‘১০ হাজার টাকায় ভাড়া করি মুন্নীকে। উদ্দেশ্য একটাই, বাড়ির মালিককে অচেতন করে সোনাদানা নিয়ে পালিয়ে যাবো। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে তাড়াহুড়ো করে সবকিছু নিয়ে যেতে পারিনি। মুন্নী টাকার বিনিময়ে কাজের মহিলা সেজে অপকর্ম করতে ওস্তাদ।’ ঠিক এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন এমরান। চট্টগ্রামে গত ২৮শে সেপ্টেম্বর সকালে নগরীর বাদশা মিঞা চৌধুরী সড়কের আমিরবাগ এলাকায় সানওয়ে ওরিয়ানা নামের অ্যাপার্টমেন্টে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। এই সময় বাড়ির গৃহকর্মী সেজে মুন্নী নামের অপর এক তরুণী ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী ও তার স্ত্রী ফাতেমা রোকেয়াকে সকালের নাশতার সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দেয়। এরপর মূল্যবান সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ বাড়ির ম্যানেজার আবদুল কাদেরকে নিয়ে মুন্নীর সন্ধানে বের হয়। এরপর শহরের বদনাশাহ মাজারের কাছে মোবাইলে কথা বলতে দেখে চিৎকার করে কাদের। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে। পরে জানা যায়, এই ঘটনায় ওই বাড়ির গাড়ির ড্রাইভার এমরানও জড়িত। চকবাজার থানা পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে মুন্নী জানিয়েছে সে টাকার বিনিময়ে এভাবে মানুষকে অজ্ঞান করে। কখনো বাড়ির গৃহকর্মী। কখনো কারো আত্মীয় হয়ে। এই ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা চার্জ নেয় সে। তাকে দিয়ে অপকর্ম করাতে শহরের ভেতর আরো অন্তত ১০/১২টি সিন্ডিকেট আছে। সব সিন্ডিকেটের লোকজনের সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে। মুন্নী জানায়, সে বেশিদিন কোনো বাড়িতে কাজ করে না। প্রথমে ঢুকে বাড়ি থেকে পালানোর পথ খুঁজে। এরপর সদস্যদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে তাদেরকে খাবারের ভেতর ঘুমের ওষুধ অথবা অচেতন করার বড়ি মিশিয়ে দেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার এসআই বিকাশ চৌধুরী জানান, বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে আমরা অ্যাপার্টমেন্টটির ম্যানেজার মো. আবদুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলি। তিনি জানান, মুন্নীকে দেখলে চিনতে পারবেন। তাকে নিয়ে বেশকিছু এলাকায় আমরা খুঁজতে থাকি। একপর্যায়ে বদনা শাহের (রহ.) মাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে ওই নারী কয়েকজন ভাসমান নারীর ভিড়ে মোবাইলে কথা বলছে। সেখান থেকে মুন্নীকে শনাক্ত করে থানায় আনার পর জানা যায় এই ঘটনায় বাড়ির গাড়িচালক এমরানও জড়িত। তিনি নাকি ১০ হাজার টাকায় ভাড়া করেছিল মুন্নীকে। তার পরিকল্পনা ছিল ডাক্তার দম্পতিকে অচেতন করে মূল্যবান জিনিসপত্র ও স্বর্ণালংকার চুরি করা। ঘটনার দিন এই দুজনকে অচেতন করার পর অনেকবার ঘরের ভেতর মুন্নী আলমারির চাবি খুঁজেছিলো। কিন্তু ব্যর্থ হয়। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ার ভয়ে পালিয়ে যায়। যাওয়ার আগে বাড়ির বাইরে ম্যানেজার আবদুল কাদেরের সঙ্গে দেখা হলে তিনি বলেন, আজ কাজ নেই। তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলেছি। পরে দরজা খোলা দেখে বাড়ির অন্য লোকজনেরা ভেতরে ঢুকে অজ্ঞান করার চিত্র দেখতে পান।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.