যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে দুই প্রার্থীর প্রথম বিতর্কের পর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের জনসমর্থন বেড়েছে। গত সোমবারের ওই বিতর্কে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সহজেই ধরাশায়ী করেন হিলারি। বিতর্কের পর রাজনীতিবিষয়ক পত্রিকা পলিটিকো গৃহীত এক জনমত জরিপ অনুসারে জাতীয় পর্যায়ে ট্রাম্পের তুলনায় ক্লিনটন এই মুহূর্তে তিন পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। এর আগে তাঁরা হয় সমান সমান ছিলেন, অথবা ট্রাম্প এক পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। তবে এই বিতর্কের পর মাত্র ৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন, কাকে ভোট দেবেন সে প্রশ্নে তাঁদের পূর্বসিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়েছে। বিতর্কের সফলতা যে হিলারিকে সামান্য হলেও অধিক গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে, তার অন্য এক প্রমাণ এসেছে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের রক্ষণশীল পত্রিকা দ্য অ্যারিজোনা রিপাবলিক থেকে। ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পত্রিকা তার দীর্ঘ ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন দিয়েছে। পত্রিকাটি এক সম্পাদকীয় মন্তব্যে বলেছে, ‘আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য একমাত্র যোগ্য প্রার্থী হলেন হিলারি। বর্তমানে দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের সামনে যে জটিল সমস্যাগুলো রয়েছে, তার মোকাবিলার জন্য দরকার একজন ঠান্ডা মাথার লোক, যিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের আগে সব দিক ভাবনাচিন্তা করে দেখবেন। হিলারি ঠিক কাজটিই করবেন, ট্রাম্প নন।’ পত্রিকাটি বলেছে, প্রেসিডেন্ট হতে হলে যে মেজাজ বা টেম্পারামেন্ট চাই, হিলারির তা রয়েছে, ট্রাম্পের নেই।
একজন রক্ষণশীল রিপাবলিকান নেতার সমর্থনও পেয়েছেন হিলারি। তিনি হলেন ভার্জিনিয়ার সাবেক সিনেটর জন ওয়ার্নার। তিনি নিজে তাঁর এই সিদ্ধান্তের এ কথা এখনো প্রকাশ্যে জানাননি। তবে হিলারির প্রচার দপ্তর থেকে সে কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। হিলারির রানিং মেট, ভার্জিনিয়ার চলতি সিনেটর টিম কেইনকে তিনি জানিয়েছেন, রিপাবলিকান হলেও ট্রাম্পকে নয়, হিলারিকেই তিনি ভোট দেবেন।
তবে দুই প্রার্থীর বিতর্কের পর নতুন বিতর্ক জন্ম দিয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হাওয়ার্ড ডিন। তিনি মন্তব্য করেছেন, বিতর্কের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত কোকেন গ্রহণ করেছিলেন। বিতর্কের সময় ট্রাম্প যে বারবার নাক টানছিলেন, সেটাই তার কারণ। বড় কোনো অনুষ্ঠানের আগে আত্মবিশ্বাস বজায় রাখার জন্য কেউ কেউ কোকেন নিয়ে থাকে।
মঙ্গলবার রাতে এমএসএনবিসি টিভিতে এক আলোচনায় ডিন কিঞ্চিৎ রহস্যময় হাসি দিয়ে ডিন বলেন, ‘আমি কি মনে করি, ৭০ বছর বয়স্ক ট্রাম্পের কোকেন সমস্যা রয়েছে? সম্ভবত নয়। তবে এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করে জানা উচিত কোকেন নিয়ে তাঁর কোনো সমস্যা রয়েছে কি না।’ উল্লেখ্য, ডিন পেশায় একজন চিকিৎসক।
ডিনের এ মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে বাদানুবাদের সৃষ্টি করেছে। একাধিক রিপাবলিকান নেতা ও ট্রাম্পের সমর্থক দাবি তুলেছেন, কোনো প্রমাণ ছাড়া এমন অভিযোগ ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার কাছ থেকে আসা দুর্ভাগ্যজনক। হিলারি ক্লিনটনের উচিত হবে অবিলম্বে এই অভিযোগ থেকে নিজেকে বিযুক্ত করা ও ডিনের কথার সমালোচনা করা।
ট্রাম্পের প্রচারশিবির থেকে বলা হয়েছে, ডিনের এই মন্তব্য কেবল মিথ্যাই নয়, তা নোংরামির সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
ট্রাম্প নিজে বলেছেন, তিনি মোটেই নাক টানছিলেন না, তাঁর ঠান্ডাও লাগেনি। তবে কোকেন নিয়ে তাঁর কোনো সমস্যা আছে কি না, সে কথা তিনি বলেননি বা সে প্রশ্ন তাঁকে করাও হয়নি। উল্লেখ্য, ট্রাম্প কোনো ধরনের মদ্যপান করেন না। সে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ রাজনৈতিক মহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.