ঢাকার ধামরাইয়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে জাল ভিসা দিয়ে অন্তত ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তাঁকে কৌশলে গত বুধবার আটক করে পুলিশে দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ওই ব্যক্তির নাম হাসিবুজ্জামান। বাড়ি ধামরাইয়ের বেলিশ্বর গ্রামে। তিনি একসময় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সাভার মডেল থানার পুলিশ ও ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পোশাক কারখানায় চাকরির সময় আবুল কালাম ও সোহাগ নামে কারখানার দুই কর্মকর্তার সঙ্গে হাসিবুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বছর দেড়েক আগে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ওই দুজনের সহযোগিতায় বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা শুরু করেন। কালাম ও সোহাগের মাধ্যমেই তিনি লোক জোগাড় করেন। তাঁদের প্রায় সবাই পোশাকশ্রমিক। মালয়েশিয়া, তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশে চাকরির আশ্বাস দিয়ে হাসিবুজ্জামান জনপ্রতি ৬০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় করেন। এভাবে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি অন্তত ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। টাকা নেওয়ার সময় তাঁদের জাল ভিসা সরবরাহ করা হয়েছে। গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার কর্মী পাবনার চাটমোহরের সুমন হোসেন বলেন, মাস সাতেক আগে তাঁকেসহ ২৯ জন পোশাকশ্রমিককে হাসিবুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন কালাম ও সোহাগ। মালয়েশিয়ায় চাকরির আশ্বাস দিয়ে হাসিবুজ্জামান তাঁদের কাছে ৬০ হাজার টাকা করে নেন। এর জন্য স্ট্যাম্পে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত ২০ অক্টোবরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা ছিল। প্রতারণার শিকার আনিসুর রহমান বলেন, টাকা পরিশোধের পর হাসিবুজ্জামান তাঁদের প্রত্যেককে মালয়েশিয়ার ভিসা করিয়ে দেন। সন্দেহ হলে যাচাই করতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন যে সব ভিসাই জাল। বিষয়টি জানার পর হাসিবুজ্জামান গা ঢাকা দেন। একইভাবে তাইওয়ানে চাকরির আশ্বাসে ঝালকাঠির মোহাম্মদ স্বপনের কাছ থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নিলেও তাঁকে জাল ভিসা দিয়েছেন হাসিবুজ্জামান। তবে প্রতারণার শিকার ৩০ জনের একটি দলের বুদ্ধির কাছে ধরা পড়েছেন তিনি। এই দলের সদস্য পোশাকশ্রমিক আনিসুর রহমান বলেন, তাঁদের ৩০ জনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর সাত মাস ধরে হাসিবুজ্জামান নিখোঁজ ছিলেন। এরপর বুদ্ধি করে তাঁদের এক সহকর্মীর স্ত্রীকে দিয়ে মুঠোফোনে ও ফেসবুকে হাসিবুজ্জামানের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করানো হয়। ওই নারী তাঁকে গত বুধবার সাভারের আমিনবাজার এলাকায় দেখা করতে আসতে বলেন। সেখানে এলে কৌশলে হাসিবুজ্জামানকে আটক করা হয়। রাতেই তাঁকে সাভার মডেল থানায় সোপর্দ করেন তাঁরা। পুলিশ হেফাজতে হাসিবুজ্জামান গতকাল বৃহস্পতিবার বিদেশে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বেশ কিছু লোকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। ওই টাকা তিনি পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করবেন বলে জানান। সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান বলেন, টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে উভয় পক্ষ আপস করলে পুলিশের কিছু করার নেই। তবে অভিযোগ দেওয়া হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।