ঢাকার লীগকে নিয়মিত করলেই যে দেশের ফুটবলের চিত্র পাল্টানো সম্ভব নয়, সকলে বুঝলেও বুঝতেন না কেবল বাফুফে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তার ধারণা ছিলো ঢাকার লীগকে মাঠে রেখে জাতীয় দলের জন্য বিদেশী কোচ আনলেই পাল্টে যাবে দেশের ফুটবল। সফলতা আসবে জাতীয় দলে। জাতীয় দলের টানা ব্যর্থতায় সালাউদ্দিনের এই ধারণা মিথ্যায় পরিণত হয়েছে। তার নতুন পরিকল্পনায় স্থান পেয়েছে তৃণমূলে কাজ করা। চারদিনের বাংলাদেশ সফরে এসে সালাউদ্দিনকে একই পরামর্শ দিলো ফিফার প্রতিনিধি দল। ফিফার সিনিয়র ডেভেলপমেন্ট অফিসার মাইক ফিস্টারের মতে সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই এ দেশের ফুটবল পিছিয়ে পড়েছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে একটি টার্নিং পয়েন্ট দরকার। নতুন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলেই কেবল সেটা সম্ভব।
ফিফা ফাস্ট ফরোয়ার্ডের আওতায় বাংলাদেশকে সহায়তা দিতেই ঢাকা এসেছে ফিফা প্রতিনিধি দল। এই দলের নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ অটো ফিস্টারের ছেলে মাইক ফিস্টার, ফিফা টেকনিক্যাল অফিসার সুব্রামানিয়াম ফিফা ডেভেলপমেন্ট অফিসার সাজি প্রভাকরণ ও এএফসি’র মেম্বার অ্যাসোসিয়েশন ডিপার্টমেন্টের ডেভেলপমেন্ট অফিসার রাইয়াম। চার দিনের সফরে ফিফার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজেক্টের সম্ভাবতা যাচাই করেন। ফিফার এই প্রকল্পের আওতায় বাফুফে পুরুষ অনূর্ধ্ব-১৬ ও ১৮ এবং মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৬ এই তিনটি দলের সারা বছরের ট্রেনিং ক্যাম্পের জন্য সয়াহতা চেয়েছে। এবারের সোহ্রাওয়ার্দী কাপ ও শেরে বাংলা কাপ আয়োজনেও ফিফার কাছে অনুদান প্রত্যাশা করেছে দেশের ফুটবলের শীর্ষ সংস্থাটি। কিছু স্থাপনা নির্মাণেও ফিফার সহায়তা চেয়ে বাফুফে সভাপতি বলেন, বাফুফে ভবনে অবস্থিত ডরমিটরি আধুনিকায়ন, জিম স্থাপন ও ফ্লাড লাইটের সহায়তা চাওয়া হয়েছে ওদের কাছে। মাইক বাফুফের সামনে ছোট একটি টার্ফ বসিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। বাফুফে এসব প্রকল্প নিয়ে ফরাশগঞ্জের হয়ে ঢাকার ফুটবলে অংশ নেয়া মাইক ফিস্টার বলেন, আমরা তাদের এসব পরিকল্পনা শুনেছি। এগুলো আমরা ফিফায় প্রেরণ করবো। সেখানে আর্থিক বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে তিনি বলেন, ফুটবলে সফলতা না পেলে মনে হয় কোনা কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না। জার্মানিতে এই অবস্থা হয়েছিলো একবার। ইউরো ফুটবলের এক আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিলো জার্মানি। সঠিক পরিকল্পনা হাতে নেয়ায় দশ বছরের মাথায় তারা বিশ্বকাপ জিতেছিলো। বাংলাদেশের ফুটবলেও এমন পরিকল্পনা নিতে হবে। দুই বছর আমরা দেখবো। তারা যদি এটাকে টার্নিং পয়েন্ট ধরে এগুতে পারে তবেই সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে। স্কুল ফুটবল নিয়ে সাজি প্রভাকরণ বলেন, আমরা শুনেছি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬৪ হাজার স্কুল নিয়ে একটি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। বাফুফে যদি ওদের সঙ্গে মিলে কাজ করে তবে অনেক ফুটবলার পাওয়া যেতে পারে এই টুর্নামেন্ট থেকে। বাফুফেকে তৃণমূলে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে ফিফার এই ডেভেলপমেন্ট অফিসার বলেন, ফিফা প্রকল্প অনুমোদন দিলেই এক সঙ্গে সকল টাকা দিয়ে দেয় না। তারা বাফুফের প্রতিটি কাজ মনিটরিং করার পরই অর্থ ছাড় করবে। এ কারণে অবশ্যই বাফুফের প্রতিটি প্রকল্প স্বচ্ছ থাকতে হবে। সিলেট ফুটবল একাডেমির প্রসঙ্গে সাজি বলেন, একাডেমি চালু হওয়ার পর আমরা গোল প্রজেক্টের আওতায় একটি কিস্তি ছাড় করেছিলাম। পরবর্তীতে সরকারের সঙ্গে বাফুফে চুক্তি নবায়ন না করায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। আমরাও আমাদের সহায়তা বন্ধ করে দেয়। তারা যদি ক্লাব কিংবা বিকেএসপি’র সঙ্গে মিলে একাডেমি চালু করতে পারে ফিফা অবশ্যই সহায়তা করবে। ফিফার এই প্রতিনিধি দল বাফুফে ছাড়া সভা করেছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সঙ্গে।