মর্যাদার আসর অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশের অংশগ্রহণটা হয় শুধু নামেই। এর বাইরে এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমস, সাউথ এশিয়ান গেমসসহ বিভিন্ন আসরে প্রত্যাশা থাকে। বিচ গেমসও তার ব্যতিক্রম নয়। অথচ কোটি টাকার বেশি অর্থ খরচ করে পাঁচ ডিসিপ্লিনে অংশ নিয়ে ডানাং বিচ গেমস থেকে একেবারেই খালি হাতে ফিরেছেন ক্রীড়াবিদরা। অলিম্পিকের পর এই আসরটিও যেন কেবল ‘অংশগ্রহণের জন্যই অংশ নেয়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবাক হলেও সত্যি যে, অনেক খেলার প্রশিক্ষণের জন্য দল কক্সবাজারে না গেলেও বাজেটে তা দেখানো হয়েছে। ২০১৪ সালে থাইল্যান্ডের ফুকেট বিচ গেমসেও একই অবস্থা ছিল। আর ভিয়েতনামের ডানাংয়েও তাই। সম্প্রতি সমাপ্ত এশিয়ান বিচ গেমসের পাঁচটি ডিসিপ্লিনের জন্য অনুশীলন এবং অংশ নেয়া বাবদ এক কোটি ২১ লাখ ৯২ হাজার দুইশ’ পঞ্চাশ টাকার বাজেট দেখিয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। এর মধ্যে প্রশিক্ষণখাতে ৫২ লাখ চার হাজার এবং অংশগ্রহণ বাজেট ৬৯ লাখ ৮৮ হাজার ২৫০ টাকা। ১৫ই জুলাই থেকে ৩১শে আগস্ট ঢাকায় ৪৮ দিন এবং ১ থেকে ২০শে সেপ্টেম্বর ২০ দিন কক্সবাজারে পাঁচটি খেলার অনুশীলন দেখানো হয় বাজেটে। যদিও কেবলমাত্র ভলিবল দলই কক্সবাজারে অনুশীলন করেছে। বাকিদের অনুশীলন হয়েছে ঢাকায়। তারপরও সব ডিসিপ্লিনেই খেলোয়াড় ও প্রশিক্ষকদের স্থানীয় এবং কক্সবাজারে যাতায়াত দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে অ্যাথলেটিকসে ১০ হাজার, বাস্কেটবল ৫০ হাজার, ভলিবল ৪০ হাজার, কাবাডি ৭০ হাজার ও হ্যান্ডবল ৯০ হাজার টাকাসহ দু’লাখ ৬০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৬৮ দিনের প্রশিক্ষণে দুজনের দলের অ্যাথলেটিকসে এক লাখ ৪৩ হাজার, ১০ জনের পুরুষ বাস্কেটবলে ছয় লাখ ৬৪ হাজার, ৮ জনের ভলিবলে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার, ১৪ জনের মহিলা কাবাডিতে নয় লাখ ১৬ হাজার এবং ১৮ জনের মহিলা হ্যান্ডবলে ১১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অনুশীলনের ৬৮ দিনের প্রত্যেক দিন একজন ক্রীড়াবিদ ও একজন ক্যাম্প কমান্ডারের দৈনিক খাওয়া ৫০০ টাকা এবং কক্সবাজারে ৬৫০ টাকা দেখানো হয়েছে। আর খেলোয়াড়দের পকেট ও ধৌত ভাতা ২৫০ টাকা এবং স্থানীয় কোচদের দৈনিক সম্মানী দেখানো হয়েছে ৫০০ টাকা করে। অংশগ্রহণ বাজেটের মধ্যে রয়েছে খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও ডেলিগেটদের ৩৫ জনের ইকনোমি ক্লাসের জনপ্রতি ৮০ হাজার টাকা করে এবং শেফ দ্য মিশনের জন্য বিজনেস ক্লাসের দু’লাখ ২০ হাজার টাকা বিমান ভাড়াসহ খরচ দেখানো হয়েছে ৩০ লাখ ২০ হাজার টাকা। ভিলেজ ভাড়া জনপ্রতি ৫০ মার্কিন ডলারে ৩৩ জনের ১২ দিনের ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকা। অন্য ডেলিগেটদের হোটেল ভাড়া ও খাবার জনপ্রতি ২৭৫ মার্কিন ডলার হারে ১০ দিন ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা। ক্রীড়া পোশাক বাবদ জনপ্রতি আট হাজার টাকা করে ৩৬ জনের ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এছাড়াও ২৩ জন খেলোয়াড়ের জার্সি ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম ক্রয় দেখানো হয়েছে জনপ্রতি তিন হাজার ৫০০ টাকাসহ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা। উপহার সামগ্রী বাবদ ৫০ হাজার টাকা এবং অবাক করা বিষয় যে, অপ্রত্যাশিত খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এছাড়াও ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে দাপ্তরিক, প্রশাসনিক, খেলোয়াড়দের মতবিনিময় এবং উৎসাহমূলক বিভিন্ন সভা ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন দেখিয়ে। অথচ যাওয়ার আগে বিওএ কোনো প্রকার সংবাদ সম্মেলনেরই আয়োজন করেনি। এত পরিমাণ অর্থ খরচ দেখিয়েও পদকের খাতা শূন্য বাংলাদেশের। বিওএর প্রত্যাশা ছিল, অন্তত মহিলা কাবাডি দল এই গেমস থেকে পদক আনতে পারবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে একেবারে শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে ফাতেমা আক্তার পলিদের। তাই বিচ গেমসের প্রথম তিন আসরে একটি ব্রোঞ্জপদক পাওয়া গেলেও ধীরে ধীরে এই গেমসটিও বাংলাদেশের জন্য অংশগ্রহণই বড় কথা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.