অধ্যাপক হেলমুট নরপথের ভবিষ্যদ্বাণী
নির্বাচনী জল যত গড়িয়েছে, রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন ততই কমেছে। খোদ নিজের দলের অনেকেই এখন দাঁড়িয়ে গেছেন তার বিপরীতে। বলছেন, তারাও ভোট দেবেন না ট্রাম্পকে। তবে গত একশ’ বছরের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল সম্পূর্ণ সফলভাবে (একবার ছাড়া) ভবিষ্যদ্বাণী করা অধ্যাপক হেলমুট নরপথ বলছেন ভিন্ন কথা। মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন নিয়ে তার তৈরি করা মডেল দিয়ে তিনি বলছেন, ট্রাম্পই জয়ী হতে যাচ্ছেন ৮ই নভেম্বরের নির্বাচনে। প্রাইমারি নির্বাচনে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে নিজেকে উপস্থিত করতে পেরেছিলেন ট্রাম্প। সে কারণেই চূড়ান্ত ভোটাভুটিতেও তিনিই এগিয়ে থাকবেন বলে জানাচ্ছেন নরপথ। এ খবর দিয়েছে বৃটিশ অনলাইন ইন্ডিপেন্ডেন্ট। খবরে বলা হয়, অধ্যাপক নরপথ একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে নিজের মতো করে তৈরি করেছেন একটি বিশ্লেষণী মডেল। ওই মডেল তিনি প্রয়োগ করেছেন ১৯১২ সাল থেকে শুরু করে সর্বশেষ মার্কিন নির্বাচনেও। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার মডেলে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ীই বিজয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা। একবারই কেবল ঘটেছিল ব্যতিক্রম, সেটা ২০০০ সালে। সেবার অধ্যাপক নরপথের মডেলে বিজয়ী দেখানো হয়েছিল ডেমোক্রেটিক প্রার্থী আল গোরকে। নির্বাচনে ইলেকটোরাল ভোটের হিসাবে শেষ পর্যন্ত আল গোর পরাজিত হলেও সাধারণ ভোটে তিনিই ছিলেন এগিয়ে। ফলে ওইবার চূড়ান্তভাবে তার মডেলের ভবিষ্যদ্বাণী সফল না হলেও ভোটের হিসাবে তার মডেলই ছিল সফল। অধ্যাপক নরপথের তৈরি মডেল অনুযায়ী, যে প্রার্থী দলীয় প্রাইমারি নির্বাচনে ভালো করে থাকেন, চূড়ান্ত নির্বাচনে তিনিই জয়ী হয়ে থাকেন। নিউ ইয়র্ক পোস্টকে অধ্যাপক নরপথ বলেন, ‘আমার মনে হয়, প্রাইমারি নির্বাচনে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী। আর সেই ধারা তিনি ধরে রাখবেন। আমার মডেল গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ট্রাম্পের জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছে এবং ওই সময়ের পর থেকে কোনো বদলও আসেনি। বাস্তব বিশ্বে যা কিছু ঘটে, তা ওই মডেলকে প্রভাবিত করে না।’ তবে ওই মডেলটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে আমলে নেয় না। নির্বাচনী দৌড়ের শেষের দিকের ঘটনাবলীর প্রভাব কিংবা দুই রাজনৈতিক দরের গৌন হয়ে যাওয়ার বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া হয় না এই মডেলে। ভোটারদের কিছু বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। যেমন- নারী ও সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ভোটাররা সাধারণত সমর্থন করে থাকে ডেমোক্রেটদের। অন্যদিকে, শ্বেতাঙ্গরা সাধারণত রিপাবলিকানদের পক্ষে ভোট দিয়ে থাকে। কিছুদিন আগেই ট্রাম্পের একটি গোপন অডিও ফাঁস হয়ে যায়, যা তার বিরুদ্ধে নারীদের যৌন নির্যাতন ও নিগ্রহের উদাহরণ তুলে এনেছে। ট্রাম্পের ভাবমূর্তিও ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে ওই অডিও টেপ ফাঁস হওয়ায়। এরপর কমপক্ষে ১২ জন নারী তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। এতে করে রিপাবলিকান অনেক নেতাও ট্রাম্পের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। জনমত জরিপেও হিলারির তুলনায় বেশি পিছিয়ে গেছেন তিনি। একইভাবে, কর্মজীবীদের মধ্যে ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন বেশি থাকলেও শিক্ষিত, নারী ও সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে তার অবস্থান নাজুক। কলেজ ডিগ্রি নেই এমন ভোটারদের মধ্যেও পুরুষদের তুলনায় নারীরা ট্রাম্পকে কম সমর্থন করছেন। ২০১২ সালের নির্বাচনে নেট সিলভার এক জনমত জরিপে সঠিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল অনুমান করেছিল। এবারে ওই একই জরিপে সব রাজ্যকে বিবেচনায় নিয়ে করা জনমত জরিপে দেখা গেছে, সুইং স্টেট ফ্লোরিডায় ট্রাম্প হারছেন। এই রাজ্যে হিস্প্যানিকদের সংখ্যা বেশি। আবার, আরেক সুইং স্টেট ওহাইওতে শ্বেতাঙ্গ কর্মজীবীদের সংখ্যা বেশি হলেও নেট সিলভার বলছেন, এই রাজ্যেও হিলারির জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। তার হিসাবে- হিলারির জয়ের সম্ভাবনা ৮৫ ভাগ। নভেস্টর’স বিজনেস ডেইলি/টিআইপিপি শীর্ষক আরেক জনমত জরিপ গত তিনটি মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের ফলাফল সঠিকভাবে আগাম জানিয়েছেন। তাদের এবারের হিসাবে এখনও ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন ২ পয়েন্টে। তবে ২ পয়েন্ট আবার ত্রুটির সীমার মধ্যে পড়ে। তবে এবিসি নিউজের এমন একটি পোলে হিলারি এগিয়ে রয়েছেন ১২ পয়েন্টে। আর রয়টার্স/ইপসস জরিপে তো হিলারির প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখানো হয়েছে ৯৫.৬ ভাগ। এতসব হিসাব-নিকাশ, অনুমান, ভবিষ্যদ্বাণীর কোনটি শেষ পর্যন্ত সঠিক হবে- তা জানতে অপেক্ষার সময় এখন কমে এসেছে দুই সপ্তাহেরও নিচে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.