টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিখায় (কাজের বিনিময় খাদ্য) এমনিতেই চলছে দুর্নীতির মহোৎসব, তার ওপর আরও বড় নয়ছয়ের সুযোগ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এই দুই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দের অর্ধেক সোলার প্যানেল ও বায়োগ্যাসসহ অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে হতদরিদ্রদের এসব প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়ম মহামারী আকার ধারণ করার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এটা অজানা নয়, টিআর-কাবিখার বরাদ্দে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়মনীতি নেই। সংসদ সদস্যদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ও উপজেলা পরিষদের নামে সাধারণ বরাদ্দের চাল ও গম ছাড় করা হয়। সমালোচনা রয়েছে, টিআর-কাবিখার বরাদ্দ ভাগবাটোয়ারা হয়ে মন্ত্রী-এমপি, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও একশ্রেণীর আমলার পকেটে চলে যায়। খোদ একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী অভিযোগ করেছেন টিআর-কাবিখার ৮০ ভাগই চুরি হয়ে এমপিদের পকেটে যায়।
এ যখন অবস্থা তখন টিআর-কাবিখার অর্ধেক বরাদ্দ সোলার প্যানেলের পেছনে ব্যয় বাধ্যতামূলক করা উদ্বেগের বিষয়ই বটে। কেননা দেশের অনেক স্থানে সোলার প্যানেল স্থাপনের প্রয়োজনই নেই। তাছাড়া যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ আছে সেখানে সোলার প্যানেলের জন্য বরাদ্দ হাস্যকর বৈকি। আমাদের ধারণা, দুর্নীতি-অনিয়মের পর নামকাওয়াস্তে টিআর-কাবিখার যে অংশ দরিদ্রদের জন্য ব্যয় হয় তাতেও ভাগ বসানোর জন্যই নতুন নীতি করা হয়েছে। এমন আশংকা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে সোলার প্যানেল সরবরাহের শর্ত জুড়ে দেয়া। এর পেছনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অসাধু কিছু কর্মকর্তার কমিশন বাণিজ্যের মতো শুভংকরের ফাঁকির বিষয় যে জড়িত নয় তার নিশ্চয়তা কী? এছাড়া টিআর-কাবিখা স্থানীয় দরিদ্র ও অসহায় মানুষ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দিরে সংসদ সদস্যদের অনুদান দেয়ার একটা উপায়। তারা এসব বরাদ্দ মনিটরিং করে থাকেন; কিন্তু নতুন নিয়মে সোলার প্যানেলের পেছনে অর্ধেক ব্যয় বাধ্যতামূলক হওয়ায় সে সুযোগ থাকবে না। সুবিধাবাদী কিছু আমলার তৈরি নিয়মের কারণে সংসদ সদস্যদের খাটো হওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে টিআর-কাবিখার জন্য বরাদ্দ চাল ও গমের আনুমানিক মূল্য ২ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। এর অর্ধেক ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা সোলার প্যানেলের পেছনে ব্যয় করতে হলে সেখানে যে বড় ধরনের অনিয়ম হবে তা বলাই বাহুল্য। টিআর-কাবিখার বরাদ্দের কমিশন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরেই বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। এমনকি এসব বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও তদন্ত করে প্রমাণিত হয়নি বলেই রিপোর্ট দেয়া হয়। অথচ এ সংক্রান্ত যেসব অভিযোগ দুদক তদন্ত করেছে, তার ৯০ ভাগই প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, হরিলুট করা এসব বরাদ্দে নতুন নিয়ম আরোপ না করে বিদ্যমান পদ্ধতিতে অনিয়ম রোধের ব্যবস্থা নেয়া হবে। সত্যিকারার্থেই কোনো এলাকায় সোলার প্যানেলের প্রয়োজন থাকলে তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। প্রশ্নবিদ্ধ একটি বরাদ্দ পদ্ধতিকে আরও অনিয়মের ভাগাড় বানানো কাম্য নয়।
এর আগে বিভিন্ন স্থানে সোলার প্যানেল স্থাপনে নিন্মমানের সামগ্রী দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের কর্মকর্তারা নতুন নীতির পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দোহাই দিচ্ছেন এবং টিআর-কাবিখায় দুর্নীতি হচ্ছে না বলে সাফাই গাইছেন। বিতর্ক এড়াতে নতুন নীতি বাতিল করে টিআর-কাবিখায় যেন অনিয়ম বন্ধ হয় ও হতদরিদ্রদের কাজে আসে তা নিশ্চিতকল্পে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.