ভারতের তামিলনাড়ুর ছয়বারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জয়ললিতা। একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে সবার সামনে আসার আগে তিনি ছিলেন দক্ষিণ ভারতের একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। অনেক ব্যবসা সফল ছবির নায়িকা তিনি। নায়িকা হিসেবে নিজের অন্যরকম আবেদনের মধ্য দিয়ে লাখো তরুণের বুকে ঝড় তুলেছিলেন ষাট ও সত্তর দশকে। প্রায় ১৪০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সফল অভিনেত্রীর খাতায়ও নাম লেখান তিনি। অভিনয়ের বাইরে বেশকিছু সিনেমায় গানও গেয়েছেন তিনি। ১৯৬১ সালে ‘শ্রী শায়লা মাহাত্মী’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক হয় তার। এ ছবিতে তিনি একজন শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। একই বছর ইংরেজি ছবি ‘এপিস্টল’-এও শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে ‘মানে আলিয়া’ ছবির মধ্য দিয়ে প্রধান নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় তার। পরের বছর তামিল ছবি ‘চন্দ্রোধিয়াম’ তাকে আকাশছোঁয়া সাফল্য এনে দিয়েছিল। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক অনেক ছবি করে গেছেন। ১৯৬৮ সালে বলিউড ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। ছবির নাম ‘ইজ্জত’। এরপর আর তেমন হিন্দি ছবিতে পাওয়া যায়নি। তবে একে একে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন ছবিতে অভিনয় করে সাফল্য পান তিনি। বেশকিছু ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডও পান জয়ললিতা। তবে আশির দশকের পর থেকে ছবিতে অভিনয় একেবারেই কমিয়ে দেন তিনি। এর পরিবর্তে সক্রিয় হন রাজনীতিতে। প্রথমে সংসদ সদস্য এবং পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রীও নির্বাচিত হন এ অভিনেত্রী। নব্বই দশকে অনুরোধে বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয়ও করেন। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে তিনি তামিল ‘নিঙ্গা নাল্লা ইরুক্কারুম’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এ ছবিতে একজন রাজনীতিবিদের চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। তবে ষাট ও সত্তর দশক ছিল জয়ললিতার চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সফল দু’টি দশক। সে সময় ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অভিনয়, নাচ, উচ্চতা, আবেদন- সব মিলিয়ে একজন প্যাকেজ অভিনেত্রী হিসেবে নির্মাতাদেরও পছন্দের অভিনেত্রীতে পরিণত হন জয়ললিতা। স্বীকৃতিস্বরূপ দেশি-বিদেশি অনেক সম্মাননা ও পুরস্কারও পেয়েছেন তামিলনাড়ুর ছয়বারের নির্বাচিত এ মুখ্যমন্ত্রী। একজন সফল অভিনেত্রী, সফল রাজনীতিবিদ এবং সর্বোপরি একজন উদার ও বড় মনের মানুষ হিসেবেই ভারতের মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন জয়ললিতা। এজন্যই তাকে তামিলনাড়ুর জনগণ ‘আম্মা’ বলে ডাকতেন। অসময়ে চলে গেলেও জয়ললিতা বেঁচে থাকবেন তার রেখে যাওয়া আদর্শ, কাজ ও সৃষ্টির মধ্য দিয়ে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.