মাশরাফি বিন মুর্তজা মানেই কি বিপিএলের শিরোপা! কেন নয় এই পর্যন্ত টানা তিন আসরে বিপিএলের শিরোপা উঠেছে এই অধিনায়কের হাতে। ২০১২ ও ২০১৩ সালে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এরপর ফিক্সিংয়ের দায়ে তার দল বিপিএল থেকে নিষিদ্ধ হয়। এক মওসুম বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে বিপিএলের নয়া দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের নেতৃত্ব দেন মাশরাফি। এবারও বরিশালকে হারিয়ে তার হাতেই শিরোপা। আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে চতুর্থ বিপিএলের আসর। মিরপুর শেরে বাংলা মাঠে প্রথম দিনই দুপুর আড়াইটায় চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মুখোমুখি হবে রাজশাহী কিংস। এই লড়াই দিয়ে মাশরাফির শুরু হবে টানা চতুর্থ শিরোপার লড়াই। তবে এই সব নিয়ে নির্বিকার জাতীয় দলের এই অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘চতুর্থবার? টুর্নামেন্ট শুরুই হতে পারলো না, এত দূর চিন্তা করার সুযোগ নেই। ভালো খেলার চেষ্টা করতে হবে শুরু থেকেই। প্রথম ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি ভালো শুরু পাই, যদি মোমেন্টাম সঙ্গে থাকে, তাহলে সামনের ম্যাচগুলো খেলতে কিছুটা হলেও সহজ হবে। সেটিই আপাতত ভাবনায়।’ তবে মাশরাফি নির্বিকার হলেও অনেকের ধারণা বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সহজ ফর্মুলা তার হাতে অধিনায়কত্ব তুলে দেয়া। মাশরাফি তার ছোঁয়াতে দলকে ঠিকই চ্যাম্পিয়ন করে নিবে। কিন্তু এই নিয়েও ঘোর আপত্তি তার। মাশরাফি বলেন, ‘ফর্মুলা বলেন আর থিওরি, আমি মনে করি এটা ভুল। ওসবে কিছু হয় না, প্রতিটি খেলোয়াড়কে তার নিজের খেলা খেলতে হয়। একটা টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে ভালো তো খেলতেই হয়, তার পাশাপাশি আবার ভাগ্যও দরকার হয়। চ্যাম্পিয়নশিপের কথা বলা কঠিন। আমরা স্রেফ দল হিসেবে ভালো খেলতে পারি। সেই চেষ্টাই আমাদের করতে হবে।’ অন্যদিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের প্রতিপক্ষ রাজশাহী কিংসও ভীষণ আত্মবিশ্বাসী দলের দারুণ শুরু নিয়ে। প্রথম দুই আসরে খেলা দুরন্ত রাজশাহীর মালিকানা বাতিল হলে দলটি তৃতীয় আসরে খেলতে পারেনি। অবশ্য চতুর্থ আসরে মালিকানা বদলে নয়া নামেই আবির্ভাব হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রথম আসরে নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির হাতে। ক্যারিবীয় এই ক্রিকেটার অবশ্য দলকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন তাইতো রাজশাহীর ভরসা তার ওপরই। অন্যদিকে রাজশাহীতে দেশের ক্রিকেটের বড় কোনো তারকা নেই। কেবল ‘এ’ প্লাস ক্যাটাগরি থেকে দলে আছেন সাব্বির রহমান। বিদেশিদের মধ্যে স্যামির পাশে উল্লেখযোগ্য সংগ্রহ পাকিস্তানের উমর আকমল ও ইংলিশ অলরাউন্ডার সামিত প্যাটেল শ্রীলঙ্কার উপুল থারাঙ্গা দলে থাকলেও জাতীয় দলের সঙ্গে এখন আছেন জিম্বাবুয়ে সফরে। আর লঙ্কান মিলিন্দা সিরিবর্ধনের সঙ্গে আছেন ক্যারিবিয়ান পেসার কেসরিক উইলিয়ামস। মূলত তারুণ্য নির্ভর দল। গতকাল দলটির উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান বললেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুটি বিশ্বকাপ জিতেছে স্যামির নেতৃত্বে। অধিনায়ক হিসেবে খুব ভালো, টিমমেট হিসেবেও দারুণ। আশা করি, পুরো মৌসুমই আমরা উপভোগ করবো। দলটা এমনিতে অনেক তরুণ আছে। টিম স্পিরিট খুব ভালো। টি-টোয়েন্টিতে টিম স্পিরিট দিয়ে অনেক কিছু জয় করা যায়। মাঠে আমরা শতভাগ ঢেলে দেবো। এছাড়াও এ দলে আছে মুমিনুল হক, রনি তালুকদার, আবুল হাসান, অভিজ্ঞ রকিবুল হাসান, ঘরোয়া ক্রিকেটের পরীক্ষিত পারফরমার ফরহাদ রেজা, উঠতি অলরাউন্ডার সালমান হোসেন ও পেসার হান্ট থেকে উঠে আসা এবাদত হোসেন। তবে আপাতত আলোটা মেহেদী হাসান মিরাজের ওপর। মিরাজকে নিয়ে নুরুল হাসান বলেন, ‘এখন অনেক বড় একটা ব্যাপার ওর দলে থাকা। মিরপুর টেস্টে দারুণ পারফরম্যান্স করে দলকে জিতিয়েছে। ওর দলে থাকাটা আমাদের অনেক অনুপ্রাণিত করবে।’ প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়কও মিরাজের প্রশংসাতে পঞ্চমুখ। মাশরাফি বিরাজকে নিয়ে বলেন, ‘ওর বড় ব্যাপার হলো পরিশ্রমী, কষ্ট করতে পারে। এটি আমি শুনে বলছি না দেখেই বলছি। অবশ্য ওর সামনে আরো কঠিন চ্যালেঞ্জ। আমি বিশ্বাস করি ও দারুন কিছু করতে পারবে।’ অন্যদিকে মাশরাফির দলেও আছেন বেশ কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার। এরপর মধ্যে মোহাম্মদ আল-আমিন, নাজমুল হোসেন শান্ত, নাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন অন্যতম। এদের নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘এখনই বলতে পারবো না আমার দল অন্য দলের তুলনাতে কতটা শক্তিশালী। আসল ব্যাপার হলো মাঠে পারফরম্যান্স করা। এটি যে দল করতে পারবে সেখানে যেমনই ক্রিকেটার থাক তারা সেরা। আমার দলে বেশ কয়েকজন তরুণ আছে যেমন আল আমিন, যে ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক রান করেছে। এছাড়াও নাজমুল হোসেন শান্তও আছে। এছাড়াও ইমরুল, লিটন শরিফের মতো অভিজ্ঞরা আছে। বিদেশি ক্রিকেটারও বেশ। এখন আমাদের কাজ মাঠের লড়াইটা ঠিকঠাকভাবে শুরু করা।’ তিন আসরের চ্যাম্পিয়ন-রানার্স আপ: মৌসুম চ্যাম্পিয়ন রানার্স আপ ফলাফল ২০১১/১২ ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স বরিশাল বারনার্স ঢাকা ৮ উইকেটে জয়ী ২০১৩/১৪ ঢাকা গ্ল্যাডিয়ের্টস চিটাগাং কিংস ঢাকা ৪৩ রানে জয়ী ২০১৪/১৫ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বরিশাল বুলস কুমিল্লা ৩ উইকেটে জয়ী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দেশি: মাশরাফি বিন মুর্তজা (আইকন), ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মোহাম্মদ আল-আমিন, নাজমুল হোসেন শান্ত, নাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মোহাম্মদ শরীফ, নাবিল সামাদ, জসিমউদ্দিন, সৈকত আলী, রাসেল আল মামুন। বিদেশি: ইমাদ ওয়াসিম, আসার জাইদি, সোহেল তানভির, নুয়ান কুলাসেকারা, রশিদ খান, রোভম্যান পাওয়েল, থিসারা পেরেরা, খালেদ লতিফ, শাহজিব হাসান, জেসন হোল্ডার। রাজশাহী কিংস দেশি: সাব্বির রহমান, নুরুল হাসান সোহান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুমিনুল হক, ফরহাদ রেজা, নাজমুল হোসেন অপু, রকিবুল হাসান, আবুল হাসান রাজু, রনি তালুকদার, সালমান হোসেন, এবাদত হোসেন। বিদেশি: ড্যারেন স্যামি, মোহাম্মদ সামি, মিলিন্দা সিরিবর্ধনে, উপুল থারাঙ্গা, সামিত প্যাটেল।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.