‘চিঠিতে লিখা হতো আবেগী কথামালা। মোবাইল ফোনে রাত জেগে ফিসফিস শব্দ। ফোনের রিংটোন নীরব থাকলেও আলো জ্বলার পরই ওয়াহিদ বুঝে নিতো এই বুঝি তার প্রিয়ার ফোন এলো। দিনের বেলায় রিংটোন বাজলে শোনা যেত- তুমি আগে কেন আসনি, আরো আগে কেন দাওনি দেখা। সেই রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলো নিয়ে আমার বন্ধু আর তার প্রেমিকার কথা আমাদের শুনাবে না। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে তার সমাধি হয়েছে। সে এখন না ফেরার দেশে’- এমন কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে ওয়াহিদের এক বন্ধু। সে তার নাম-পরিচয় জানাতে অনীহা প্রকাশ করে। বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের পাথাড়িপাড়া গ্রামে ত্রিভুজ প্রেমের বলি হলো কিশোর আব্দুল ওয়াহিদ (১৭)। গত মঙ্গলবার সকালে পূর্ব মুড়িয়া পাতাড়িপাড়ার নিজ গ্রামের ধানক্ষেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামলে বেরিয়ে আসে রহস্য। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ খুনির ৪ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এখনও মূল আসামি ছাইম উদ্দিন পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ওয়াহিদের প্রেমিকার প্রেমে অন্ধ ছিল আবুল কালামের পুত্র ছাইম উদ্দিন। ত্রিভুজ এ প্রেমের কারণেই শেষ পর্যন্ত ওয়াহিদকে জীবন দিতে হয়েছে। বলতে গেলে ছাইমসহ ৬ বন্ধু মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওয়াহিদকে কুপিয়ে হত্যা করেছে- পুলিশের তদন্তে এমনটি বেরিয়ে আসে। ওয়াহিদকে হত্যার পরিকল্পনা কয়েক দিন আগে থেকে করা হলেও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে খুনিরা সুযোগ খুঁজছিল। সোমবার রাতে নিরস্ত্র ওয়াহিদকে তারা ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ওয়াহিদের শরীরের ৭টি স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। এ ঘটনায় তদন্তে নেমে পুলিশ অল্প সময়ের মধ্যে রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। রহস্য উদঘাটিত হওয়ার পর প্রযুক্তির সাহায্যে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার রাত ও বুধবার দিনভর অভিযান চালিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ পাতাড়িপাড়া এলাকার বাহারউদ্দিনের পুত্র রেজাউল করিম (২২), হাসান আলীর পুত্র রাসেল আহমদ (২৫), আগাউর রহমানের পুত্র আতিকুর রহমান (২৪) ও আব্দুল করিমের পুত্র রাজু আহমদ (৩০)কে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে, মূল আসামি একই গ্রামের ছাইম উদ্দিন ও তার আরেক সহযোগী আব্দুল কাদেরের পুত্র জসিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। আজকের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শফিউল জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ। ওয়াহিদের মোবাইল কললিস্ট, গ্রামের পলাতক কিশোর ও মোবাইল ট্রাকিং করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসআই শফিউল জানান, তারা ওয়াহিদের প্রেমিকাকে খুঁজছেন। তাকে পেলে এ মামলার তদন্তে আরো গতি আসবে। তাছাড়া মেয়ের সঙ্গে ওয়াহিদের কথোপকথনের রেকর্ড মোবাইল কোম্পানির কাছে চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ওয়াহিদের হাতের লেখা চিঠি এবং তার প্রেমিকার লেখা চিঠিও তারা খুঁজছেন। এদিকে বুধবার বিকালে নিহত কিশোর আব্দুল ওয়াহিদের পিতা আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে ৬ জনকে অভিযুক্ত করে বিয়ানীবাজার থানায় হত্যা মামলা (৩/০২-১১-২০১৬) দায়ের করেন। বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রযুক্তি ও পুলিশের নিজস্ব সোর্স ব্যবহার করেই খুনিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত অপর ২ আসামিকে শিগগিরই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাত ৭টার দিকে খুনিরা মোবাইল ফোনে ডেকে নেয় কিশোর আব্দুল ওয়াহিদকে। ওই রাতে সে আর বাড়ি ফেরেনি। পরদিন মঙ্গলবার সকালে বাড়ি পাশের হাওরের ধানক্ষেত্রে তার লাশ পাওয়া যায়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.