শুক্রবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের গৌরীপুরে নিহত ৭ জনের মধ্যে দুজন কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা। তারা হলেন পিকআপ মালিক শহীদুল ইসলাম (৪০) ও পিকআপচালক নূরুল ইসলাম (৩০)। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এই দুজনের মৃত্যুতে বিপর্যয় নেমে এসেছে দুটি পরিবারে। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুজনেরই লাশ এলাকায় নিয়ে আসার পর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ। দুজনেরই জানাজা হয় সদরের পৃষ্ঠা ২০ কলাম ১ লতিবাবাদ পূর্বপাড়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে। এছাড়া একই দুর্ঘটনায় নিহত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান (২৭) করিমগঞ্জ থানায় কর্মরত ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার খুকশিয়া গ্রামের গোলাম মোহাম্মদ আব্দুল হাইয়ের ছেলে। নববিবাহিত এই পুলিশ কনস্টেবল গত ঈদের পর ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন বিয়ে করতে। ১৬ই সেপ্টেম্বর তিনি বিয়ে করেন। শনিবার করিমগঞ্জে কর্মস্থলে যোগদান করার জন্য শুক্রবার ফিরছিলেন। কিন্তু মেহেদির রং মুছে যাওয়ার আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তাকেও। গৌরিপুরের শিবপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনায় এই তিনজন ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিনজন এবং নেত্রকোনার একজন মারা গেছেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ময়মনসিংহের গৌরিপুরের শিবপুর এলাকায় একটি ধানবাহী ট্রাকের সঙ্গে ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জগামী যাত্রীবাহী পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালে ৭ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে পিকআপ মালিক শহীদুল ইসলাম ও পিকআপ চালক নূরুল ইসলামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের মুকসেদপুর গ্রামে। শনিবার বাদ জোহর নিজ এলাকার মসজিদে শহীদুল ইসলাম ও নূরুল ইসলামের জানাজা সম্পন্ন করে দাফন করা হয়। তবে নিহতদের দুই পরিবারসহ এলাকায় এখন যেন শোকের মাতম। এদের হারিয়ে পরিবার দুটির পথে বসার উপক্রম। কারণ, এরাই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। শহীদুল ইসলাম রেখে গেছেন তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক শিশুপুত্র। স্ত্রী মমতা তার ৪০ দিন বয়সী শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। অন্যদিকে নূরুল ইসলাম রেখে গেছেন মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে হারানোর শোকে বৃদ্ধা মা আম্বিয়া খাতুন নির্বাক। এখন চলবে কি করে, এই দুশ্চিন্তায় যেন পরিবারগুলোর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। এদিকে করিমগঞ্জ থানার ওসি মো. জাকির রব্বানী জানান, কনস্টেবল মনিরুজ্জামান বিয়ে করার জন্য ঈদের পর ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। গত ১৬ই সেপ্টেম্বর তিনি বিয়ে করেছেন। ছুটিশেষে শনিবার তিনি কর্মস্থলে যোগদানের জন্য শুক্রবার করিমগঞ্জ আসছিলেন। কিন্তু গৌরিপুর থেকেই লাশ হয়ে তাকে আবার চিরকালের জন্য বাড়ি ফিরতে হলো। বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় বিধবা হলেন তার স্ত্রী।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.