দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে অধিষ্ঠিত ছিলেন রাজসিংহাসনে। তার মতো এত দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বের আর কোনো দেশে আর কোনো রাজা সিংহাসনে আসীন থাকতে পারেননি। কেবল দীর্ঘতম সময়ের রাজা-ই নয়, থাইল্যান্ডের জনগণের কাছে ভূমিবল আদুলইয়াদেজ ছিলেন একজন অভিভাবক। সাংবিধানিক রাজতন্ত্র অনুসারে তার হাতে ছিল না খুব বেশি নির্বাহী ক্ষমতা। কিন্তু থাইল্যান্ডের আপামর জনসাধারণের কাছে তিনিই ছিলেন ঐশ্বরিক এক প্রতিনিধি। দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সামরিক বাহিনীর বারবার অভ্যুত্থানের মধ্যে তিনিই ছিলেন সব মানুষের মধ্যে একতার সূত্র। গোটা থাইল্যান্ডকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে সেই রাজা ভূমিবল আদুলইয়াদেজ ৮৮ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেছেন বৃহস্পতিবার। গতকাল তাকেই শেষ বিদায় দিতে ব্যাংককের রাস্তায় ছিল হাজার হাজার মানুষের ঢল। সিরিরাজ হাসপাতাল থেকে রাজা ভূমিবলের মৃতদেহ বহনকারী কফিন যখন রাজপ্রাসাদের পথে প্রদক্ষিণ করছিল রাজধানীর রাস্তাজুড়ে, দুইপাশে জড়ো হওয়া মানুষের চোখে তখন অশ্রুর ধারা। তারা হাজির হয়েছিলেন হাতে ফুল নিয়ে। কারও কারও হাতে ছিল রাজা ভূমিবলের বিভিন্ন বয়সের ছবি। তাকে শেষ বিদায় জানাতে গিয়ে গোটা থাইল্যান্ডই যেন শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে। রাস্তায় দাঁড়ানো প্রায় সব মানুষের পরনে কালো রঙের পোশাক সেই শোকেরই সাক্ষী। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে রাস্তায় প্রিয় রাজার প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অনেকেই অচেতন হয়ে পড়েছেন। তাদের দেয়া হয়েছে চিকিৎসা সেবা। ৭৭ বছর বয়সী ফংশ্রি চমপুনাচ রাজা ভূমিবলের একটি ছবি আঁকড়ে ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন রাজপ্রাসাদের দিকে। তিনি বলেন, ‘প্রাসাদ যত দূরেই হোক আমি হেঁটে যেতে পারবো। তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। আমি জানি না এটা মেনে নিতে পারবো কি না। আমার আশঙ্কা, এর কারণ হলো সামনে কী হবে তা আমি জানি না।’ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন বলেন, ‘এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি।’ গতকাল সিরিরাজ হাসপাতাল থেকে রাজা ভূমিবলের মৃতদেহ রাজপ্রাসাদে আনার সময় এভাবেই শোক জানিয়েছে থাইল্যান্ড। দেশটির সব পত্র-পত্রিকার প্রথম পাতাজুড়েই ছিল রাজাকে হারানোর শোক। সব পত্রিকার অনলাইনও প্রদর্শিত হচ্ছে সাদা-কালো রঙে। রাজার মৃতদেহ রাখা হচ্ছে রাজপ্রাসাদের একটি বিশেষ মন্দিরে। এখানেই আগামী কয়েকদিন ধরে রাজার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন থাই জনগণ। রাজার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হতে পারে আরো মাসখানেক পরে। ততদিন পর্যন্ত তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে। রাজা ভূমিবলের মৃত্যুতে থাই প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ও-চা বৃহস্পতিবারেই এক বছরের শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গোটা থাইল্যান্ড এখন অপরিমেয় বেদনা, গভীর দুঃখ ও স্বজন হারানোর বেদনার মধ্যে রয়েছে।’ এই শোক কাটিয়েও যেন জনজীবন স্বাভাবিক থাকে, সেই আবেদন জানিয়েছেন তিনি। প্রায়ুথ জানিয়েছেন, রাজা ভূমিবলের সন্তান যুবরাজ মহা ভাজিরালংকর্ন হবেন পরবর্তী রাজা। সংসদের পক্ষ থেকে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দায়িত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.