ব্যাবিলনীয় সভ্যতাতেই প্রথম শুরু হয় নতুন বছর উদযাপন। প্রায় চার হাজার বছর আগে এখন যেখানে ইরাক, সেখানে গড়ে উঠেছিল মেসোপটেমিয়ান সভ্যতা। সে সভ্যতাকে আবার কয়েকটা যুগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম যুগের নাম সুমেরীয় সভ্যতা এবং দ্বিতীয় যুগকে বলা হয় ব্যাবিলনীয় সভ্যতা। তখন বেশ জাঁকজমকের সাথে নববর্ষ পালন করলেও সেই উৎসবটা ১ জানুয়ারি পালিত হতো না। কারণ তখন কোনো ক্যালেন্ডারই ছিল না। তারা শীতকাল শেষ হলে বসন্তকালের প্রথম দিনটিতে নিউ ইয়ার বা নববর্ষ পালন করত। বসন্তের প্রথম দিন তারা প্রথম চাঁদ উঠলেই টানা ১১ দিন আনন্দ-উৎসব করত। তাদের এই নববর্ষ পালনের উৎসব গ্রহণ করেছিল রোমানরা। তারাও নববর্ষ পালন করত। এরপর ক্যালেন্ডার আবিষ্কৃত হয়। তবে ক্যালেন্ডার থাকলেও তাদের চাঁদ দেখতেই হতো। কারণ প্রথমদিকে ওদের ক্যালেন্ডারে তারিখ বলে কিছু ছিল না, মাস হিসেব করা হতো চাঁদ দেখে। আর মাস ছিল মোট ১০টা। জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারি মাস ছিল না। নববর্ষ পালন করা হতো ১ মার্চ। পরে রোমান সম্রাট নুমা পন্টিলাস জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারি মাস যোগ করেন। আর বিখ্যাত সম্রাট জুলিয়াস সিজার ক্যালেন্ডারে তারিখ যুক্ত করেন। তারপরও একটা বড় সমস্যা ছিল। কারণ আগে বছর হিসেব করা হতো চাঁদ দেখে। আর তাতে বছরে ১০ দিন কম পড়ে যেত। সে সমস্যাও দূর করলেন সম্রাট সিজার। তিনি চাঁদের বদলে সূর্যের অবস্থান দেখে বছর গণনা করে ক্যালেন্ডার বানালেন। এরপরও সমস্যা রয়ে গেল। কারণ রোমানরা আগে উৎসব করত পহেলা মার্চ। হঠাৎ যখন বলা হলো এখন থেকে উৎসব হবে পহেলা জানুয়ারি, তখন সবাই তা মেনে নেয়নি। অনেকে হয়ত ব্যাপারটা বুঝতেই পারেনি। কিংবা অনেকের কাছে হয়ত রাজার আদেশই পৌঁছায়নি। আবার অনেকের পুরনো রীতি-নীতির প্রতি এক রকম ভালোবাসা জন্মে যায়। আর তাই নুমা পন্টিলাস জানুয়ারিকে প্রথম বছর বানালেও তখনো পহেলা মার্চেও অনেকে নববর্ষের উৎসব করত। এ সমস্যারও সমাধান করলেন সম্রাট জুলিয়াস সিজার। তার এই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ক্যালেন্ডারের নাম দেয়া হলো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। কিন্তু আমরা এখন যে ক্যালেন্ডারটা ব্যবহার করি, যে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করি, সেটার নাম গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। পোপ ১৩শ’ গ্রেগরির নামে এ ক্যালেন্ডারটির নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এই ক্যালেন্ডারটি তৈরি করেননি। এটি তৈরি করেছিলেন অ্যালোসিয়াস লিলিয়াস নামের একজন ডাক্তার। তিনি আসলে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারটিই সম্পাদন করেছিলেন। এখন সারাবিশ্বে প্রায় সব জাতিই এ ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে। তবে আমরা এই ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতে শুরু করি ব্রিটিশ শাসন শুরুর (১৭৫৭ সাল) ৫ বছর আগে। তাদের মাধ্যমেই আমরা এই ক্যালেন্ডারের সাথে পরিচিত হতে শুরু করি। তাই এ ক্যালেন্ডার আমাদের কাছে ইংরেজি ক্যালেন্ডার আর এই নববর্ষ আমাদের কাছে ইংরেজি নববর্ষ নামে পরিচিত। সেই ধারাবাহিকতায় ইংরেজ আমল থেকে আমরাও ইংরেজিতে সাল গণনা করতে শুরু করি। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়াসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কোটি কোটি ডলার খরচ করা হয় এই নববর্ষ উৎসবকে কেন্দ্র করে। আতশবাজির বর্ণিল রঙে রঙিন হয়ে উঠে সে দিনের রাতের আকাশ। বিশ্বব্যাপী ১২টা ০১ মিনিটে জেগে ওঠে রাতের আকাশ। বিশ্বের সব দেশে গ্রেগরিয়ান নববর্ষ উদযাপিত হলেও অনেক দেশে এটি প্রধান নববর্ষ উৎসব নয়। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আরবি নববর্ষকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, ভারত ও বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষকে উৎসবের সাথে পালন কর হয় আবার চীনে চীনা পঞ্জিকা অনুসারে নববর্ষ পালন করা হয়। এ ছাড়াও বিশ্বের অনেক উপজাতিরা তাদের নিজস্ব দিবসে নববর্ষ উদযাপন করে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.