শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় টানা পাঁচ দিন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকা ৫৯টি তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। সকাল থেকেই শিল্পাঞ্চলের জামগড়া, বেরন, নরসিংহপুর, ঘোষবাগ এলাকার কারখানাগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে শ্রমিকদের প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এর আগে রোববার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া ৫৯টি কারখানা খুলে দেয়ার জন্য কারখানা মালিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন বিজিএমইএ সভাপতি ও পরিচালকরা। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার সকাল থেকে বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। এদিকে বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেয়ায় সাধারণ শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশের পর উৎপাদন কাজে যোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে পোশাক শিল্পে চলমান অসন্তোষের অবসান ঘটিয়ে শিল্পাঞ্চলে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কারখানা খুলে দেয়ায় শ্রমিকরা খুশি। তারা শান্তিপূর্ণভাবে কারখানায় কাজ করছেন। অন্যদিকে শ্রমিকদের আন্দোলনে উসকে দেয়ার অভিযোগে কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষ ভিডিও ফুটেজ দেখে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের ছাঁটাই করেছে। সকালে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকরা কাজে এলে তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বিশৃঙ্খলা এড়াতে ঢাকা জেলা পুলিশ মাইকিং করে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকরা যেন কারখানায় প্রবেশ করে কিংবা আশপাশে অবস্থান নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও কারখানা কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। শিল্প পুলিশ-১-এর পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, খুলে দেয়ার পরে শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে উৎপাদন শুরু করে। এখন পর্যন্ত কোনো কারখানায় অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র্যাব-পুলিশের টহলের পাশাপাশি শিল্প এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রসঙ্গত, মজুরি বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি না করাসহ বেশ কিছু দাবিতে গত ১১ই ডিসেম্বর থেকে সৃষ্ট শ্রমিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে আশুলিয়া পোশাকশিল্প এলাকা। এরপর আশুলিয়ায় তিনজন মন্ত্রী এসে প্রশাসনসহ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। সেই চেষ্টা বিফল হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে গত মঙ্গলবার ৫৫টি কারখানা পরে, আরো ৪টি, মোট ৫৯টি কারখানা বন্ধ করে দেয় বিজিএমইএ। চলমান শ্রমিক আন্দোলনে উসকানি দেয়ার অভিযোগে উইন্ডি গ্রুপের ১২১ জন এবং ফাউন্টেইন কারখানার ১৩৫ জন শ্রমিক বরখাস্তের পর রোববার হা-মীম গ্রুপের ৯৬ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্তের পাশাপাশি শ্রমিক নেতা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মী ও পোশাক শ্রমিকসহ দুই সহস্রাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গার্মেন্টস খুলে দেয়াকে মন্ত্রিসভা স্বাগত জানিয়েছে ওদিকে শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে আশুলিয়ায় বন্ধ করে দেয়া পোশাক কারখানা (গার্মেন্টস) খুলে দেয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয় বলে সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আশুলিয়ায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো আবার খুলে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রিসভা এটাকে স্বাগত জানিয়েছে, এটা ভালো উদ্যোগ যে, এগুলো খুলে দেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ থাকলে আমাদের দেশের শত শত কোটি টাকা ক্ষতি। ক্ষতি রোধ করার জন্য- শ্রমিকদের সমস্যা, মালিকদেরও সমস্যা, এটাকে নিরসন করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে আজকে থেকেই অলমোস্ট সবগুলো প্রতিষ্ঠানই খুলে দেয়া হয়েছে। এখানে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শ্রমিক মোটামুটিভাবে যোগদান করেছে।’ শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে মন্ত্রিসভায় কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটার তো বিধান আছে। সময়ে সময়ে এটাকে আপডেট করার সুযোগ আছে। যে সিস্টেমটা আইনে দেয়া আছে, সেটা প্রিম্যাচিউর, এখনো স্টেজটা (৫ বছর পরপর ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ) আসে নাই।’ এদিকে সাভারের আশুলিয়ার পোশাক কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক সর্বনিম্ন বেতন ১৫ হাজার টাকা করার দাবিতে কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছিল। গত ১১ই ডিসেম্বর আশুলিয়ার বেরন এলাকায় উইন্ডি গ্রুপের কারখানায় শ্রমিকদের কর্মবিরতির মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়। বিধিসম্মতভাবে কোনো ধরনের দাবি উপস্থাপন না করেই শ্রমিকরা আন্দোলন করছে জানিয়ে সরকার শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য কয়েক দফা আহ্বান জানায়। কিন্তু শ্রমিকরা কাজে ফিরে যায়নি। এরপর গত ২০শে ডিসেম্বর ৫৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। শেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর অনুরোধে গত রোববার বিজিএমইএ মালিকদের বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেয়ার অনুরোধ করে। গতকাল সোমবার কারখানাগুলো খুলে দেয়া হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.