১৪ই জানুয়ারি আজ। বাংলা নাটকের গৌরব নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের নবম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৮ সালের এই দিনে তিনি প্রয়াত হন। কিন্তু রেখে যান তার অবিনশ্বর মহাকাব্যিক সব সৃষ্টিসম্ভার। তার নাটকই বাংলা থিয়েটারের বহুকালের অপেক্ষার অবসান ঘটায়। বাংলার মাটিতে, বাংলা ভাষাতেই তৈরি হওয়া তার নাটকগুলো স্থান করে নেয় নাট্যপ্রেমীদের হৃদয়ে। ১৯৪৯ সালের ১৮ই আগস্ট ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সেনেরখিলে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্র-উত্তরকালের বাংলা নাটকের অন্যতম পুরুষ সেলিম আল দীন। পিতা মরহুম মফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং মাতা মরহুমা ফিরোজা খাতুনের সন্তানদের মধ্যে সেলিম আল দীন ছিলেন তৃতীয়। তার সৃষ্টিশীলতার আলোকচ্ছটা ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি নেয়ার পর কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন অধ্যাপনাকে। ১৯৭৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উদ্যোগেই খোলা হয় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এ বিভাগকে তিনি অধিষ্ঠিত করেন মর্যাদার আসনে। অধ্যাপনার পাশাপাশি এ দেশের নাট্যশিল্পকে বিশ্ব নাট্যধারার মানে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৮১-৮২ সালে দেশব্যাপী গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। এর আগেই অবশ্য তার আজীবনের শিল্পসঙ্গী নাট্যনির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। এখানেই বাংলা নাটক নিয়ে বিশাল এক পরিবর্তন। পাশ্চাত্য শিল্পের সব বিভাজনকে বাঙালির হাজার বছরের নন্দনতত্ত্বের আলোকে অস্বীকার করে এক নতুন শিল্পরীতি প্রবর্তন করেন তিনি। যার নাম দেন ‘দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পতত্ত্ব’। দ্বৈতাদ্বৈতবাদী রীতিতে লেখা তার নাটকগুলোতে নিচুতলার মানুষের সামাজিক প্রেক্ষাপটে তাদের বাস্তবতাই উঠে আসে। জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন, মুনতাসির ফ্যান্টাসি, শকুন্তলা, কিত্তনখোলা, কেরামত মঙ্গল, হাতহদাই, যৈবতী কন্যার মন, চাকা, হরগজ, বনপাংশুল, প্রাচ্য, নিমজ্জন, ধাবমান, স্বর্ণবোয়াল ইত্যাদি মঞ্চসফল ও পাঠকনন্দিত নাটক রচনার মধ্য দিয়ে ক্রমাগত তিনি নিজেকে অতিক্রম করে যেতে থাকেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রয়াত এ নাট্যাচার্যকে নিয়ে থাকছে বিশেষ আয়োজন। দিনটিকে স্মরণ করে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ও ঢাকা থিয়েটার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল অনুষ্ঠান সাজিয়েছে। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ও ঢাকা থিয়েটারের চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু হবে আজ। সকাল ১০টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলিম আল দীনের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে। বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টায় ‘সেলিম আল দীন স্মরণ উৎসব ২০১৭’ উদ্বোধন করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে বগুড়া থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে নাটক ‘বাসন’। ১৬ই জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ভোলা থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে নাটক ‘গ্রন্থিকগণ কহে’। ১৭ই জানুয়ারি পরীক্ষণ থিয়েটার হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফরিদপুরের সঙ থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে নাটক ‘শকুন্তলা’। সেলিম আল দীন রচিত নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রসেনজিৎ পাল। চার দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান আয়োজন করছে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ও ঢাকা থিয়েটার। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের আয়োজনেও থাকছে সেলিম আল দীনের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মরণ যাত্রা, বাড়ির খেলা (লাঠি খেলা) মুক্ত আলোচনা, ‘অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী’, নাটক মঞ্চায়নসহ নানা অনুষ্ঠান। পাশাপাশি স্বপ্নদল নাট্য সংগঠন নিজেদের দুটি প্রযোজনা নিয়ে আজ ও আগামীকাল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় স্বপ্নদল আয়োজন করেছে ‘সেলিম আল দীন স্মরণোৎসব-২০১৭’। উৎসবটি উৎসর্গ করা হচ্ছে নাট্যাচার্যের সহধর্মিণী সদ্যপ্রয়াত বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা পারুলের স্মৃতির প্রতি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.