‘আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০১৬ : অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা-ভিত্তিক বার্ষিক প্রতিবেদন বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন সংস্থাটির সভাপতি ড. তাসনিম সিদ্দিকী।
এতে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত লাখ ৪৯ হাজার ২৪৯ জন বাংলাদেশী কর্মী উপসাগরীয় ও অন্যান্য আরব দেশসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছেন। ২০১৫ সালে মোট পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন কর্মী বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অভিবাসন করেছেন।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে মোট চার লাখ নয় হাজার ২৫৩ জন কর্মী কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যান। ২০১৪ সালে মোট চার লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪ জন কর্মী কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে গেছেন।
সেক্ষেত্রে চলতি সাত লক্ষাধিক কর্মীর অভিবাসন সত্যিই বাংলাদেশের অভিবাসন খাতে একটি ব্যাপক সাফল্য হিসেবে দেখছে রামরু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৬ থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক কোটির কাছাকাছি লোক কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে অভিবাসন করেছে। কিন্তু, বাংলাদেশ ফিরে আসা অভিবাসীদের তথ্য জানতে আগ্রহী। তবুও ফিরে আসা অভিবাসীদের তথ্য সংরক্ষণের কোনো পদ্ধতি গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি ডেকমা প্রকল্পের অধীনে রামরু ১৪টি জেলার ৫০টি মৌজায় জরিপ চালায়। এতে দেখা যায়, অভিবাসী পরিবারগুলোর মধ্যে ২৭ শতাংশ হচ্ছে ফিরে আসা অভিবাসী।
এই গবেষণায় শুধু তাদেরকেই ফিরে আসা অভিবাসী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, যারা গত ১০ বছরের মধ্যে ফিরে এসেছেন এবং বাংলাদেশে ছয় মাস বা তার অধিক সময় ধরে অবস্থান করছেন।
রামরু সভাপতি ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘গত ১০ বছরে মোট ৫৬ লাখ ১৮ হাজার ৬২৪ জন কর্মসংস্থানের জন্য অভিবাসন করেছেন। যদি তাদের মধ্যে ২৭ শতাংশ ফেরত আসে, তাহলে আমরা বলতে পারি- ১০ বছরে ১৫ লাখ ১৭ হাজার ২৮ জন কর্মী ফেরত এসেছেন।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে নারী অভিবাসন গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক লাখ আট হাজার ৭৬৯ জন চাকরি করার জন্য বিদেশে গেছেন, যা গত বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশী।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ স্বল্পমেয়াদী চুক্তিভিত্তিক কর্মী মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অভিবাসন করেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। ২০১৬ সালে মোট অভিবাসীর প্রায় ৮১ শতাংশ উপসাগরীয় এবং অন্যান্য আরব দেশে অভিবাসন করেছেন। বাকি ১৯ শতাংশের বেশীর ভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে অভিবাসন করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৬ সাল হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শুধু উপসাগরীয় এবং অন্যান্য আরব দেশগুলোতে অভিবাসনের হার মোট অভিবাসনের ৮২ ভাগ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহে অভিবাসনের হার ১৮ ভাগ।
এতে বলা হয়, ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মী অভিবাসন করেছেন ওমানে। এ বছর ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে এক লাখ ৮১ হাজার ৮০৬ জন কর্মী গেছেন যা বাংলাদেশ থেকে এ বছরের মোট প্রেরিত কর্মীর ২৫.৪০ শতাংশ। ২০১৫ সালেও ওমান ছিল সর্বোচ্চ অবস্থানে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে সৌদি শ্রমবাজারেও যে স্থবিরতা বিরাজ করছিল তা গত বছর থেকে কাটতে শুরু করেছে। এ বছর কাতারকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব। এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার ৫৮৮ জন শ্রমিক অভিবাসন করেছেন সৌদি আরবে, যা ২০১৫ সালের চেয়ে ৫৪ শতাংশ বেশী।
এতে বলা হয়, ২০১৬ সালে ৫২ হাজার ১৮৭ জন অভিবাসী গ্রহণ করে সিঙ্গাপুর পঞ্চম অবস্থানে মেনে এসেছে। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন হ্রাস পাওয়ার কারণ হলো মধ্যপ্রাচ্যেও দেশগুলোতে অভিবাসন বৃদ্ধি পাওয়া। ২০১৪ সালে সিঙ্গাপুর ছিল তৃতীয় অবস্থানে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বাংলাদেশ থেকে পুরুষ শ্রমিকদের অভিবাসনের ওপর নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল রেখেছে। এই দেশ বাংলাদেশ থেকে যে হারে নারী কর্মী গ্রহণ করত এ বছর সেটিও বেশ কমেছে। ফলে অভিবাসন ২০১৫ সালের তুলনায় ৬৯ শতাংশ কমে ২৫ হাজার ২৭১ থেকে সাত হাজার ৮০৩ জনে পৌঁছেছে।
মালয়েশিয়ায় অভিবাসন ২০১৫ সালের ৩০ হাজার ৪৫৩ জন থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে ৩৯ হাজার ৯৮১ জনে পৌঁছেছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
এতে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেশ কিছু দেশে অভিবাসন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ইরাক ও লিবিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। এ বছর ইরাকগামী কর্মীর সংখ্যা ৬৬ শতাংশ কমেছে তবে এটা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। আর লিবিয়ায় কোনো অভিবাসন হয়নি যা ২০১৫ সালে ছিল ২৩১ জন।