এ বছরের জুনে অরল্যান্ডোর একটি নাইট ক্লাবে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছিল ৪৯ জন নারী-পুরুষ। আহত হয়েছিল ৫৩ জন। সে ঘটনার পেছনে ছিল ওমর মতিন নামের ২৯ বছর বয়সী এক আফগান-আমেরিকান যুবক। ওই ঘটনার চার মাস পর গত রোববার নিউইয়র্ক শহরে দুটি এবং নিউজার্সিতে একটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। কেউ নিহত হয়নি, আহত হয়েছে ২৯ জন। এ ঘটনার জন্য পুলিশ আহমাদ খান রাহামি নামের ২৮ বছর বয়সী এক আফগান-আমেরিকান যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। জানা গেছে, রাহামি ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রথমে পাকিস্তান এবং পরে আফগানিস্তানে কিছু সময় অতিবাহিত করেন। পুলিশের সন্দেহ, ওই সময় জঙ্গি মতবাদে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। রাহামির একাধিক বন্ধু ও প্রতিবেশী জানিয়েছেন, পাকিস্তান থেকে ফিরে আসার পর হঠাৎ অতিরিক্ত ধার্মিক হয়ে ওঠেন তিনি। যে দ্রুততায় পুলিশ ও সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা রাহামিকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হন, তা সব মহলেই প্রশংসা অর্জন করেছে। তবে উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হলেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোববারের বিস্ফোরণের সময় মিনেসোটায় এক নির্বাচনী সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক শহরে বোমাবাজি হয়েছে।
তখন পর্যন্ত পুলিশ বোমাবাজি বিষয়ে কোনো কথা বলেনি বা এটি একটি সন্ত্রাসী ঘটনা—সে কথাও ইঙ্গিত করেনি। ট্রাম্প দাবি করেন, পুলিশ বলার আগেই তিনি সঠিকভাবে বোমার ঘটনাটি ধরতে পেরেছিলেন। পরদিন সোমবার সকালে ট্রাম্প মন্তব্য করেন, ‘আমার টিভির সংবাদপাঠক হওয়া উচিত ছিল’।
পুলিশ সফলভাবে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারে সক্ষম হলেও ট্রাম্প পুলিশের কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ফক্স টিভির সঙ্গে এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশ খুবই দক্ষ, তারা ঠিকই জানে, এ ধরনের কাজ কারা করতে পারে। কিন্তু তাদের তো নিজের কাজ করতে দেওয়া হয় না। তারা লোকের ধর্ম বা বর্ণ দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে চায় না, এ নিয়ে তাদের কেউ অভিযোগ করুক, তারা সেটা চায় না।’ একই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করেন। কারণ, তারা ধর্ম বা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে অপরাধী চিহ্নিত করতে সক্ষম। তিনি এমন কথাও বলেন, কে অপরাধী, তা জানা সত্ত্বেও পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। কারণ, তারা কোনো রাজনৈতিক বিতর্ক চায় না। ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েলে কাউকে যদি সন্দেহজনক মনে হয়, পুলিশ তাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আমাদের দেশে পুলিশ রাজনৈতিকভাবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চায়।’
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনও নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির ঘটনাকে বোমাবাজি হিসেবেই বর্ণনা করেন। তবে কে অপরাধী, সে কথা বলার আগে অতিরিক্ত তথ্যের জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে হিলারি দাবি করেন, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে তিনিই একমাত্র প্রার্থী, যে সন্ত্রাসীদের ঘায়েল করার ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত। ট্রাম্পের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নির্বাচনী বাগাড়ম্বর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া ঠিক হবে না। ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী বক্তব্য আইএসকে সাহায্যই করবে।
হিলারি বলেন, ‘আমাদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার মোকাবিলায় আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি আমাদের যে মূল্যবোধ, তা-ও আমাদের রক্ষা করতে হবে। উভয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা সক্ষম।’
সন্ত্রাস প্রশ্নে একদিকে দৃঢ়তা, অন্যদিকে সতর্কতা অবলম্বনের যে রণকৌশল হিলারি অনুসরণ করছেন, ট্রাম্প তাকে দুর্বলতা বলে পরিহাস করেন। ফ্লোরিডায় এক সভায় ভাষণে তিনি ইসলামিক স্টেট ও মুসলিম সন্ত্রাসীদের মধ্যযুগীয় বলে বর্ণনা করেন। ওবামা বা হিলারি কেউই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম নন। ট্রাম্প মন্তব্য করেন, আইএস হিলারিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায়। কারণ, তিনি দুর্বল।
সন্ত্রাস এ দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে এখনো একটি কেন্দ্রীয় বিষয়। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পিউ রিসার্চের এক জনমত জরিপ অনুসারে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ মনে করে, আমেরিকার বিরুদ্ধে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা আগের চেয়ে বেশি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.