‘ঠিক কোথায় সমস্যা আপনার? কেউ তো কিছু বলতে পারছে না!’ প্রশ্ন শুনে স্মিত হাসেন মোস্তাফিজুর রহমান। কোমর থেকে হাত সরিয়ে কাঁধটা একটু নাড়িয়ে বললেন, ‘সমস্যা আছে না! আমার তো কিছু সমস্যা আছেই…।’ মোস্তাফিজই ঠিক। তাঁর ‘সমস্যা’ অনেক। ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে কাঁধে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডে দেখা দিল কোমরব্যথা। গত কয়েক দিনে নাকি আরও কিছু ‘কমপ্লেইন’ করেছেন এই বাঁহাতি পেসার। ঘাড়ে ব্যথা, অ্যাংকেলে সমস্যা। শরীরে যাঁর এত কিছু, তিনি ভারত সফরের দলে থাকবেন না স্বাভাবিক। কিন্তু সত্য হলো, দল নির্বাচনের সময় নির্বাচকেরা চোটে আক্রান্ত খেলোয়াড়দের যে তালিকা নিয়ে বসেছিলেন, সেখানে মোস্তাফিজের নাম ছিল না! পরশু বিসিবিতে তাঁর শরীর-স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে গেলে সংশ্লিষ্ট একজনের কণ্ঠে বিস্ময়, ‘মোস্তাফিজ তো আমাদের ইনজুরি লিস্টে নেই! ও মেডিক্যালি ফিট।’ নিউজিল্যান্ড সফরের শেষ সময় থেকে এখন পর্যন্ত করানো কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেই উল্লেখযোগ্য কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। কাঁধের সমস্যা দূর অনেক আগেই। কোমর, ঘাড়, অ্যাংকেলেও দৃশ্যমান সমস্যা নেই। তাহলে ভারত সফরের দলে কেন নেই তিনি? কারণ, মোস্তাফিজ নিজেই নিজেকে টেস্ট খেলার মতো ফিট ভাবছেন না। ‘ইনজুরি লিস্টে’ না থাকার পরও তাই তাঁর মুখে ওই কথা, ‘আমার তো কিছু সমস্যা আছেই…।’ মোস্তাফিজের নিজেকে ‘আনফিট’ ভাবা নিয়ে কেউ বলছেন, এ তাঁর মনের ভয়। ইচ্ছে করেই টেস্ট খেলতে চাচ্ছেন না। অনেকে আরেকটু এগিয়ে ভাবেন—মোস্তাফিজ নাকি শুধু ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিই খেলতে চান। টেস্ট খেলার চাপ নিয়ে রঙিন ক্রিকেটের অর্থকরী ভবিষ্যৎটা ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চান না। তবে কাল প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন, টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম এবং কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও ব্যাট করলেন ‘ফিজ’-এর হয়ে। মিনহাজুল বলছিলেন, ‘ফিজিও বলেছে ও ফিজিক্যালি ফিট। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরে বোলিং করতে হয়। ওই জিনিসটা এখনো আসেনি। স্কিলে যেটা দরকার…সেটা আসতে আরও সময় লাগবে।’ মোস্তাফিজের সমস্যাকে ‘ব্যক্তিগত’ বলেও এখনই তাঁর টেস্ট না খেলার সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছেন মুশফিকও, ‘ইনজুরি থেকে ফিরেই একজন বোলার সরাসরি টানা পাঁচ দিন খেলতে পারে না। টেস্ট খেলতে গিয়ে সে লম্বা ইনজুরিতে পড়লে আরও খারাপ হবে। তাকে বিশ্রামে রাখার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এটাই ঠিক সিদ্ধান্ত।’ মার্চ-এপ্রিলের শ্রীলঙ্কা সিরিজে মোস্তাফিজকে টেস্টে ফেরানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে হাথুরুসিংহে বলেছেন, ‘ওর একটা বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে। পুরো সুস্থ হতে সময় লাগবে। নিউজিল্যান্ডের অনুশীলনে সে ১২০-১২৮ গতিতে বল করেছে। কাজেই ফিট হতে আরও সময় দিতে হবে।’ মেডিকেল রিপোর্ট মোস্তাফিজকে ফিট বললেও মাঠের পরিস্থিতির সঙ্গে সেটাকে মেলাতে চান না কোচ। এ ক্ষেত্রে খেলোয়াড়ের কথাকেই শেষ কথা মেনে নেওয়ার পক্ষে তিনি। নিজেকে টেস্ট খেলার মতো ফিট না ভাবলেও একটা বাস্তবতা বুঝতে পারছেন মোস্তাফিজও। না খেললে যে বোঝাই যাবে না ফিটনেসের অবস্থাটা আসলে কী! বিনা আপত্তিতে নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত মেনে তাই পরের রাউন্ড থেকে খেলবেন বিসিএলে, ‘বিসিএল খেলে দেখি…। ১০-১৫ ওভার বোলিং না করলে তো বোঝা যাবে না কী অবস্থা।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.