জয়পুরহাটের কালাইয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ কাজ ৭ বছর আগে সমাপ্ত হওয়ার পর থেকে চলছে উদ্বোধনের অপেক্ষায়। আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। নীতিমালা অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণসহ দরপত্রের মাধ্যমে ৯৫ ভাগ নির্মাণ কাজ সম্পন্নের পর হঠাৎ করে ২০১০ সালে জমির মালিকের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত সেই সময় ৩ মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। স্থগিতাদেশের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে জমির মালিক ওই মামলা আদালত থেকে প্রত্যাহার করার পর আজও আলোর মুখ দেখেনি ফায়ার সার্ভিসের ওই ভবনটি। উদ্বোধনের অপেক্ষায় অতিবাহিত কয়েছে বিগত ৭ বছর। জানা গেছে, কালাই উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণে উপজেলার থুপসারা মৌজার ৩৮৬ দাগে ৩৩ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয় ২০০৬ সালের ২৭শে মার্চে। জায়গার মূল্য নির্ধারিত হয় ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৮ টাকা। ২০০৭ সালের ৫ই নভেম্বর সরকারের সংশ্লিষ্ট ফান্ড হতে জমির টাকা জমা মালিককে দেয়ার পর দখল বুঝে নেয় সিভিল ডিফেন্স বিভাগ। কিন্তু মূল্য কম হওয়ায় পরে জমির মালিক মনোয়ারা বেগম প্রতি শতক জায়গার মূল্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করে জয়পুরহাট জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। মামলা নম্বর এলএ ৪/০৬-০৭। এদিকে জমি অধিগ্রহণের পর এটি নির্মাণ বাবদ বরাদ্দ মেলে ৭১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৪৪ টাকা। দরপত্র অনুযায়ী জয়পুরহাটের মেসার্স প্রগতি নির্মাণ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নির্মাণ কাজ শুরু করেন ২০০৯ সালের ১৪ই জুন। সে লক্ষ্যে প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্নের পর জমি মালিকের জামাতা মোজাফ্ফর হোসেন জমিটি তার নিজস্ব সংস্থার (এনজিও) নামে ওই জমি লিখা আছে দাবি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ কাজ বন্ধে জন্য জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ৪ কর্মকর্তাকে বিবাদী করে উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালত ২০১০ সালের ৬ই জুন ৩ মাসের স্থগিতাদেশ দিলে ২০১০ সালের ২৩শে আগস্ট জেলা প্রশাসক কাজটি বন্ধের নির্দেশ দেন। কাজ বন্ধের পর ৩ মাস স্থগিতাদেশের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় ২০১০ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর। কিন্তু এ নিয়ে আদালত থেকে পরে আর কোনো নির্দেশনা না আসেনি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের দাবি, স্থগিতাদেশ অতিক্রান্তের পর পুনরায় কাজ শুরুর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দফায় দফায় চিঠি দেয়া হলেও কোনো নির্দেশনা না পেয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। রিট আবেদনকারী মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘জায়গাটি তার শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের নামে দেয়ার আগে তাকে দান করেছেন। ফলে ওই জায়গায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে তিনি উচ্চ আদালতে রিট করে ৩ মাসের স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। কিন্তু পরে এলাকার স্বার্থে এবং অনেকের পরামর্শ অনুযায়ী আদালত থেকে ওই মামলা প্রত্যাহারও করেছেন তিনি। এর আগে ওই জায়গা নিয়ে শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম মূল্য বেশি চেয়ে জেলা জজ আদালতে যে মামলা করেছিলেন সে মামলাও অনেক আগেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখনত আর কেনো বাধা থাকার কথা নয়। ঠিকাদার আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সরবরাহকৃত স্থাপত্য ও অবকাঠামোগত নকশা অনুযায়ী কাজ শেষ করতে দরপত্রের চেয়ে অধিক পরিমাণ কাজ করা হয়েছে। এতে তার প্রায় ৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। যা সাত ব বছরেও আমি পাইনি। এছাড়া কাজ বুঝে নেয়ার জন্য নির্মাণাধীন ফায়ার স্টেশনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বার বার আবেদন জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। কাজ বুঝে না নেয়ার কারণে ওই ভবন পাহারা দিতে অতিরিক্ত ব্যয়ও হচ্ছে আমার। জয়পুরহাট গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘মামলা প্রত্যাহার করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আদালতের কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি, তারপর ৩ মাসের স্থগিতাদেশের বিষয়ে আইনি বাধা পরিষ্কারভাবে জানতে না পেরে ভবনটি বুঝে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ সাত বছর ধরে কালাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ কাজের ৯৫ ভাগ সম্পূর্ণের কথা স্বীকার করে জেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উপসহকারী পরিচালক মনোরঞ্জন সরকার বলেন, ‘উচ্চ আদালতে মামলার অবস্থান জেনে খুব শিগগিরই ভবনটির নির্মাণ কাজ বুঝে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.