বছরের প্রথম দিন রোববার শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। গতকাল শুক্রবার ছিল প্রথম ছুটির দিন। কর্মব্যস্ত ঢাকার মানুষও যেন মুখিয়ে ছিল দিনটির জন্য। মাসের প্রথম ছুটির দিনে সকাল থেকেই মেলায় আসতে থাকে দর্শনার্থীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। বিকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে ২২তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। বিক্রেতারাও নিজেদের পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে নজর কাড়া প্যাভিলিয়ন ও শো-রুম নির্মাণের পাশাপাশি রেখেছেন বিশেষ ধরনের ছাড়ের ব্যবস্থা। কোথাও পণ্যের ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ ছাড়া। কোথাও একটা কিনলে একটা ফ্রি। কোথাও আবার স্বল্পমূল্যে অনেক পণ্য বিক্রির চটকদার অফারের ব্যবস্থা। প্রথম ছুটির দিনে মেলায় পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা মানুষজনের যেমন উপস্থিতি ছিল তেমনি ছিল বন্ধু-বান্ধবের দলও। দর্শনার্থীদের কারো আকর্ষণ ছিল ঘর সাজানো সামগ্রী ঘিরে, কারো আবার আকর্ষণ ছিল নিজেকে সাজানোর উপকরণের দিকে। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে তরুণ ও বয়স্কদের পাশাপাশি বাদ যায়নি শিশুরাও। তবে শিশুদের আকর্ষণ ছিল খেলনার দিকেই। মেলার উত্তর-পূর্বকোণের একটি খেলনার দোকানের কর্মচারী রায়হান আহমেদ বলেন, ব্যাটারিচালিত বিভিন্ন ধরনের আধুনিক খেলনা বাচ্চারা বেশি পছন্দ করছে। এসব খেলনা ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। মেলা ঘুরে দেখা যায়, তরুণ-তরুণী দর্শনার্থীদের ভিড় কিছুটা কাপড়ের দোকানের দিকে বেশি। তরুণীদের কাপড়ে চটকদার ছাড় দেয়া হয়েছে কয়েকটি দোকানে। এর মধ্যে সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের এক পোশাকের দোকানে দেখা যায়, মেলা উপলক্ষে ৫৯৯ টাকায় ৩ সেট সেলোয়ার-কামিজ বিক্রি হচ্ছে। দোকানের কর্মচারী মাজহারুল ইসলাম জানান, মেলা ছাড়া আর কোনো সময়ই ৫৯৯ টাকায় তিন সেট সেলোয়ার-কামিজ বিক্রি সম্ভব নয়। আর যেহেতু মেলায় বিক্রি বেশি তাই দাম কম হলেও লস হয় না। চলতি বছর বাংলাদেশসহ ২১টি দেশ মেলায় অংশ নিচ্ছে। ১৩ লাখ ৭৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের ভূমিতে এবার মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। এবারের মেলায় প্রবেশ মূল্য ধরা হয়েছে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য জনপ্রতি ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য জন প্রতি ২০ টাকা। এবার বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল-প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫৮০টি। মেলা মাঠে একটি ই-শপ, দুটি শিশু পার্ক, তিনটি রক্তসংগ্রহ কেন্দ্র, তিনটি মা ও শিশুকেন্দ্র এবং একটি প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাঠের সৌন্দর্য বাড়াতে বিভিন্ন স্পটে বাগান তৈরি করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে মুসলিমদের নামাজের জন্য একটি মসজিদ এবং আনসার ও বেসরকারি সিকিউরিটি ফোর্স সদস্যদের জন্য দুটি ডরমেটরি স্থাপন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতি বছর বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, পূর্বাচলে ৬০ বিঘা জমির ওপর স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্র তৈরির কাজ শিগগিরই শুরু হবে। চীনের অর্থায়নে আগামী ২০১৯ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.