‘ইত্যাদি’ দায়িত্বশীল হওয়ার এক দারুণ পথ। সমাজকে সচেতন করে তোলে এ অনুষ্ঠানটি। সব মিলিয়ে চমৎকার একটি অনুষ্ঠান। কথাগুলো বাংলাদেশস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাটের। শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার হওয়া দিনাজপুরে ধারণকৃত ‘ইত্যাদি’তে উপস্থিত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। যথার্থই বলেছেন তিনি। নন্দিত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেতের হাত ধরে গত ২৮ বছর ধরে বিটিভিতে প্রচার হয়ে আসা জনপ্রিয় এ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটি মানুষকে দায়িত্বশীল হওয়ার পথই দেখিয়ে আসছে। আর তার অনেক বড় বড় সব দৃষ্টান্ত এরই মধ্যে দেখা গেছে। সে ধারাবাহিকতায় ইত্যাদির সর্বশেষ প্রচার হওয়া পর্বটিতেও তেমনই তিনটি উদাহরণ মিলেছে। বিশেষত ঢাকা জেলার ধামরাইয়ের শিক্ষাতাপস নরেশ চন্দ্র অধিকারীর ওপর করা প্রতিবেদনটি ছিল হৃদয়স্পর্শী। একজন শিক্ষক যিনি যাদবপুর বিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরে সেখানেই শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত হন। এখন অবসর হওয়ার পরও সম্পূর্ণ বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার পর কোনো প্রকার পারিশ্রমিক ছাড়া আলাদা করে কোচিংও করান তিনি। এর পাশাপাশি পরীক্ষার সময় নিয়মিত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজ নেয়ার কাজও করছেন এ শিক্ষক। ইত্যাদিতে উপস্থিত হয়ে নরেশ চন্দ্র অধিকারী বলেন, সন্তানদের পথচলায় অভিভাবকই আসল। আর বাড়িতে অভিভাবক তাদের বাবা-মা। স্কুলে অভিভাবক শিক্ষক। ইত্যাদির এবারের পর্বে আরেকটি দৃষ্টান্ত ছিল গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম তিতাসের ওপর সচেতনতামূলক প্রতিবেদনটি। এছাড়া কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের জান্নাতুল বকেয়া মামুণির উপর উদ্বুদ্ধকরণ প্রতিবেদন দর্শকের হৃদয়ে দোলা দেয়। যে মেয়েটি নেতৃত্বদান, নিয়মানুবর্তিতা, দারিদ্র্যবান্ধব কর্মসূচিসহ নানা কাজে হয়ে উঠেছে আদর্শস্থানীয়া। টানা পাঁচ বছরে মামুণি একদিনও স্কুলে অনুপস্থিত ছিল না। শুধু তাই নয়, এলাকার মানুষের সেবায় প্রত্যয়ী এ মেয়েটি স্টুডেন্ট কেবিনেটের সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছে। যে পদে থেকে মামুণি স্কুলের সবার কাছ থেকে মাথাপিছু ২ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে ২০ জন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার খরচ জোগান দিয়ে যাচ্ছে। ইত্যাদির এবারের পর্বে শুধু এই তিনটি প্রতিবেদনই দর্শককে আন্দোলিত করেনি। একই সঙ্গে অন্ধ হয়েও কিভাবে অন্যের মুখাপেক্ষী হতে না হয় তারই দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন হানিফ সংকেত। দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার জন্মান্ধ ভ্যানচালক মহাসিন আলী ও তার পরিবারের ওপর ওই প্রতিবেদনটি দেখে অনেকেরই চোখে জল এসে গিয়েছিল। এবারের ইত্যাদিতে অন্যতম আরেকটি আকর্ষণ ছিল ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক ফ্যানপেজ নিয়ে আকর্ষণীয় একটি পর্ব। যেখানে দেখানো হয় একটি মনোমুগ্ধকর ভিডিও। এরপরই রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাটের সাক্ষাৎকারটি বেশ উপভোগ্য ছিল। ইত্যাদির নিয়মিত পর্ব বিদেশি প্রতিবেদনের মধ্যে এবার ছিল তুরস্কের বসফরাস সেতুর ওপর একটি প্রতিবেদন। যার ইতিহাস তুলে ধরে হানিফ সংকেত অনেক দর্শকের কৌতূহলী মনে বেশ প্রশান্তির জোগান দিয়েছেন। এবারের ইত্যাদিতে মূল গান ছিল একটি। এটি লিখেছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সুর করেছেন আলী আকবর রুপু, গেয়েছেন শিল্পী এন্ড্রু কিশোর। এছাড়াও ইত্যাদিতে প্রচারিত একটি জনপ্রিয় দেশের গানের সঙ্গে দিনাজপুরের অর্ধশতাধিক স্থানীয় নৃত্যশিল্পীর নৃত্য পরিবেশন ছিল খুব আকর্ষণীয়। দিনাজপুর ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে হাজার হাজার দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে একটি নাট্যাংশে তারা অভিনয় করেন। যা ছিল বেশ উপভোগ্য। দীর্ঘদিন পর শিল্পী আরিফুল হককে দেখা গেছে এবারের ‘ইত্যাদি’তে। অসুস্থ থাকার পর খ্যাতিমান অভিনেতা মাসুদ আলী খানও আবার ইত্যাদির মাধ্যমে সরব হয়েছেন। এছাড়া নিয়মিত পর্ব হিসেবে যথারীতি মামা-ভাগ্নে, নানী-নাতি ও চিঠিপত্র বিভাগ দর্শকের আকর্ষণের অন্যতম জায়গা ছিল। সব মিলিয়ে বরাবরের মতো নান্দনিক একটি আয়োজন উপহার দেয়ার জন্য ইত্যাদির জনক হানিফ সংকেতকে সাধুবাদ। সেসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে এমন চমৎকার একটি অনুষ্ঠান স্পন্সর করে যাওয়ার জন্য অভিনন্দন কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডকে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.