মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজট * ভেঙে পড়েছে বাসের সিডিউল * ট্রেন ও লঞ্চে যাত্রীর ভিড় * ভাঙাচোরা সড়ক, গাড়ির চাপ, গাড়ি বিকল ও দুর্ঘটনায় যানজট
ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসেই ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। দেশের মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজটের কারণে এবারের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে ভোগান্তির মধ্য দিয়ে। শুধু মহাসড়ক নয় রেলস্টেশন ও ফেরিঘাটেও দুর্ভোগের শেষ নেই। ঘরমুখো মানুষের পথে পথেই কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতকিছুর পরও স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি যাওয়া চাই।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অন্তত ৪০ কিলোমিটার এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ৬০ কিলোমিটার এলাকা যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেমে ছিল। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জে ২০ কিলোমিটার সড়কে ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছিল অপেক্ষমাণ গাড়ির লাইন। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটের উভয় পাড়ে হাজার হাজার গাড়ির দীর্ঘ সিরিয়াল পড়ে। ফলে দক্ষিণের জেলার মানুষকে ঘাট পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। যানজটের কারণে ঢাকায় গাড়ি ঢুকতে পারেনি। ফলে অধিকাংশ বাস কোম্পানির সিডিউলে ১ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আগাম টিকিট কিনেও যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ে কাক্সিক্ষত গাড়ি পাননি। সড়কের যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়া, গাড়ি বিকল হয়ে পড়া, সড়ক দুর্ঘটনা, ভাঙাচোরা সড়কে গাড়ির গতি কমে যাওয়ায় এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের পন্টুন ডুবে যাওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা। এসবের প্রভাব পড়েছে ঈদ আনন্দ যাত্রায় অংশ নেয়া ঘরমুখো মানুষের ওপর।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি বন্যা ও বৃষ্টিতে বিভিন্ন জেলার কয়েকশ’ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের আগে ওইসব সড়ক চলাচলের উপযোগী করতে দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে। দেশের ৬৫টি ডিভিশন অফিসের অনূকূলে মাইনর রিপেয়ারিংয়ে ৬০ কোটি ৫০ লাখ এবং বিভাগীয় মেরামতে ১৮ কোটি ১০ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে। তারা বলেন, ভাঙাচোরা সড়কের কারণে গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে। এদিকে পথে পথে আটকে থাকা অনেকেই গাড়ির ঝাঁকুনিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে নারী, শিশু ও রোগীদের কষ্টের শেষ ছিল না। ভোগান্তির হাত থেকে রেহাই পাননি রেল ও নৌপথের যাত্রীরা। লঞ্চ ও ট্রেন অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাজধানীর ভেতরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দেখা দেয় গণপরিবহনের সংকট। এ সময় সিএনজি অটোরিকশা ও সাধারণ রিকশায় বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাধ্য হয়ে ভারি ব্যাগ ও মালামাল নিয়ে যাত্রীদের বাস, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।
সরেজমিন রাজধানীর গাবতলী ও কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে, বাসের সিডিউল লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ায় যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস কাউন্টার ও সড়কের ওপর অবস্থান করছেন। কল্যাণপুরে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, রূপা এন্টারপ্রাইজ, নাহার এন্টারপ্রাইজ, ডিপজল, টিআর ট্রাভেলস, সাথী, এসবি, সুপার ডিলাক্স, সনি সুপার পরিবহনসহ দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলোতে ঘরমুখো যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। গাবতলী বাস কাউন্টারে র্যাব ও পুলিশের আলাদা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া বাস ও ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রচারকেন্দ্র সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গাগামী পূর্বাশা পরিবহনের বেলা ১১টার গাড়ি ছেড়ে গেছে পৌনে ৫টায়। হানিফ পরিবহনের খুলনাগামী সকাল ৯টার গাড়ি বিকাল ৪টা এবং সকাল ১০টার গাড়ি বিকাল ৫টায় ছেড়ে গেছে। সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার প্রতিনিধি মেহেদী জানান, তাদের গাড়িগুলো দৌলতদিয়ায় আটকা পড়ে আছে। বৃহস্পতিবার সকালে গাবতলী থেকে মাত্র একটি গাড়ি ছেড়ে গেছে। অন্য গাড়ি ফিরে না আসায় বিকাল ৫টা পর্যন্ত কোনো ট্রিপ দেয়া যায়নি। প্রায় সব গাড়িই ৫-৮ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে। যাত্রীদের ভোগান্তি এড়াতে আগাম টিকিট সংগ্রহকারীদের ফোন করে দেরিতে বাস টার্মিনালে আসার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে গাড়ির সকালের যাত্রীদের সন্ধ্যায় আসতে বলা হয়েছে। ঝিনাইদহের দর্শনাগামী দর্শনা ডিলাক্স পরিবহনের কাউন্টার প্রতিনিধি মো. আলী হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় যে গাড়ি রাজধানীর গাবতলী থাকার কথা সেই গাড়ি বিকাল ৫টা পর্যন্ত এসে পৌঁছেনি। অন্যান্য পরিবহনের সঙ্গে তাদের গাড়িও রাস্তায় আটকে আছে।
ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে চলাচলকারী মোল্লা এন্টারপ্রাইজের ফোরম্যান সিরাজ বলেন, সাধারণ সময়ে দিনে তাদের ১০টির বেশি গাড়ি বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। এদিন দীর্ঘ যাত্রাপথে বিভিন্ন স্থানে যানজট হওয়ায় বিকাল ৫টা পর্যন্ত দুটি গাড়ি ছেড়ে গেছে। এ রুটে যানজটের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, যমুনা সেতু, টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড, মির্জাপুর, হাঁটুভাঙা, কালিয়াকৈর, চন্দ্রা, বারোবাজার, বাইপাইল এলাকায় যানজটে গাড়ি দীর্ঘসময় আটকে আছে। বিশেষ করে চন্দ্রা এলাকায় যানজট যাত্রীদের তীব্র ভোগান্তিতে ফেলছে। ওই এলাকায় প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে চরম গাফলতির অভিযোগ করেন তিনি।
একই কথা জানিয়েছেন সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের পরিবহনকর্মীরা। এখানে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার মো. নিজাম যুগান্তরকে বলেন, রাস্তায় রাস্তায় যানজটের কারণে শিডিউলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। রিজার্ভ গাড়ি নামিয়েও যাত্রী চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে না। এ কাউন্টারে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্র মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারে যাচ্ছি। সকালে মীরপুর থেকে মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়েছিলাম। সেখানে এনা কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আজকের (বৃহস্পতিবার) সব টিকিট শেষ, আগামীকালের (শুক্রবার) টিকিট পাওয়া যাবে। এরপর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এসে দেখি কোনো গাড়ি নেই। সাড়ে ৩টার একটা গাড়ির টিকিট পেয়েছি। কিন্তু ৪টা পর্যন্ত ওই গাড়িই আসেনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের হানিফ পরিবহনের ড্রাইভার আবু সাঈদ বলেন, মহাসড়কের রাস্তায় রাস্তায় যানজট। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে মেঘনা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তায় ভয়াবহ যানজট লেগে আছে। ২০ থেকে ২৫ মিনিটের ওই রাস্তা পাড়ি দিতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগছে।
লঞ্চ ও রেল স্টেশনে সরেজমিন দেখা গেছে, আগাম টিকিট সংগ্রহকারী যাত্রীরা গন্তব্যে যাচ্ছেন। তবে যারা আগাম টিকিট সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছেন তারাও পিছিয়ে নেই। এ ধরনের যাত্রীরা ট্রেনে দাঁড়িয়ে ও ছাদে চড়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, প্রতিটি ট্রেনই সিডিউল অনুযায়ী চলাচল করছে। যাত্রীদের চাহিদানুসারে বিভিন্ন ট্রেনে ১৫ শতাংশ টিকিট সিটবিহীন দেয়া হয়েছে। এদিকে ঢাকা নদী বন্দরে (সদরঘাট) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে যাত্রীদের ঢল নামে। বেশিরভাগ লঞ্চের ডেক ভরপুর হওয়ার পরও ছাদে ও হাঁটার পথে যাত্রীদের ঠাসাঠাসি করে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) মো. গুলজার আলম বলেন, নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী হওয়া মাত্র লঞ্চ ছাড়তে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর উদ্দেশে প্রায় একশ’ লঞ্চ ছেড়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন।
সদরঘাট টার্মিনালে কথা হয় যাত্রী মো. সোহরাব হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিকাল ৩টায় মিরপুর থেকে ইউনাইটেড পরিবহনের গাড়িতে উঠেছি। সদরঘাট পৌঁছতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা বেজেছে। যানজট থাকায় মালামাল নিয়েই ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে হেঁটে সদরঘাট এসেছি। তিনি বলেন, লঞ্চের কেবিন পাইনি। কোনোমতো ডেকে (পাটাতনে) শুয়ে যেতে হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪০ কিলোমিটার যানজট : দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গৌরীপুর পেন্নাই থেকে কাঁচপুর সেতু এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। বুধবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অব্যাহত ছিল এ যানজট। এতে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও বাসযাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। অনেকেই গাড়ি থেকে হাঁটতে থাকেন। তারা ভারি ব্যাগ, মালামাল ও ছোট শিশু এবং বৃদ্ধদের নিয়ে হেঁটে ৮-১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন। দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। মূলত সরু সেতু পারাপারে সময় লাগায় এ জটের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কজুড়ে ব্যাপক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ৬০ কিমি যানজট : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে পশুবাহী ট্রাকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অন্য যানবাহনগুলো ধীরে চলছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। ফলে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে।
মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ভোরে ছেড়ে আসা টাঙ্গাইলসহ উত্তরবঙ্গগামী একাধিক বাস সাড়ে ৬ ঘণ্টা আটকা ছিল মির্জাপুরে। টাঙ্গাইলগামী যাত্রী বকুল আরেফিন জানান, সকাল ১০টায় মহাখালী থেকে নিরালা সুপার সার্ভিসে উঠেছেন। কিন্তু ৬ ঘণ্টা পাড় হলেও তিনি গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারেননি। বগুড়াগামী সুজন মিয়া জানান, তিনি ঢাকা থেকে বেলা ১১টায় হানিফ পরিবহনে উঠেছেন। কিন্তু ৬ ঘণ্টা ধরে মির্জাপুরের পাকুল্লা যানজটে আটকা পড়ে আছেন।
টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট তৌফিক ইফতেখার বিন নাসির জানান, এমনিতেই অতিরিক্ত গাড়ির চাপ রয়েছে। পশুবাহী ট্রাকের সংখ্যা অনেকগুণ বেড়ে গেছে। এছাড়াও দক্ষিণ অঞ্চলের যানবাহন এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করায় বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে দীর্ঘ সময় গাড়ি থেমে থাকছে না। মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্তসংখ্যক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।
ফেরিঘাটেও ভোগান্তি : গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের দৌলতদিয়া অংশে ১ ও ৪নং ঘাট দিয়ে কোনোমতে ফেরি সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে। ৩নং ঘাটটি বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে চালু করা হলেও আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আবারও তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ২নং ঘাটটি গত ৫ দিন আগে নদীতে ডুবে গেছে। ফেরি ঘাটের সমস্যার কারণে যাত্রী, কোরবানির পশু ও পণ্য পারাপার চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে আছে।
দৌলতদিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জানান, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গরুবাহী ট্রাকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। এতে কিছু যাত্রীবাহী বাস ঘাট এলাকায় আটকা পড়ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ফেরি থাকলেও ঘাট সমস্যায় যানবাহন পারাপারে অসুবিধা হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার, জানান, শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটের নাব্য সংকট কিছুটা দূর হয়েছে। চ্যানেলগুলোতে এখন সাত থেকে নয় ফুট পানি রয়েছে। রো রো ফেরিসহ মোট ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। তবে রো রো ফেরিগুলো পুরো লোড নিতে পারছে না। দীর্ঘ এক কিলোমিটার এলাকা ওয়ানওয়ে বা একমুখীভাবে ফেরি চলাচল করায় পারাপারে সময় লাগছে বেশি। বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শাহ খালেদ নেওয়াজ জানান, ড্রেজিংয়ের ফলে চ্যানেলের গভীরতা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের কাছে একটি জায়গায় রো রো ফেরিগুলো এখনও নদীর তলদেশ ঘেঁষে ঘেঁষে চলছে। এতে ফেরির প্রপেলারসহ ইঞ্জিনের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
ঈদের আগে-পরে ট্রাক-লরি চলাচল বন্ধ : যানজট নিরসন ও যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানের সুবিধার্থে ঈদের আগের ৩ দিন এবং পরের ৩ দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্ট সামগ্রী, ওষুধ, কাঁচা চামড়া এবং জ্বালানি বহনকারী যানবাহনগুলো এর আওতামুক্ত থাকবে। বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে ফিটনেসবিহীন যানবাহনে কোরবানির পশু পরিবহন উৎসমুখে নিয়ন্ত্রণে মাঠ প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কন্ট্রোল রুম চালু : ঈদের ঘরমুখো যাত্রীদের সড়ক পথের সমস্যা মনিটরিংয়ে আজ শুক্রবার থেকে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এলেনবাড়ির সদর দফতরে স্থাপিত এ কন্ট্রোল রুম ঈদের পর ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চালু থাকবে। কন্ট্রোল রুমের নম্বরগুলো হচ্ছে- ৯১৩০৬৬২, মোবাইল নম্বও : ০১৯৬৬৬২২০১৯ ও ০১৭৩০৭৮২৯৪৬।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.