তরুণদের মধ্যে ট্যাটু করার প্রবণতা বাড়ছে l
মুন ইসলাম বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তাঁর হাতে ট্যাটু করে স্ত্রীর নামটি লিখেছিলেন ‘নাবিলা’। নামের ওপরে উড়ছে অনেক ছোট-বড় কালো পাখি। মুনের ভাষায়, মনের নেতিবাচক দিকগুলো কালো পাখি হয়ে উড়ে যাচ্ছে। মুন ইসলাম ও জয় হায়দার দুই বন্ধু মিলে বেইলি রোডে গড়ে তুলেছেন ‘ইনক মি’ নামের ট্যাটু স্টুডিও। জয়ের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখা গেল আগুন জ্বলছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটিও ট্যাটু। আট বছর আগে তিনি নিজেই নিজের শরীরে ট্যাটু করেন। সিঙ্গাপুরে ছিলেন সাড়ে চার বছর। সে সময় তিনি ট্যাটু করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে ভিন্নধর্মী ব্যবসা ও পেশা হিসেবে চালু করেন। এখন বাংলাদেশে অনেক তরুণ-তরুণী, এমনকি ৩৫-৪০ বছর বয়সীদের শরীরেও ট্যাটু দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব ইতিহাসে ট্যাটুর জন্ম হাজার হাজার বছর আগে হলেও বাংলাদেশে মূলত ২০০৮ সাল থেকে ট্যাটু স্টুডিও ও পারলারগুলো যাত্রা শুরু করে। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের সামনে, বেইলি রোড, পান্থপথসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা মিলল ট্যাটুশিল্পীদের। বনানী, গুলশানসহ অভিজাত পাড়ার পারলারগুলোতে ট্যাটু অনেকটা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। হাল আমলের নায়িকা শবনম বুবলির হাতে আঁকা একটি ট্যাটুর দুটি অক্ষর রীতিমতো রহস্যের জন্ম দিয়েছে। গতকাল রোববার বিভিন্ন এলাকার ট্যাটুশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ‘সেলিব্রেটি’দের শরীরের ট্যাটু দেখেই মূলত অন্যরা ট্যাটু করতে উৎসাহিত হচ্ছেন। ছেলেদের পাশাপাশি ট্যাটু করানো মেয়েদের সংখ্যাও বাড়ছে। তবে এখন পর্যন্ত নারী ট্যাটুশিল্পী বা কারিগর নেই। প্রতি স্কয়ার ইঞ্চি হিসেবে ট্যাটুর দরদাম ঠিক হয়। জায়গাভেদে স্কয়ার ইঞ্চির দাম ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকাও হয়। পুরো নকশা করতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকাও লাগতে পারে। ট্যাটুর রকমফের অনুযায়ী স্থায়ী ও অস্থায়ী দুটোই আছে। অস্থায়ী এয়ারব্রাশ ট্যাটু হলো অনেকটা তুলিতে কালি লাগিয়ে ছবি আঁকার মতো। স্থায়ী ট্যাটু করতে সুচ ও কালি লাগে। বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে কালিসহ সুচ চামড়ার ভেতরে ঢোকানো হয়। আর শরীরে ফুটে উঠতে থাকে প্রজাপতি, ড্রাগন, আগুন, গানের কোনো লাইন বা বিশেষ কারও নাম। শরীর থেকে এ নকশা মুছতে চাইলে লেজার পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হয়। যাঁরা শরীরে সুচের খোঁচা সহ্য করতে পারেন না, তাঁদের জন্য আছে বিশেষ ক্রিম, যা দিলে জায়গাটিতে সেভাবে ব্যথা অনুভূত হয় না। ট্যাটু করানোর বিষয়টি এখন পর্যন্ত মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককেন্দ্রিক। ফেসবুকে বা টেলিফোনে ট্যাটুশিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সময় ঠিক করে তবেই স্টুডিও বা পারলারে ঢুঁ দেন আগ্রহীরা। পান্থপথের অলইনস ট্যাটু স্টুডিওর ট্যাটুশিল্পী অলিন প্রথম আলোকে বলেন, স্টুডিওতে এসে একেকজন তাঁর চিন্তা বা থিম জানান। সে অনুযায়ী নকশা এঁকে নিয়ে পরে ট্যাটু করা হয়। মোহাম্মদপুরের নকশা আর্টের দেয়ালে বড় করে লেখা ‘এখানে ট্যাটু করা হয়’। মালিক ওয়াসিম জানালেন, তিনি তাঁর এই প্রতিষ্ঠান এবং মোহাম্মদপুরের স্টাইল জোন সেলুনে অস্থায়ী ট্যাটু করেন। তাঁর দোকানে বসে কথা হয় আরেক তরুণ সাজ্জাদের সঙ্গে। তিনি জানালেন, সোনামুখী সুই দিয়ে তিনি নিজেই নিজের শরীরে ট্যাটু এঁকেছেন। ট্যাটু নিয়ে ধর্মীয় মতভেদসহ সামাজিক মনোভাবেও ভিন্নতা রয়েছে। ইনক মি স্টুডিওর জয় হায়দার বললেন, ট্যাটুশিল্পের দিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। একই সুই দিয়ে যাতে একাধিকজনের শরীরে ট্যাটু না করা হয়, তা বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কালির মানও দেখতে হবে। কারও বয়স ১৮ বছরের কম হলে, ডায়াবেটিস থাকলে, অ্যালার্জি বা অন্যান্য শারীরিক জটিলতা থাকলে শরীরে ট্যাটু না করার পরামর্শ দিলেন তিনি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.