বছরের শুরুতে বেশ আশা জাগানিয়া একটি অবস্থার জানান দিয়েছিল অডিও ইন্ডাস্ট্রি। ইংরেজি নববর্ষ, ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখকে ঘিরে অডিও কোম্পানিগুলো রেকর্ডসংখ্যক অ্যালবাম প্রকাশ করে সিনিয়র ও চলতি প্রজন্মের শিল্পীদের। এসব অ্যালবাম থেকে বেশ কিছু গান শ্রোতাপ্রিয়তা পায় মিউজিক ভিডিওর বদৌলতে। এরপর রোজার ঈদে গত কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক অ্যালবাম ডিজিটালি প্রকাশ পায়। জনপ্রিয়তার কাতারে আসে মমতাজ, আসিফ আকবর, হাবিব, তাহসান, আরফিন রুমি, ইমরান, মিনার, হৃদয় খান, কাজী শুভ, শফিক তুহিন, প্রীতম হাসান, তানজীব সারোয়ার, শাওন গানওয়ালা, পূজা, মিলনদের গাওয়া গান। বিশেষ করে চলতি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলোও যোগ দেয় অ্যালবাম প্রযোজনা ও প্রকাশনায়। যার ফলে অনেকেই মনে করেছিলেন কোরবানির ঈদ তথা বছরের শেষ জুড়েই থাকবে অডিও ইন্ডাস্ট্রির চাঙ্গাভাব। দীর্ঘ সময় পর শিল্পী, গীতিকার, সুরকারদের মধ্যেও প্রশান্তি আসে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ইন্ডাস্ট্রির সেই গতিতে এরই মধ্যে ভাটা পড়েছে। হতাশা জেগেছে বছরের শেষে এসে। রোজার ঈদের পর পরই ঢিমেতালে চলতে থাকে গতি। আর রোজার ঈদের তুলনায় গেল কোরবানি ঈদে একেবারেই কমসংখ্যক অ্যালবাম ও গান প্রকাশ করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। এদিকে নতুন খবর হলো হঠাৎ করেই বর্তমানে বেশিরভাগ অডিও কোম্পানি তাদের প্রকাশনা অনেকটাই বন্ধ রেখেছে। অনেকে আবার একেবারেই হাতেগোনা অ্যালবাম প্রকাশের চিন্তা করছেন। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রমতে অডিও কোম্পানিগুলোর এই ধীরগতি চলবে কমপক্ষে আরও দুই মাস। অনেকেই এই অবস্থার জন্য অডিও কোম্পানিগুলোকেই দায়ী করছেন। এমনকি শিল্পীদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। কারণ ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ ও রোজার ঈদে এর চাইতে দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ সম্মানী দিয়ে কিছু শিল্পীদের অ্যালবাম প্রকাশ করা হয়েছে। কয়েকটি কোম্পানি এমন কিছু অ্যালবামে এতটাই চড়া বিনিয়োগ করেছে, যা ফেরত অগামী পাঁচ বছরে আসবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অডিও প্রযোজক বলেন, দেখুন কি আর বলবো। আমরা মনে হয় নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারছি। খুব সুন্দর একটা অবস্থা তৈরি হয়েছিল বছরের শুরুতে। একটা ভারসাম্য ছিল। কিন্তু কিছু অডিও কোম্পানি প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে শিল্পীদের দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ সম্মানী বেশি দিয়ে অ্যালবাম করেছে। এখন সেই বিনিয়োগ উঠাতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। শেয়ারবাজার যেমন একদম উপরে উঠে আবার ধপাস করে পড়ে গিয়েছিল, ঠিক তেমন অবস্থা হয়েছে অডিও ইন্ডাস্ট্রির। অথচ আমরা বছরের শুরুর ভালো অবস্থাটা ধরে রাখতে পারতাম। অন্য একজন সিনিয়র প্রযোজক চলতি অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা নিয়ে বলেন, অনেক প্রযোজক না বুঝে বিনিয়োগ করেছেন। যার মাশুল আমাদের সবাইকে দিতে হচ্ছে। আমি সব সময় শিল্পীদের পক্ষে। কিন্তু চলতি বছর অনেক কোম্পানি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছে। সেই বিনিয়োগের আসলটা তুলতেই অনেক সময় লেগে যাবে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরোনো কোম্পানিগুলোই কেবল তাদের স্বাভাবিক বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে অ্যালবাম প্রযোজনা ও প্রকাশনায়। আর বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো তেমন একটা অ্যালবাম প্রকাশ করছে না। সংগীতসংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে এখন স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। আগামী বছরের ভালোবাসা দিবসের আগে এই অবস্থা কাটবে বলে মনে হচ্ছে না। প্রতিযোগিতা ভালো, কিন্তু সেটি করতে গিয়ে নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনাকে বোকামি বলেই মনে করেন সংগীতবোদ্ধারা। স্থবির অবস্থা কারোই কাম্য নয়। একটি কিংবা দুটি উৎসবে বিনিয়োগ না করে সারা বছর একই গতিতে বিনিয়োগ করলেই অডিও কোম্পানি লাভবান হতো। কারণ এসব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের উপরই অনেক কিছু নির্ভরশীল। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে শিল্পীদের একটা সমন্বয়ও দরকার রয়েছে। না হলেও এরকম স্থবির অবস্থা ঘুরে ফিরে বার বার আসবে বলেও মনে করেন সংগীতবোদ্ধারা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.