মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও’র সাবেক মেয়র রিচার্ড কেনানের বিরুদ্ধে এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৩ সালের ওই ঘটনা আদালতের মাধ্যমে গোপনে নিষ্পত্তি করেন কেনান। কিন্তু আদালতের রেকর্ড বুক থেকে এ ঘটনা ফের সামনে এসেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে আদালতের নথি থেকে ওই ঘটনার বিশদ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আদালতের রেকর্ডে দেখা গেছে, ওই শিশুকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন ৬৫ বছর বয়সী কেনান। তবে তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, তিনি জোর করে কিছু করেননি। ওই শিশু স্বেচ্ছায় তার সঙ্গে মিলিত হয়েছিল। ২০১৩ সালে যখন রিচার্ড কেনান ওই শিশুকে ধর্ষণ করেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র চার বছর। এতো ছোট্ট শিশু কিভাবে যৌনকাজে স্বেচ্ছায় সাড়া দিলো, আদালতও ধর্ষণের স্বীকারোক্তি পাওয়ার পর কেন তাকে মুক্তি দিলেন, তা নিয়েই যতো আলোচনা। আদালতের নথি থেকে জানা গেছে, ধর্ষণের পর রিচার্ড কেনান বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি, তার স্ত্রী ও একজন পাদ্রির সঙ্গে কথা বলেন। পরে সেসব আলোচনায় আদালতে নথিভুক্ত হয়। আদালতে কেনান নিজেকে ‘বিশ্বাসী মানুষ’ দাবি করেছেন। তবে শুধু আগস্ট মাসেই তার বিরুদ্ধে ৮টি যৌন হয়রানি, ৮টি ধর্ষণ ও চারটি ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ এসেছে। আদালতের নথির বরাতে ট্রাম্বাল কান্ট্রি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রসিকিউটর অ্যাটর্নি গ্যাব্রিয়েল উইল্ডম্যান জানান, শিশু ধর্ষণের বিষয়ে কেনানের মুখোমুখি হয়েছিলেন তার স্ত্রী। সেখানে তিনি অকপটে স্বীকার করেন, ‘হ্যাঁ, আমি তার সঙ্গে মিলিত হয়েছি।’ এরপর রিচার্ড কেনানকে ওহাও’র ট্রাম্বাল মেমোরিয়াল হাসপাতালের মানসিক ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখান থেকে পরে তাকে রিভার বেন্ড ট্রিমমেন্ট সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এরই মধ্যে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে কেনান জানান, ওই বালিকা তার সঙ্গে স্বেচ্ছায় যৌনকর্মে অংশ নেয়, যেটি তিনি স্থানীয় এক পাদ্রির কাছে গিয়ে স্বীকার করেন। পাদ্রিকে কেনান ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে বলেন, ওই শিশুটি যখন তার সামনে দিয়ে বাথরুমে যাচ্ছিল, তখনই তার সঙ্গে মিলিত হই। তবে তারা আগে পরস্পরের পরিচিতি ছিল কি না এটা এখনও স্পষ্ট না। ঘটনাটি ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরের, কেনান তার আগে ওহাইও’র উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ছোট্ট শহর হাবার্ডের মেয়রের দায়িত্ব ছিলেন। এরপর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে আদালত এই যৌন হয়রানির মামলার নিষ্পত্তি করেন। আদালতের অনলাইন রেকর্ডে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১৮ আগস্ট কেনানকে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিনই তাকে জামিন দেয়া হয়। তবে এসব বিষয়ে কেনানের অ্যাটর্নি জে জিরাল্ড ইনগ্রাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তার সহকারী অ্যাটর্নি উইল্ডম্যানও বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। ডেমোক্রেট নেতা কেনান ২০১০ সালের জানুয়ারিতে মেয়র হিসেবে শপথ নেন। তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। মেয়রের আগে কেনান কাউন্সিলর ছিলেন। মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে কেনান এক সাক্ষাৎকারে ভিনডিকেটর পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি আমার শহরের প্রতি যত্নশীল। আমি এখানে আমার জনগণের অন্তরের প্রতিধ্বনি করবো।’ তবে শিশু ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর কেনান বলেছেন, এখন থেকে তিনি তার জীবনকে যীশু খ্রিস্টের জন্য উৎসর্গ করেছেন। আর এই সিদ্ধান্তই তার জীবনকে বদলে দিয়েছে। তবে বিপত্তি বেঁধেছে এই মামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী কেনানের স্ত্রীকে নিয়ে। কারণ কেনান শিশুকে ধর্ষণের কথা তার স্ত্রীর কাছে স্বীকার করেছেন, যেটি আদালতের রেকর্ডেও আছে। ফলে আগামী এপ্রিলে এ বিষয়ে আবারও আদালতে শুনানি হবে। ওহাও’র আইন অনুযায়ী, শিশু ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হলে রিচার্ড কেনানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.