আজ ও আগামীকাল রোববার আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। নতুন কী চমক থাকবে, কী কী পরিবর্তন আসছে- এসব জানতে সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছে সমমনা ও বিরোধী মতাদর্শী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। যুগান্তরের সঙ্গে আলাপচারিতায় বিষয়টি স্বীকারও করেছেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তাদের প্রত্যাশা কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষায় নতুন করে শপথ নেবে। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের মাধ্যমে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ঘোষণা দেবে। সম্মেলনের সফলতা কামনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল ছিল। কিন্তু এখন তা নেই। কাজেই এ দলটির কাছে আমাদের প্রত্যাশা- আওয়ামী লীগ তার আগের জায়গায় ফিরে আসবে এবং দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করবে। তারা দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কাজ করবে এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্দলীয় সরকারের অধীনে এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় দেশে একটি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচনের ঘোষণা করবে।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তারা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমরা যাওয়ার চেষ্টা করব। তবে তাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আমরা বিশ্বাসী নই। এ সম্মেলন দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর আমাদের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস। আমরা সেটা নিয়েই অনেক ব্যস্ততার মধ্যে আছি। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের ২০তম সম্মেলন উপলক্ষে এত টাকা খরচ করে যে সাজসজ্জা করেছে, তাতে অনেকের মনেই প্রশ্ন, নৈতিকভাবে দলটি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ দলটির নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফেরাতে আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করেছি। কিন্তু দলটি স্বাধীনতার পরে মৌলিক চেতনার বাইরে গিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। আবারও তারা অদৃশ্য বাকশাল কায়েম করার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্রের পথে হাঁটবে। আওয়ামী লীগের সম্মেলন থেকে সে প্রত্যাশাই করি।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গঠনতান্ত্রিক নিয়ম অনুসারে নির্দিষ্ট সময় পরপর রাজনৈতিক দলের সম্মেলন হবে সেটাই স্বাভাবিক। সম্মেলন একটা দলের জন্য আনন্দের এবং উৎসবের। তবে আওয়ামী লীগের সম্মেলন নগরীর মানুষের জন্য বিড়াম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এ সম্মেলনের কারণে রাজধানীতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল হলেও বর্তমানে এ দলে গণতান্ত্রিক চর্চা নেই। তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকায় রাষ্ট্র ব্যবস্থায়ও অগণতান্ত্রিক অবস্থা বিরাজ করছে। যা এ পুরনো ঐতিহ্যবাহী দলটির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তবে আমি আশা প্রকাশ করছি, এ সম্মেলনের মাধ্যমে দলটিতে যেন গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে একটি মুক্ত অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, একটি রাজনৈতিক দলে সময়মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে কোনো গণতন্ত্র নেই। এ দলটিতে চলছে পরিবারতন্ত্র। যা এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। ফলে দলের কোনো সদস্য স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারছে না। যা গণতন্ত্রের পথে অন্তরায়। তাই এ সম্মেলনে দলটির নেতা নির্বাচনে এবং আগামী দিনের রাজনীতিতে কতটা ভূমিকা রাখবে সেটা স্পষ্ট হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.