নব্য জেএমবির প্রধান আবদুর রহমান ওরফে সারোয়ার জাহানের আশুলিয়ার বাসাতেই গুলশান-শোলাকিয়াসহ তিনটি বড় হামলার নীলনকশা হয়। হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নব্য জেএমবির আরেক মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ শীর্ষ কয়েকজন নেতা। শুধু তাই নয়, তাতে যোগ দেয় গুলশানে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত জঙ্গি নিবরাস ইসলামসহ অন্য হামলাকারীরা। ওই বৈঠকে অংশ নিতে তামিম চৌধুরী একটি অ্যাপসের মাধ্যমে কথা বলেন সারোয়ার জাহানের সঙ্গে। কোড নামে হওয়া ওই কথোপকথনে তামিম চৌধুরী আশুলিয়ার বাসাটিতে যাওয়ার অনুমতি চান। সারোয়ার অনুমতি দিয়ে জানতে চান তিনি কী খাবেন। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় উদ্ধার হওয়া নথিপত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গত ৮ অক্টোবর ভোরে গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও সাভারের চারটি জঙ্গি আস্তানায় পৃথক অভিযানে মোট ১২ জঙ্গি নিহত হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় আশুলিয়ার গাজীরচট বসুন্ধরা টেক এলাকার ছয়তলা মৃধা ভিলা ঘিরে অভিযান শুরু করে র্যাব। সেখান থেকে লাফিয়ে পড়ে পালানোর সময় গুরুতর আহত হন আবদুর রহমান। সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান তিনি। এর মধ্যে দুটি জঙ্গি আস্তানা থেকে ৩০ লাখ টাকা, ল্যাপটপসহ বেশ কিছু নথিপত্র জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নব্য জেএমবির অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই পাওয়া যায় সেখানে। পরে র্যাবের মহাপরিচালক এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, কথিত ওই আবদুর রহমানই নব্য জেএমবির প্রধান। তার প্রকৃত নাম সারোয়ার জাহান। এ ছাড়া এই সারোয়ারই তৈরি করেন গুলশানসহ অন্তত ১৯টি হামলার পরিকল্পনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নব্য জেএমবিপ্রধান সারোয়ার জাহানের বাসায় মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বৈঠক হয়। এর আগে মে মাসের শুরুর দিকে নিজেকে ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বাসাটি ভাড়া নেন সারোয়ার। ওই বৈঠকে তার নেতৃত্বে উপস্থিত শীর্ষ জঙ্গি নেতারা বেশ কিছু হামলার পরিকল্পনা করেন। এর মধ্যে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি, শোলাকিয়ায় ঈদগাহ ময়দান ছাড়াও ঢাকায় একটি বড় হামলার পরিকল্পনা করা হয়। এসব হামলার অর্থায়ন, জনবল ও অস্ত্র নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয় তাদের মধ্যে। দেশের কোন এলাকা থেকে অস্ত্র আসবে, কারা হামলায় অংশ নেবেÑ এসব নিয়ে হয় চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে গুলশান হামলার পর ব্যাপক গোয়েন্দা তৎপরতার কারণে ঢাকায় বড় হামলা চালানোর অন্য পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এ ছাড়া শোলাকিয়ায় অ্যাকশনে গেলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে সফল হতে পারেনি জঙ্গিরা।
সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে পরিকল্পনাকারীরা ছাড়াও সম্ভাব্য হামলায় অংশ নিতে প্রস্তুত তরুণ জঙ্গিরাও উপস্থিত ছিল। তাদের হামলার পরিকল্পনার ধরনসহ বিস্তারিত বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান আমাদের সময়কে জানান, প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পেরেছেন আবদুর রহমান ওরফে সারোয়ার জাহানের ওই বাসা ৬ মাস আগে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.