কেবল অনিয়ম দুর্নীতি নয়, রীতিমতো ঘুষের হাটে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। দেশের মোট রাজস্ব আয়ের ৪০ ভাগই আসে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে। অথচ রাজস্ব আদায়ের প্রধান কেন্দ্রটি ঘুষ-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হলেও মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই। জানা গেছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও একশ্রেণীর কর্মকর্তা শুল্ক আদায়ে মনোযোগ না দিয়ে কেবল নিজেদের পকেট ভারি করার কৌশলে লিপ্ত। মাসে শতাধিক কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হচ্ছে দেদার। বছরের পর বছর এমন অনিয়ম সত্ত্বেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই বললেই চলে। এতে করে আমদানিকারকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ঘুষ আদায়ের জন্য পদে পদে হয়রানি করা হচ্ছে তাদের। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পণ্যের দামে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
শিউরে ওঠার মতো বিষয়, অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তারা নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য ডাটাবেজের নামে মনগড়া শুল্কায়নের মতো অবৈধ কাজ করতেও পিছপা হচ্ছেন না। সরকার রাজস্ব আদায়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়ায় আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে নামে-বেনামে বিভিন্ন চার্জ আরোপ করে যে কোনো মূল্যে টার্গেট পূরণে তারা ব্যস্ত। আমরা মনে করি, আমদানিকারকদের ওপর অন্যায্য চার্জ চাপিয়ে, রাজস্ব আয় বাড়ানোর নামে হয়রানি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কাস্টমস কর্মকর্তাদের অনিয়মের আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য আমদানি। এক পণ্যের নামে গোপনে অন্য বিলাসদ্রব্য আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরের একশ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশে এমন পণ্য আমদানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এতে সরকারের হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি পকেট ভারি হচ্ছে অসাধু কর্মকর্তাদের। আরও উদ্বেগের বিষয়, কোনো ধরনের স্ক্যানিং না করেই কাস্টম হাউস ৬০ ভাগ আমদানি পণ্যই খালাস করে দিচ্ছে। এতে একদিকে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে পোয়াবারো অবস্থা অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তাদের।
আশার কথা, যুগান্তরের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পর কাস্টম হাউসের ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়টি আমলে নিয়েছে দুদক। এরই মধ্যে দুদকের উচ্চপর্যায়ের একটি দল আকস্মিক চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস পরিদর্শন করেছে। ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের প্রমাণও তারা পেয়েছেন। দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। দুদক কড়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। আমরা বলতে চাই, কেবল বরখাস্ত ও হুশিয়ারি উচ্চারণই যথেষ্ট নয়। তদন্তের মাধ্যমে অপরাধে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে দুদককে নিয়মিত কাস্টম হাউস মনিটর করতে হবে যাতে আমদানিকারকরা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন।
তথ্যসূএ: ইন্টারনেট