পেসার হান্ট দিয়ে ক্রিকেটে যাত্রা শুরু শুভাশিষ রায়ের। এরপর ২০০৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ক্যাম্পে ডাকও পেয়েছিলেন। সে বছর খেলা হয়নি। এরপর ২০০৮ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা হয় তার। এরপর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কাটিয়ে দিয়েছেন ১০টি বছর। সম্ভাবনাময় এই তরুণের একটু একটু করে বয়স বেড়েছে। খেলাতো দূরে থাক ডাকও পাননি জাতীয় দলে। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টেস্ট যেন তার জীবনকে নতুন একটি মোড়ে এনে দাঁড় করিয়েছে। তাকে রাখা হয়েছে শেষ টেস্টের দলে। পেসার শফিউল দল থেকে বাদ পড়ায় শুভাশিষের দরজা খুলে যায়। ২৭ বছর বয়সী রংপুরের ডানহাতি এই পেসার বিশ্বাস করে সুযোগ পেলে লক্ষ্য ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে নিজের নয়া লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেন মানবজমিনের ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো- প্রশ্ন: অনেক অপেক্ষার পর ডাক পেলেন তাও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, একটু নার্ভাস? শুভাশিষ: কিছুটা তো নার্ভাস। তবে আত্মবিশ্বাস আছে সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দিয়ে কাজে লাগানোর। প্রশ্ন: আপনার সঙ্গেকার অনেক ক্রিকেটারই জাতীয় দলে খেলে ফেলেছেন যেমন শফিউল, রুবেলরা। ভেবেছিলেন কি জাতীয় দলে এবার ডাক পাবেন? শুভাশিষ: আসলে শুরু থেকেই আমার পারফরম্যান্স খারাপ ছিল না। চেষ্টা করেছি। কিন্তু যে সময় জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার কথা সেই সময়গুলোতে আমি ইনজুরিতে পড়ি। যে কারণে আমি অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছি। ইনজুরি থেকে ফিরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালোই করছিলাম। এরপর এবার এইচপি থেকে জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলন ম্যাচ খেলি। চট্টগ্রামেও দলের সঙ্গে রেখেছিল। সেখানেই অনুশীলন করেছি। হয়তো টিম ম্যানেজম্যান্টের একটা পরিকল্পনা আছে নয়তো কেন দলে ডাকবেন আমাকে। প্রশ্ন: প্রতিটি ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে টেস্ট খেলার। সেখানে সুযোগ পেলে লক্ষ্য কী থাকবে? শুভাশিষ: টেস্টে ডাক পাওয়াটা আমার জন্য বেশ বড় একটা বিষয়। সুযোগ পেলে পেস বিভাগে ভালো বল করার চেষ্টা করবো। নিজেরও একটা প্ল্যান আছে। আর রিভার সুইং নিয়েও একটা পরিকল্পনা আছে। দেখি কোচের সঙ্গে কথা বলবো। নেটে অনুশীলন করবো, দেখি কী করতে পারি। প্রশ্ন: টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে খেলছেন, তিনি কতটা আস্থা রাখতে পারবেন আপনার ওপর? শুভাশিষ: আমার দলে ডাক পাওয়ার বিষয়টি আমি জানতে পারি অধিনায়ক আর ম্যানেজারের কাছ থেকে। মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছি মোহামেডানে, শেখ জামালে এমনকি বিপিএলেও তার দলে খেলেছি। আমি মনে করি তার সঙ্গে খেলে সেই আস্থাটা অর্জন করতে পেরেছি। এখন জাতীয় দলেও তার আস্থাটা যেন আমার ওপর থাকে সে ভাবেই খেলতে চাই। প্রশ্ন: খেলা শুরু করেছেন কতদিন হলো? শুভাশিষ: পেসার হান্টের পর অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ২০০৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলাম। সেবার আমার খেলা হয়নি। এরপর ২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলি। এছাড়াও একাডেমির হয়ে খেলেছি, ৮ বছর ধরে প্রিমিয়ার লীগ খেলছি। প্রথম শ্রেণির চারদিনের ম্যাচ ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট খেলছি ২০০৭ সাল থেকে। এই পর্যন্ত ৫১টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১৩৬টি উইকেটি নিয়েছি। ৪৭টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে উইকেট পেয়েছি ৫৮টি। ঘরোয়া ক্রিকেটেই খেলা হচ্ছিল অনেক দিন ধরে। মাঝে ইনজুরি হয়েছিল। যে কারণে অনেক দিন ছিলাম খেলার বাইরে। এখন ইনজুরি কাটিয়ে যতটা সম্ভব খেলে যাচ্ছি। প্রশ্ন: আপনার জন্ম কোথায়? পরিবারে কে কে আছেন? শুভাশিষ: আমার জন্ম রংপুরে। পরিবারে আমি ছাড়া আর আছেন শুধু বাবা-মা। প্রশ্ন: ক্রিকেটে পরিবারের অবদান কতটা? শুভাশিষ: শুরুতে তো পরিবার চায়নি আমি ক্রিকেট খেলি। আমরা তো মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তাই বাবা-মা চাইতো না ক্রিকেট খেলি। তারা চেয়েছেন শুধু পড়ালেখাই করি। আসলে মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রিকেট খেলার স্বপ্নটা অনেক কঠিন। এরপর যখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পেলাম ও খেললাম- তখন ধীরে ধীরে তারা ছাড় দিয়েছেন। বাবা-মা বলেছেন যদি ক্রিকেট খেলে ভালো কিছু করতে পারি করতে। তবে পড়ালেখাটাও তারা চালিয়ে যেতে বলছেন। সেটাও চেষ্টা করছি। প্রশ্ন: আপনি তাহলে ক্রিকেটার হওয়ার সাপোর্টটা কার কাছ থেকে পেয়েছিলেন? শুভাশিষ: সত্যি কথা বলতে আমি ক্রিকেটে এসেছি কোচ সারওয়ার ইমরান স্যারের হাত ধরে। তিনি আমাকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন। এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ দলে কোচ ফাহিম স্যারও অনেক কষ্ট করেছেন আমার জন্য। যেখানেই গিয়েছি কোচরা সাহায্য করেছেন। তবে এর মধ্যে সারওয়ার ইমরান স্যারই ছিলেন আমার বড় সাপোর্টার।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.