রাজধানীর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা। ধনাঢ্য ব্যক্তির বাড়ি। চারিদিকে সিসি ক্যামেরা। নিরাপত্তার কড়া প্রহরা। দেয়ালে কাঁটাতারের বেষ্টনী। তবু চোর নাছোড়বান্দা।
তাকে চুরি করতেই হবে, তাও আবার ‘পাখি’। অবশ্য মূল্যবান পাখি, দাম সাত লাখ টাকা। যে কথা সেই কাজ। চুরি করতে কয়েক দিনের রেকি, তারপর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢুকে পড়ে চোর। গভীর রাতে দেয়াল টপকে চোর তার মিশনও সফল করে। অতঃপর থানায় পাখি চুরির মামলা। প্রভাবশালী ব্যক্তির পাখি হওয়ায় নানামুখী চাপে থানা পুলিশকে চোর ধরতে ব্যাপক তৎপরও হতে হয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হয় চোর। একপর্যায়ে গ্রেফতার করা হয় পাখিচোর রাসেলকে। উদ্ধার করা হয় পাখি। এখানেই শেষ নয়, আজ তার পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানিও হওয়ার কথা। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে গেল সপ্তাহে। মামলা হয় ক্ষিলখেত থানায়।
আলোচিত পাখি চুরির এ ঘটনা ঘটে গত ২৭ সেপ্টেম্বর। মামলা হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। দ্রুত পাখি উদ্ধারসহ চোর ধরতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে থানা পুলিশ।
পাখি উদ্ধারে টানা অভিযান চলতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ সফল হয়। ধরা পড়ে পাখির ক্রেতা-বিক্রেতা দু’জনই। জিজ্ঞাসাবাদে তারা অকপটে ঘটনার আদ্যোপান্ত স্বীকারও করে। অবশ্য এর আগে চোর শনাক্ত করতে বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়।
পুলিশ জানায়, নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম মিথুন তার বাড়িতে বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান বিদেশী পাখি পোষেন। ২৮ সেপ্টেম্বর কাকা ডাকা ভোরে তার শখের পোষা পাখির খাঁচার কাছে গিয়ে হতচকিত হয়ে যান। তিনি দেখতে পান- একটি পাখিও খাঁচায় নেই। খাঁচার এক পাশ কাটা। তিনি বুঝতে পারেন তার মূল্যবান পাখিগুলোর ওপর চোরের হাত পড়েছে। পাখি চুরির এ ঘটনা শফিকুল ইসলাম তাৎক্ষণিক তার পূর্বপরিচিত একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে জানান। এ ছাড়া পাখি উদ্ধারে তিনি খিলক্ষেত থানা পুলিশেরও সহায়তা চান। বাড়ির সিসি ক্যামেরা থেকে পাখি চুরির ভিডিও ফুটেজ জমা দেন থানায়। সেই ফুটেজ থেকে চোরের ছবি প্রিন্ট করা হয়। এরপর চোরকে শনাক্ত করতে থানা এলাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ছবি দেখানো হয়। প্রথমদিকে কেউ চিনতে না পারলেও এক ব্যক্তি ছবি দেখে চোরকে চিনতে পারেন। পুলিশ জানতে পারে চোরের নাম রাসেল ওরফে ‘পাখি রাসেল’। তার বাড়ি খিলক্ষেত থানার পাতিরা এলাকায়। এরপর খোঁজ করতে করতে তার বাড়িতেও পৌঁছে যায় পুলিশ।
খিলক্ষেত থানা পুলিশ জানায়, চোরের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযান চালানো হয়। রাসেলকে গ্রেফতারের জন্য তার বাড়িও ঘিরে ফেলে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সে তার বাড়ির পাশে ঝিলের পানিতে লাফিয়ে পড়ে। ঝিল পাড়ি দিয়ে পালিয়ে যেতেও সক্ষম হয়। কিন্তু তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত থাকে। স্থানীয় সোর্স নিয়োগ করা হয়। আশপাশে সাদা পোশাকে পুলিশ অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে রাত ৩টায় খবর আসে রাসেল তার বাড়িতে ঢুকেছে। তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকে পুলিশ বেশ কয়েকটি পাখিও উদ্ধার করে।
এ প্রসঙ্গে খিলক্ষেত থানার ওসি শহিদুল হক যুগান্তরকে বলেন, চোরকে গ্রেফতার করে থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সে জানায়, বেশ কয়েকটি চোরাই পাখি মাত্র আট হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। পাখিগুলো কিনে নেয় টঙ্গীর আরিচপুর এলাকার পাখি ব্যবসায়ী গোলাপ হোসেন। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী টঙ্গী থেকে গোলাপ হোসেনকেও গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় চার জোড়া বিদেশী লাভ বার্ড, উন্নত প্রজাতির পাঁচ জোড়া কবুতর ও এক জোড়া গ্রে প্যারট। পুলিশ জানায়, উদ্ধারকৃত পাখির মূল্য প্রায় সাত লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার থানা হেফাজতে থাকা পাখিচোর রাসেলের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। রাসেল জানায়, সে মূলত শৌখিন পাখিচোর। ঘটনার কয়েকদিন আগে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকাসংলগ্ন একটি খালে মাছ ধরতে যায়। মাছ ধরার সময় বেশ কয়েকবার পাখির কণ্ঠে মানুষের মতো আওয়াজ শুনতে পায়। আশপাশে বেশ খানিকটা ঘোরাঘুরির পর বাড়িটি শনাক্ত করে। এরপর নেমে পড়ে পাখি চুরির মিশনে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.