দিবসকেন্দ্রিক ফুলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে সারাদেশে। আর সারাদেশে ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগ পূরণ করে ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালী। গদখালী অবস্থিত যশোরের ঝিকরগাছাতে।
গদখালীতে ফুলের চাষ শুরু হয় ফুল চাষি শের আলীর হাত ধরে। ১৯৮৩ সালে তিনি ভারত থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বীজ এনে গদখালীতে চাষ শুরু করে, পরে তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রামের অন্য কৃষকগোষ্ঠী শুরু করে তাদের ফুল চাষের বিপ্লব। শের আলী এরপর সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে অনেক ফুলের বীজ সংগ্রহ করে চাষ করা শুরু করেন। এখন ঝিকরগাছার দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে কমপক্ষে সাত হাজার মানুষ। এখানে বিঘা প্রতি সিজনে কৃষকরা আয় করেন প্রায় ৪ লাখ টাকা।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তার কবিতায় লিখেছিলেন
‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা
খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি
দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার
ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী’
মাঠের পর মাঠ কৃষি জমি। কিন্তু সেখানে খাদ্যশস্য ফলানো হয় না। বিঘার পর বিঘা ফুলের মাঠ। কোনো মাঠে গাঁদা ফুল তো কোনো মাঠে বিভিন্ন প্রজাতির চীনা গোলাপ, হ্যারি গোলাপ, তাজমহল গোলাপসহ অন্য ফুলের চাষ করছেন। আবার কোথাও টিনের ছাউনির নিচে পরম যত্নে বেড়ে উঠছে রং-বেরঙের জারবেরা ফুল।
এখন বলছি বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী ও সর্ববৃহৎ ফুলের মার্কেট যশোরের গদখালী ফুলের মোকামের কথা। যেখানে দিগন্ত জোড়া ফুলের মাঠ। চাষিরা সবাই ব্যস্ত ফুলগাছের পরিচর্যায়।
চাচড়া বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বেনাপোল রোডের বাসে উঠলেই আধঘণ্টার ভেতর পেঁৗছে গেলাম গদখালী বাজারে। বাস থেকে নেমেই চোখে পড়ল বিরাট বিরাট স্তূপ করা গোলাপ ফুলের গাঁইট বাঁধতে ব্যস্ত মানুষজন। সেখানে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা এই ফুল এখন ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠাচ্ছেন। তাই গাঁইট বেঁধে চলছে ট্রাকে উঠানোর প্রস্তুতি। এবার চাষিদের কাছ থেকে শুনে দেখতে গেলাম ফুলের রাজধানীর অপূর্ব দৃশ্য। কিছু দূর হাঁটতেই চোখে পড়ল বিরাট এক গোলাপের ক্ষেত, সেখানে ফুটে রয়েছে লাল গোলাপ। এ যেন এক অদ্ভুত মুগ্ধতা। যে কেউ দেখলে এই পরিবেশের প্রেমে পড়তে বাধ্য। কারণ গোলাপের মিষ্টি ঘ্রাণ যেন মাতাল করে দিচ্ছে চারিদিক। পাশেই জমিতেই চাষ হচ্ছে রঙ-বেরঙের গ্গ্নাডিওলাস। হলুদ, লাল, নীল রঙের গল্গাডিওলাসের বাগানটাও দেখার মতো। সেটা পেরিয়ে পরের আইলে রয়েছে মাঠভর্তি রজনীগন্ধার গাছ। সেখানে ফুটে রয়েছে শুভ্র সাদা রজনীগন্ধা। আবার পরের জমিতে গোলাপের বিশাল বাগান। আর এসব ফুলের মিশ্রিত ঘ্রাণ শান্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে হৃদয়ে। সেখানে একটি গোলাপ বাগানের মালিক বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় ১০-১২ বছর ধরে গোলাপ চাষ করছি, লাভ বেশিও হয় না আবার কমও হয় না। প্রতিদিন সকালে গোলাপ সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে যাই, সেখানেই ক্রেতারা এসে ফুল বিভিন্ন জায়গাতে নিয়ে যান। তবে আমাদের ফুল বেশি বিক্রি হয় ফেব্রুয়ারি মাসে। তখন দেশে ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ, একুশে ফেব্রুয়ারি এসব থাকে সেজন্য প্রচুর ফুল বিক্রি হয় এ সময়। এ ছাড়া এ সময় বিয়ের মৌসুম থাকায় ফুলের চাহিদা কমে না কখনও।’
দেশের অন্য জায়গার গ্রামে গেলে আমরা যেমন বুক ভরে তাজা অক্সিজেন নিতে পারি ঠিক তেমনি গদখালীর মাঠের পর মাঠের ফুলের সাগর আমাদের অক্সিজেনের সঙ্গে ফ্রি দিচ্ছে ফুলের সুগন্ধ। যা অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না।