উপমহাদেশের উইকেট স্পিনারদের স্বর্গ হিসেবেই পরিচিত। এ অঞ্চলে স্পিনাররাই যুগ যুগ ধরে রাজত্ব করে আসছে। যখন এ মহাদেশের বাইরের কোনো দল এখানে খেলতে আসে তাদের অন্যতম ভয় থাকে স্পিন নিয়ে। বিশেষ করে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো বড় বড় দলগুলোকে স্পিন আক্রমণের সামনে অসহায় দেখায়। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। অবশ্য গেলো দুই বছর বাংলাদেশ দলের পেস বিভাগ দূর্দান্ত সফল। বিশেষ করে ওয়ানডে ও টি- টোয়েন্টি ক্রিকেটে। এজন্য অবশ্য দলের অধিনায়ক পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজাসহ তরুণ সৈনিকদের ভূমিকা অন্যতম। তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন, রুবেল হোসেন ছাড়াও মোস্তাফিজের মতো জাদুকরি পেস বোলাররাই সাফল্য এনে দিয়েছে। কিন্তু শেষ দু’টি টেস্টে মোস্তাফিজের বোলিং নৈপুণ্যে পেসারদের সাফল্যের পাল্লা একটু ভারী হলেও এখনও সব সেরা সাফল্য স্পিনারদেরই দখলে। টাইগারদের ৯৩ টেস্টে স্পিনার সাকিব আল হাসান ১৪৭ উইকেট নিয়ে সবার উপরে। এর মধ্যে ১০৪ উইকেটই দেশের মাটিতে নিয়েছেন। ১০০ উইকেট নেয়া স্পিনার মো. রফিকের অবস্থান দ্বিতীয়। ৭৮ উইকেট নিয়ে মাশরাফি তৃতীয় ও ৭২ উইকেট নিয়ে শাহাদাত চতুর্থ স্থানে। টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ১০ বোলারের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ৩ পেসার। এমনকি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরে বাইরে ৮ টেস্টে সাকিবই সেরা। তাই নিজেদের সেরা অস্ত্র ব্যবহার করতে দলে জায়গা হয়েছে ৬ স্পিনারের। যদিও এই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হচ্ছে না। অবশ্য এক নির্বাচক জানালেন, ‘আমরা প্রথমে আমাদের সেরা শক্তিতে বিশ্বাস রাখতে চাই।’ অন্যদিকে পরিসংখ্যানও বলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র বা জয় পেতে হলে স্পিন আক্রমণের বিকল্প নেই। যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র’র মুখও দেখেনি টাইগাররা। কিন্তু দেশের মাটিতে এবার মুশফিকুর রহীম বাহিনীর সুযোগ এসেছে সেই অধরা স্বপ্নপূরণ করার। ২০০৩ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪টি টেস্ট খেলেছে দেশের মাটিতে। এর মধ্যে ২ টেস্টে সর্বোচ্চ ১০ উইকেট নিয়েছেন মো. রফিক। এরপর সমানসংখ্যক টেস্টে সাকিবের শিকার ৯ উইকেট। ৮ উইকেট নিয়ে মাশরারফি তিন নম্বরে, ৭ উইকেট নিয়ে আবদুর রাজ্জাক চার নম্বরে, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও এনামুল হক জুনিয়র ৪ উইকেট নিয়ে রয়েছেন পাঁচ ও ছয় নম্বরে। এই চার টেস্টে ১২ জন স্পিনার বল করেছেন। এর মধ্যে পাঁচ স্পিনার নিয়ে নেয় ৩৪ উইকেট। যার মধ্যে এ আসরে খেলছেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। সাকিব আল হাসান ৫ উইকেট নিয়ে শীর্ষে। শুধু তাই নয়, তিনি এই মাঠে ১২ টেস্টে ৪১ উইকেট নিয়ে সবার উপরে। তারপর আছেন আবদুর রাজ্জাক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ২০১০ সালের সেই ম্যাচে মাত্র ১ উইকেট পেয়েছিলেন পেসার রুবেল হোসেন। দেশের মটিতে ইংলিশদের বিপক্ষে চার টেস্টে সেরা পাঁচ বোলারের মধ্যে একজনই পেসার তিনি মাশরাফি। কিন্তু ইনজুরির কারণে তিনি টেস্ট ছেড়েছেন বেশ আগেই। ২০০০ সালে টাইগারদের টেস্ট অভিষেকের পর সেটি দেশে হোক আর দেশের বাইরে পরিসংখ্যান বলে স্পিনাররাই সফল। এরমধ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও টেস্টে সফল টাইগার স্পিনাররাই। তাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ম টেস্টে কেন স্পিন শক্তি দেখাবে না বাংলাদেশ! ২০শে অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচ। ১৪ মাস আগে শেষ টেস্টে দল থেকে বাদ পড়েছে ছয় জন ক্রিকেটার। এর মধ্যে দুই পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও মো. শহীদকে ইনজুরির কারণে দলে রাখা যায়নি। কিন্তু তাদের পরিবর্তে দলে আসার মতো প্রতিভাবান পেসার বলতে ছিলেন তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন, আল আমিন হোসেন। কিন্তু ইনজুরির কারণে তাসকিনকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না দলের প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে। রুবেল ও আল আমিন হোসেনের টেস্ট বোলিংয়ের গড় ভীষণ খারাপ। যে কারণে লীগে দারুণ পারফরম্যান্স করা কামরুল ইসলাম রাব্বির সঙ্গে বহুদিন পর জাতীয় দলে ফেরা শফিউল ইসলামকে রাখা হয়েছে। ৮ টেস্টে ৫০.৫৩ গড়ে ১৫ উইকেট নেয়া শফিউলকে রাখার কারণ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানেড সিরিজে বল হাতে দারুণ ছন্দে ছিলেন তিনি। দলে স্পিনার বাড়ানোর ও পেসার কম রাখার দু’টি কারণ অবশ্য চিন্তা করেছেন টিম ম্যানেজম্যান্ট ও নির্বাচকরা। প্রথমতঃ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জিততে না পারলেও অন্তত ড্র করা যে জন্য চাই দলে বেশি ব্যাটসম্যান। তাই হয়তো দুই পেসার না খেলিয়ে দেখা যেতে পারে এক পেসারকে। আর সাকিব আল হাসান দারুণ স্পিনের সঙ্গে ভাল ব্যাটও চালান। মাহমুদুল্লাহ ও শুভাগত হোম, মেহেদী হাসান মিরাজও ব্যাটের সঙ্গে বোলিংটা দারুণ করেন। টেস্টে ১০ বোলারের মধ্যে মাহমদুল্লাহ রিয়াদের অবস্থান সাত নম্বরে ২৭ টেস্টে ৩৭ উইকেট নিয়েছেন ৪৫.৪০ গড়ে। সাব্বির রহমান ব্যাটিংয়ের সঙ্গে দারুণ লেগ স্পিন করেন। প্রস্তুতি ম্যাচে তার প্রমাণও রয়েছে। এছাড়া সৌম্য সরকারের ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পেস আক্রমণটাও কাজে লাগানো যাবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.