পারফিউমের ঘ্রাণ। চারদিকে রঙিন আলোকচ্ছটা। ভেতর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, কোনো ধরনের ময়লা নেই। মাথার উপরে ঘুরছে সিলিং ফ্যান। রাজধানীর নবনির্মিত পাবলিক টয়লেটের এমন চিত্র। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ঢাকা শহরে। ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের বসবাসের এ শহরে প্রতিদিন প্রায় ৫৫ লাখ মানুষের পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের চাহিদা রয়েছে। সূত্র মতে ঢাকায় পাবলিক টয়লেটের দৈনিক চাহিদার মধ্যে ভাসমান জনসংখ্যা ৫০ হাজার, রিকশাচালক ১০ লাখ, অন্যান্য জীবিকার মানুষ ১০ লাখ, পথচারী (নিয়মিত) ২০ লাখ, পথচারী (বহিরাগত) ১০ লাখ। এই বিপুল চাহিদার প্রেক্ষিতে ভাসমান ও পথচারীদের ব্যবহারের জন্য রাজধানীতে বিভিন্ন সময়ে টয়লেটের ব্যবস্থা করা হলেও মান ভালো না হওয়ায় আকৃষ্ট করা যায়নি সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে। আবার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্থানের অভাবেও টয়লেটগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে দুরবস্থা। সমপ্রতি পাবলিক টয়লেটের এই ‘চরিত্র’ পরিবর্তন হয়েছে। নগরীর ফার্মগেটের ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন পার্কের পাশে, মহাখালীর ওয়াসা পাম্প সংলগ্ন, শ্যামলীর শিশুপার্ক সংলগ্ন, তেজগাঁও, সায়েদাবাদ, পল্টন, ওসমানী উদ্যান, বাহাদুর শাহ পার্ক, মিয়াজানগলিসহ আরো কিছু এলাকায় আধুনিক পাবলিক টয়লেট সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা এবং ওয়াটার এইডের উদ্যোগে দুই শতাধিক টয়লেট স্থাপিত হচ্ছে নগরীতে। অধিকাংশ টয়লেটের কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো এবছরই শেষ হবে। স্থান, মান ও সব শ্রেণির মানুষের ব্যবহারের কথা চিন্তা করেই এসব টয়লেটের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ৫০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করে এসব টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে। সরজমিন এসব টয়লেট ঘুরে দেখা গেছে, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ব্যবস্থা, রয়েছে প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো, নারীবান্ধব পরিবেশ ও নারী কেয়ারটেকার, নিরাপদ খাবার পানি, সাবান ও গোসলের ব্যবস্থা। পৃথক লকার ও হাত ধোয়ার জন্য পৃথক স্থানসহ লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। টয়লেটের বাইরের চত্বরে সিসিটিভি ক্যামেরাও রয়েছে। পাঁচ টাকার রশিদ গ্রহণ করে সেবা মিলবে এসব টয়লেটে। গোসলের সু-ব্যবস্থা রয়েছে, এই ক্ষেত্রে খরচ করতে হবে ১০ টাকা। ওয়ান টাইম গ্লাস ১ টাকা দিয়ে সংগ্রহ করলেই বিশুদ্ধ খাবার পানি পাওয়া যাবে। একজন সেবা গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। নামাজ ও ওজুর ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। তবে আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষজন বিনামূল্যে এখান থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে উন্নত মানের কমোড। এক সঙ্গে মোট ১০ জন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন এখানে। সেবার মান অক্ষুণ্ন রাখার জন্য ৮ জন আবার ১০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী শিফটিং ওয়াইজ দায়িত্ব পালন করছেন। গত ৯ই জানুয়ারি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন উদ্বোধন করেন পান্থকুঞ্জ পার্ক সংলগ্ন একটি পাবলিক টয়লেট। পরিচ্ছন্নকর্মী সুমন মোল্লার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টয়লেটে বিশেষ করে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাপটা বেশি থাকে। সন্ধ্যায়ও চাপ থাকে। আধুনিক ফিটিংস এবং উন্নত সুবিধার কারণে টয়লেটে সেবা গ্রহণকারী জাইকার এক কর্মকর্তা ব্রজ কিশোর ত্রিপুরা অনেক খুশি। ইন্দিরা রোডের পাবলিক টয়লেট ব্যবহারকারী মো. রুবেল বলেন- বাংলাদেশে এর আগে এরকম কোনো পাবলিক টয়লেট দেখিনি। পাবলিক টয়লেটের বিষয়ে নগরবাসীর নেতিবাচক অভিজ্ঞতা দূর করা ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। উন্নতমানের পাবলিক টয়লেট স্থাপন তাদের মধ্যে একটি। ২০১৭ সালের মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনে ২০০টি অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট স্থাপিত হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.