ধান কাটা শেষে নবান্ন উৎসব, নতুন ধানের পিঠা-পার্বণের এই উৎসব আমাদের আবহমান গ্রাম বাংলার প্রতিচ্ছবি। কবে কোথায় এই নবান্ন উৎসবের প্রচলন হয়েছিল এর সঠিক ইতিহাস জানা না থাকলেও দেশ থেকে দেশান্তরে এর প্রচলন যে বিদ্যমান তা আর বোঝার বাকি থাকল না জাপানে। পিঠা-পায়েসের মউ মউ আয়োজন না থাকলেও ভিন্ন আমেজের বিভিন্ন আয়োজনে জাপানের কাগাওয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আয়োজন করা হয় নবান্ন উৎসব বা হারভেস্ট ফেস্টিভ্যাল।
জাপানের বিভিন্ন অঞ্চলে মূলত ধান কাটা শেষে এ আয়োজন হয়ে থাকে কৃষকদের সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে। আর এই আয়োজনের সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে স্থানীয় সরকার অথবা কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। গত ৩ নভেম্বর কাগাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে ছিল এ আয়োজন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন সবজি ও ফলের স্টল ছাড়াও ছিল বিদেশি শিক্ষার্থীদের আয়োজনে মজাদার খাবারের স্টল। এখানে দিনটির বিশেষত্ব হলো নামমাত্র মূল্যে অথবা বিনা মূল্যে বিভিন্ন খাবার ও অন্যান্য কৃষি পণ্য সরবরাহ। আর তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা যেন এ দিনটির প্রহর গুনতে থাকেন। প্রতিবারের মতো এবারও কাগাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা নিজ দেশের সংস্কৃতি আর মজাদার খাবারকে পরিচিত করে তোলার জন্য সুযোগটি লুফে নেন। এবারের আয়োজনে ছিল চিকেন বিরিয়ানি আর ছোলা-মুড়ির সঙ্গে গরম-গরম পেঁয়াজি। প্রায় ৪০০ জনের জন্য রাতভর চলে রান্নাবান্না। সকাল ১১টা থেকে খাবার বিতরণের পালা। বাংলাদেশি খাবার খাওয়ার জন্য জাপানিদের দীর্ঘ লাইন। অবশেষে খাবার হাতে পেয়ে যেন চোখে মুখে তৃপ্তির ঢেকুর (আরিগাতু গোদাইমাস যার বাংলা অর্থ হলো ধন্যবাদ)। কেউ কেউ আবার শুধু বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য দ্বিতীয়বার কিংবা তৃতীয়বারের জন্যও লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। আয়োজন সীমিত থাকায় শেষ দিকে অনেককে খালি হাতে ফেরত দিলেও জাপানিরা এ বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করে হাসিমুখেই মেনে নেন। আর কাউকে কাউকে বলতে শোনা যায় অপেক্ষায় থাকলাম পরের বছরের জন্য। তাই বিরিয়ানি শুধু বাঙালির নয়, জয় করেছে জাপানিদেরও মন। শুধু খাবারই নয়, বাঙালি নারীদের সাজগোজও ছিল জাপানিদের অন্যতম আকর্ষণ। তাই শাড়ি পরা নারীদের সঙ্গে কেউ কেউ আবার সেলফি তুলতে উন্মুখ হয়েছিলেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.