বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (এনএসইউ) গতকাল রোববার থেকে শুরু হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলন-আইসিসিআইটি ২০১৬’ নামের এই আয়োজন। এবারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৯তম সম্মেলন। তিন দিনের এ সম্মেলন শেষ হবে আগামীকাল মঙ্গলবার। উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট ফ্লোরিডার অধ্যাপক হারুন অর রশীদ। আরও উপস্থিত ছিলেন সম্মেলনের চেয়ার টেক্সাস ইউনিভার্সিটি এ অ্যান্ড এমের ইসিই বিভাগের ডিন অধ্যাপক মো. এস আলম, এনএসইউর উপাচার্য মো. আতিকুল ইসলাম, স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সের ডিন অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম এবং তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল বারি। আয়োজক এনএসইউর ইসিই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরশাদ চৌধুরী জানালেন, সম্মেলনে এবার মোট ১২০টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। তবে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মোট গবেষণা প্রবন্ধ পড়েছিল ৩৫০টির বেশি। সেখান থেকে প্রায় ১৮টি দেশের শিক্ষকেরা পর্যালোচনা করে, নয় মাসের দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচন করেন এই ১২০টি গবেষণা প্রবন্ধ। ইসিই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লামিয়া ইফতেখার বললেন, বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন, ডেনমার্ক, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ মোট নয়টি ভিন্ন দেশের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীদের প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, শাবিপ্রবি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আইইউটি, এমআইএসটিসহ ৩০টির অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সম্মেলনের উদ্বোধন পর্বে পর্যালোচকদের নম্বরের ওপর ভিত্তি করে সেরা প্রবন্ধ হিসেবে ‘ফাতেমা রশীদ পুরস্কার’ দেওয়া হয় চারটি প্রবন্ধকে। অবাক করা বিষয় হলো, প্রথম পুরস্কার পাওয়া প্রবন্ধটি কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল না। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রবন্ধকারের মিলিত প্রবন্ধ পায় প্রথম পুরস্কার। দ্বিতীয় পুরস্কার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় পুরস্কার চীনের শিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং চতুর্থ পুরস্কার যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে। ওদিকে উপস্থাপনের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হবে আরও সাতটি পুরস্কার, যা আগামীকাল সমাপনী পর্বে দেওয়া হবে। উদ্বোধনী পর্ব শেষে সম্মেলনের প্রধান হিসেবে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার প্রকৌশলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ন্যাম লিং, ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক টিমোথি কে শিহ। এ ছাড়া আজ ও আগামীকাল আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির অধ্যাপক নুরুল সরকার, সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাট এবিবি অয়েল, গ্যাস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন নরওয়ের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমান চৌধুরী, বুয়েটের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আতিফ হাসান রহমান এবং মাইক্রোসফট রিসার্চের গবেষক শামসী টি ইকবাল। এ ছাড়া শিল্প খাত থেকে বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন অ্যাপলম্বটেক বাংলাদেশের সিইও মো. সাইফুল্লাহ এবং ডেটাসফট সিস্টেমস বাংলাদেশ লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশিকুল আলম আকন্দ। মো. এস আলম জানান তাঁর অনুভূতির কথা। তিনি বলেন, ‘আইসিসিআইটি ২০১৬ খুবই পরিকল্পিত এক আয়োজন। আমি খুবই আনন্দিত এখানে উপস্থিত হতে পেরে। এটা এখানকার স্থানীয় শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের আন্তর্জাতিক মানের একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রযুক্তির মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার এবং অনুপ্রাণিত হওয়ার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। আমি বিশ্বাস করি, এই সম্মেলন শিক্ষার্থীদের আরও উন্নতমানের গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করবে।’ আজ এবং আগামীকাল পাঁচটি বিভাগে মোট ২৩টি অধিবেশনে উপস্থাপিত হবে প্রকাশিত হওয়া গবেষণা প্রবন্ধগুলো। পাঁচটি বিভাগ হলো তথ্যপ্রযুক্তি ও ব্যবস্থা, হিউম্যান সেন্ট্রিক অ্যান্ড মডেলিং, ইন্টেলিজেন্ট অ্যাডভান্সড সিস্টেমস, নভেল নেটওয়ার্কস এবং সিগন্যাল প্রসেসিং, সিকিউরিটি ও অ্যালগরিদম। অধিবেশনগুলো শুধু নিবন্ধিতদের জন্য। সম্মেলনস্থলে গিয়েও করা যাবে নিবন্ধন। বিস্তারিত: http://2016.iccit.org.bd প্রবন্ধ উপস্থাপন ছাড়াও এই দুই দিন থাকছে প্যানেল ডিসকাশন, যেখানে দুটি ভিন্ন প্যানেলের সঞ্চালক হিসেবে থাকবেন বোর্ড অব অ্যাক্রিডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশনের (বিএইটিই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং অপরটিতে আইসিসিআইটির সাধারণ চেয়ার অধ্যাপক এস আলম। সম্মেলনের বাইরে গিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে সম্মেলন উপলক্ষে প্রকল্প প্রতিযোগিতা। সম্মেলনটির কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (আইইইই) বাংলাদেশ শাখা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.