ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল সবকিছু। ৪ উইকেটে ২৫২ থেকে ৭ উইকেটে ২৫৬! বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের সারা দিনের সংগ্রাম পিঠ ঠেকিয়ে ফেলল দেয়ালে। শেষ ভালো যার সব ভালো তার। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে পরপর দ্বিতীয় দিনের মতো হাসিমুখে হ্যাগলি ওভাল ছাড়ল বাংলাদেশ। কাল শেষবেলায় ৯ বলের ব্যবধানে সাকিব আল হাসানের ৩ উইকেট মনে করিয়ে দিল গত বছরের অক্টোবরে ইংল্যান্ডকে হারানো টেস্টের কথা। তিন দিনেই জিতে যাওয়া টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ সেশনে বাংলাদেশের বোলাররা তুলে নিয়েছিলেন প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট। কাল অবশ্য প্রথম দুই সেশনে ৪ উইকেট পড়ে যায় কিউইদের। শেষ সেশনের জন্য উইকেট বাকি ছিল ছয়টি। সাকিব যেভাবে শুরু করেছিলেন, বৃষ্টিতে দিনের খেলা ১৯ ওভার আগে শেষ না হলে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস এক দিনেই শেষ হতে পারত। দিন শেষের স্কোর ৭ উইকেটে ২৬০ না হয়ে আরও খারাপ হতে পারত। বৃষ্টিতে গতকালের পরিত্যক্ত সময়টুকু পুষিয়ে নিতে আজ স্থানীয় সময় বেলা ১১টার পরিবর্তে খেলা শুরু হবে সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে। অবশ্য তখন যদি বৃষ্টি না হয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এই টেস্টের প্রতিটি দিনই বৃষ্টিবিঘ্নিত হওয়ার কথা। কাল শেষবেলায় সাকিবের ঘূর্ণি বাংলাদেশের সারা দিনের বোলিং উৎসবেরই ‘প্রোমো’ হিসেবে দেখতে পারেন। প্রোমো হতে পারে রুবেল হোসেনের ওই বলটাও। মাথা নামানোরও সময় পাননি টম ল্যাথাম। রুবেলের বাউন্সার আঘাত করল হেলমেটে। কিছু সময়ের জন্য যেন সংবিৎ হারালেন নিউজিল্যান্ড ওপেনার। একটু ধাতস্থ হয়ে আবার ব্যাটিং করলেও বদলে নিতে হয়েছে নষ্ট হয়ে যাওয়া হেলমেটটি। ল্যাথামকে মাঠ ছাড়া করতে পারেনি রুবেলের বাউন্সার। তবু হ্যাগলি ওভালে টেস্টের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের বোলারদের আক্রমণাত্মক মানসিকতার প্রতীক হয়ে থাকবে সেটিও। বাউন্সার আর মুভমেন্টের সামনে কিউই ব্যাটসম্যানদের বিব্রত হতে হয়েছে অনুক্ষণ। দুর্দান্ত সব বাউন্সার ছুড়েছেন আগের দিন ব্যাটিংয়ের সময় ডান হাতের কনুইয়ে ব্যথা পাওয়া রুবেল। বলের গতি তো কয়েকবারই ১৪০ কিমি পার করেছেন। কামরুল ইসলামের লাইন-লেংথ ছিল নিখুঁত। ব্যাটসম্যানদের শরীর তাক করা বাউন্সার গেছে তাঁর হাত থেকেও। এমনকি ক্রাইস্টচার্চেই দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা তাসকিন আহমেদেরও বলের ওপর ছিল ভালো নিয়ন্ত্রণ।
তাসকিনের দুর্ভাগ্য, দিন শেষে তাঁকে মাত্র একটি উইকেট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। ফিল্ডারদের হাত থেকে ক্যাচ পড়েছে, আম্পায়ার নাইজেল লংয়ের ভুল সিদ্ধান্তও কেড়ে নিয়েছে একটি উইকেট। ব্যক্তিগত ৪৫ রানে তাসকিনের বলে হেনরি নিকোলসের বিপক্ষে ক্যাচের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে ডিআরএস নিতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে টেলিভিশন রিপ্লেতে পরিষ্কার হয়েছে, উইকেটকিপার নুরুল হাসানের হাতে বলটা নিকোলসের ব্যাট ছুঁয়েই গিয়েছিল।
তাসকিনসহ অন্য বোলারদের জন্য দিনটা আরও ভালো হতো ফিল্ডারদের হাত থেকে ক্যাচগুলো না পড়লে। অর্ধেক সুযোগগুলো বাদ দিলেও সহজ ক্যাচই পড়েছে চারটি। প্রথম দুর্ভাগ্য মেহেদী হাসান মিরাজের। ব্যক্তিগত ২ রানের সময় তাঁর বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান ওপেনার জিৎ রাভাল। ক্যাচটা নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। নিজের ১২ রানে রাভালকে আবারও জীবন ফিরিয়ে দেয় দ্বিতীয় স্লিপে সাব্বির রহমানের পিচ্ছিল হাত। বোলার এবার তাসকিন। রাভালের মতো দুবার বেঁচেছেন ৭৭ রান করা রস টেলরও। ব্যক্তিগত ১ রানে কামরুল ইসলামের বলে স্কয়ার লেগে ক্যাচ নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। মিরাজের বলে টেলরের ক্যাচ পড়েছে তাঁর ৭৫ রানের সময়ও। মিড উইকেটের ফিল্ডার কামরুল বলের নিচেই আসতে পারেননি ঠিকমতো।
দুবার বেঁচে গিয়েও অবশ্য রাভালকে ১৬ রানে থামতে হয়েছে। রাভালসহ লাঞ্চের আগেই ২ উইকেট যায় নিউজিল্যান্ডের। দুটিই কামরুলের এক ওভারে। ইনিংসের ১৫তম ওভারে প্রথম স্পেল করতে এসে প্রথম ওভারেই ফেরান রাভালকে। এক বল পর কট বিহাইন্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। দারুণ এক আউট সুইং ছিল কামরুলের। বল ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেটকিপার নুরুল হাসানের গ্লাভসে।
লাঞ্চের আগে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭০ রান করা নিউজিল্যান্ড চা-বিরতির আগে হারায় আরও ২ উইকেট। আর শেষ সেশনে মাত্র ৯ বলের ব্যবধানে পড়েছে ৩ উইকেট। এই সময়ে হঠাৎই তাদের লেজটা বের করে আনার কৃতিত্ব সাকিবের। ৬৯তম ওভারে দুই বলের ব্যবধানে ফিরিয়েছেন ওয়াটলিং ও ডি গ্র্যান্ডহোমকে। নিজের আগের ওভারেই নেন স্যান্টনারের উইকেটটিও।
সকালে রুবেল-কামরুলরা মিলে কিউই ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, নিউজিল্যান্ডের পা হড়কানোর শুরু তখন থেকেই। দিন শেষে প্রথম সেশনের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করেছেন ওপেনার টস ল্যাথাম, ‘গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা দ্রুত দুটি উইকেট হারিয়ে ফেলি। লাঞ্চের আগে তো তারা আমাদের কিছুই করতে দেয়নি। স্ট্রাইক রোটেট করতেও কষ্ট হচ্ছিল আমাদের।’
সারা দিনের মাঝের সেশনটাতেই যা একটু স্বচ্ছন্দ ছিলেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। ১২২ রান এসেছে ২ উইকেটে। এর বাইরে নিউজিল্যান্ডের বড় জুটি বলতে তৃতীয় উইকেটে ল্যাথাম-টেলরের ১০৬ আর পঞ্চম উইকেটে স্যান্টনার-নিকলসের ৭৫ রান। বাংলাদেশের বোলিংয়ের সামনে এমন দিন কাটিয়ে খুশি থাকার কথা নয় নিউজিল্যান্ডের। তবে বোলারদের টেস্টে এর বেশি কিছু বোধ হয় করারও ছিল না।
দ্বিতীয় দিন শেষে
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৮৯
নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৬০/৭
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.