সূর্য ভিলা। তিনতলা বাড়ি। সুনসান নীরবতা। নিচতলায় তালা মারা। দোতলা ও তিনতলায় ভাড়াটিয়ারা থাকেন। তারাও নীরব। অপরিচিত লোকের সঙ্গে কথা বলেন না। শুধু তাই নয়, ওই বাড়ির আশপাশের বাসিন্দাদেরও ওই বাড়িটি ঘিরে কৌতূহল। রয়েছে আতঙ্কও। গত বছরের ২৩শে ডিসেম্বর গভীর রাতে দক্ষিণখানের পূর্ব আশকোনার বাছির জামে মসজিদ রোডের ‘সূর্য ভিলা’ নামে এই বাড়িতে অভিযান চালায় ডিএমপি’র কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একটি দল। অপারেশন ‘রিপল ২৪’ নামে ওই শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে সেখানে সাকিরা এবং আফিফ কাদেরী নামে দুই জঙ্গি নিহত হয়। পরে জেবুন্নাহার শিলা ও তৃষামণি নামে দুই নারী তাদের দুই সন্তানসহ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ঘটনার পর টানা এক সপ্তাহ ধরে পুলিশ ওই বাড়িতে পাহারা দিলেও এখন আর তা নেই। পুলিশ বাড়িটির নিচতলাটি সিলগালা করে দিয়েছে। এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার ওসি তপন কুমার সাহা জানান, ঘটনার পর থেকে ওই বাসাটি পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ পালাক্রমে ডিউটি করতো। কিন্তু এখন আর ডিউটি করে না। বাড়ির নিচতলা সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। তবে সবসময় ওই বাড়িটি গোয়েন্দা পুলিশ নজরদারিতে রাখে। বাসার মালিককে বলে দেয়া হয়েছে পুলিশের অনুমতি ছাড়া ওই বাড়ির নিচতলা যেন ভাড়া দেয়া না হয়। গতকাল সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মূলগেটে তালা। দুই বয়স্ক নারীকে ওই বাড়ির সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা গেছে। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা পাশের বাড়ির গৃহকর্মী বলে জানান। গলির মধ্যে ওই বাড়ি হওয়ার কারণে ওই রাস্তা দিয়ে তেমন কোনো গাড়ি চলাচল করে না। পথচারীরা গলি দিয়ে প্রবেশ করলে দ্রুত হাঁটেন। বাড়ির দোতলা এবং তিনতলার লোকজন প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হন না। ভেতরে কোনো সাড়া শব্দ নেই। নিস্তব্ধ পুরো ভবন। দুপুর বেলা বাড়ি থেকে বের হন এক নারী। তার কাছে পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে রুবিনা নামে পরিচয় দেন। থাকেন দোতলায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাড়ির এক যুবক জানান, বাড়িটি ঘিরে এলাকার লোকজন আতঙ্ক রয়েছেন। তারা নিজেরাও বাড়িটি দ্রুত ছেড়ে দেবেন। ঘটনার পর কিছুদিন পুলিশ থাকতো। এখন আর থাকে না। তবে পুলিশের লোকজন একদিন-দু’দিন পরপর এসে খোঁজ-খবর নিয়ে যায়। সূর্য ভিলার পাশের ৬০ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন জানান, ঘটনার দিন রাতের বেলায় টেলিভিশন দেখছিলাম। হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। এরপর বাইরে বের হয়ে দেখি অনেক পুলিশ। পরে জানতে পারি সেখানে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছে। বাড়ির লোকজন ওই ঘটনার পর নিঃশব্দ হয়ে গেছে। তারা প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হন না। সূর্য ভিলার পাশের বাড়ির গৃহকর্মী আফরিন বেগম জানান, লোকজন জঙ্গি বাড়িটি দেখতে আসে। উৎসুক লোকজন বাড়ির সামনে এমনিতেই অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। আগে পুলিশ মোতায়েন থাকায় কেউ ভয়ে বাড়ির সামনে যেতো না। পুলিশ চলে যাওয়ার পর অনেকেই বাড়ির দিকে চেয়ে থাকেন। ডিএমপি’র কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একজন এডিসি জানান, জঙ্গি মূসাকে ধরার জন্য ওই বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল। জঙ্গি মূসা হলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় অস্ত্র সরবরাহ করেছিল ওই জঙ্গি। যেন ওই বাড়িটিতে আতঙ্ক না থাকে এজন্য সেখান থেকে পুলিশ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে সাদা পোশাকে সেখানে পুলিশের লোকজন পাহারা দিচ্ছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.