ব্যাংক খাতে দুর্নীতি-লুটপাটের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, সব ব্যাংকের একক নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু বেসরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে তিনি বলেন, একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেই প্রযুক্তি ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করা যাবে না, প্রযুক্তি লাগবে। এটা ছাড়া চলা যাবে না। আবার ভয়ও পেলে চলবে না।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার রিজার্ভ চুরির সময় গভর্নর ছিলেন আতিউর রহমান। পরে পদত্যাগ করেন তিনি। এর প্রায় এক বছর পর রিজার্ভ নিয়ে জনসমাগমে এটিই তার প্রথম বক্তব্য।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত অধ্যাপক শফিকুর রহমান স্মারক বক্তৃতায় প্রধান বক্তা হিসেবে আতিউর রহমান এসব কথা বলেন। প্রতিষ্ঠানটির মিলনায়তনে বিকালে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বক্তৃতার মূল বিষয় ছিল ‘কাউকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাব না : আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পথে যাত্রা।’ এ বিষয়ে আতিউর রহমান বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে গৃহীত উদ্যোগগুলো ইতিমধ্যেই সুফল দিতে শুরু করেছে। অর্থনীতি ও উন্নয়নের সব সূচকেই বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। তবে অর্জন অনেক হলেও বাংলাদেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে বিনিয়োগের হার জিডিপির ৩৪ শতাংশ করতে হবে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সোসাইটির অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, সাব্বির আহমেদ প্রমুখ।
ব্যাংক খাতে লুটপাট, রিজার্ভ চুরি, রেমিটেন্সে নেতিবাচক ধারা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান অবস্থাসহ সার্বিক বিষয়ে বহু প্রশ্ন করা হয় আতিউর রহমানের কাছে। এ সময় অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও কিছু প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে আতিউর রহমান বলেন, সব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে না থাকলেও গত কয়েক বছরে গুরুতর অনিয়মের কারণে তিন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। কয়েকজন এমডির চাকরি চলে গেছে। অনেক ব্যাংকার জেলে গেছেন। জেলে গিয়ে কেউ মারাও গেছেন।
তিনি রূপক অর্থে বলেন, কার্পেটের নিচের কাদা সরাতে গিয়ে অনেক খবর বের হয়েছে। তবুও সব কাদা শেষ পর্যন্ত মুছতে পারিনি। সাবেক এ গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো থাকা উচিত। বেতন কাঠামো নিয়ে অনেক চেষ্টা করে কাছাকাছি গেলেও শেষ পর্যন্ত তা সারতে পারিনি।
রেমিটেন্স প্রসঙ্গে আতিউর রহমান বলেন, রেমিটেন্স কমার যৌক্তিক কারণ দেখছি না। তবে কেউ কেউ বিদেশে বিভিন্ন উদ্যোক্তার কাজ করছেন। সে কারণে হয়তো রেমিটেন্স কমে আসছে। তার মতে, রেমিটেন্স হ্রাস রোধে বিদেশে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করা দরকার। আয়করের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর যে দেয় তার ওপর বোঝা চাপাচ্ছে বার বার। আর যে দেয় না, সে সব সময় আওতার বাইরে রয়েছে।
তিনি বলেন, করের আওতা আরও বাড়াতে হবে। ভিন্ন প্রশ্নে আতিউর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মান-মর্যাদা উন্নত করতে হবে। পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে হবে। বীমা খাতকে শক্ত করতে হবে। সর্বোপরি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.