ্যমে ইহুদি স্বার্থকে আগের মতোই অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। অধিকৃত এলাকায় তারা হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হটিয়ে দিয়ে সেখানে নতুন করে বসতি গাড়ছে। ট্রাম্পের থিওরি ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করার বিষয়টিও নিন্দিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। এটা সমগ্র অঞ্চলটিকে আরও অস্থির, আরও সংকটাপূর্ণ করবে নিঃসন্দেহে। তাদের এই আগ্রাসী নীতি বিশ্ব জনমতের সম্পূর্ণ বিরোধী। আন্তর্জাতিক আইন লংঘনের দায়ে জাতিসংঘও ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বেশ আগেই। তাতে কাজ হচ্ছে না। কিছু অপশক্তি বাদ দিয়ে সমগ্র বিশ্বই চায়, এই গ্রহের সর্বত্রই বিরাজ করুক স্থায়ী শান্তি। প্রতিটি জাতিই নির্বিঘ্নে তাদের জাতিসত্তার বিকাশ ঘটাবে- এটাই আধুনিকতার দাবি। অথচ আমরা দেখছি মধ্যপ্রাচ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটছে, যা সভ্যতাবিরোধী। ফিলিস্তিনি সংকট মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামী জঙ্গিবাদ উত্থানেরও একটি বড় কারণ। ফিলিস্তিনি মুসলমানদের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবি ক্রমাগতভাবে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। বিরতি দিয়ে দিয়ে চালানো হচ্ছে আগ্রাসন, তোয়াক্কা করা হচ্ছে না কোনো কিছুরই। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। দুই জাতির জন্য দুই স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হতে পারে স্থায়ী সমাধানের একমাত্র উপায়।
ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সংহতি বস্তুত সমগ্র বাঙালি জাতিরই সংহতি। আমরা একইসঙ্গে পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রকেও ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানাব। তাদের সংকট এক বড় মানবিক সংকট। এ সংকটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বশান্তির প্রশ্ন। সংকট নিরসনে পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে। আমরা চাইব বাংলাদেশের মতো যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ ও প্রতিষ্ঠান মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.